ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নতুন বল, ক্যারিবিয়ান সুর ও আয়েশী রুবেল

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪১, ২০ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ২১:৫৪, ২১ অক্টোবর ২০২০
নতুন বল, ক্যারিবিয়ান সুর ও আয়েশী রুবেল

বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে আয়েশ করে শুয়ে খায়েশ মিটিয়ে ঘুমাতে কার না ভালো লাগে? ছুটির দিন হলে তো আর কোনও কথাই নেই। 

পেসার রুবেল হোসেনের মঙ্গলবার কোনও তাড়া ছিল না। নাশতা সেরে পাঁচ তারকা হোটেলের বিশাল পর্দা সরিয়ে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলেন বৃষ্টিভেজা সকাল। শরীর আবার এলিয়ে দিলেন নরম বিছানায়। ব্যস আবার ঘুম! দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে যায়, রুবেলের ঘুম ভাঙে না। এত শান্তির ঘুম? 

কেন-ই বা হবে না! বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে চার ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে সবাইকে পেছনে রেখেছেন ডানহাতি দ্রুতগতির বোলার। তার পারফরম্যান্সে চার ম্যাচের দুটিতেই জিতেছে মাহমুদউল্লাহ একাদশ। ঘুমের ঘোরে আড়মোরা ভাঙতে ভাঙতে বললেন, ‘নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। খুব ভালো বোলিং হচ্ছে। চেষ্টা করছি, ভালো করার জন্য। দলকে জেতাতে পারছি, এটাই সবচেয়ে বড় তৃপ্তি।’ 

সোমবার বল হাতে ৪ উইকেট পেয়েছেন রুবেল। উইকেট উদযাপনে ২২ গজে ডানহাত উপরে তুলে দুলিয়েছেন কোমর। একেবারেই নতুন উদযাপন। আগে থেকে এমন উদযাপনের পরিকল্পনা না থাকলেও রুবেলের নাকি পছন্দ ক্যারিবিয়ান সুর। সেই সুর মনে করতে-ই উদযাপনে নতুনত্ব, ‘উদযাপন একটু ভিন্ন করেছি। কোনও পরিকল্পনা ছিল না। ক্যারিবিয়ান টাইপের উদযাপন করেছি। ওদের গান-নাচ ভালো লাগে।’ 

বল হাতে ভালো সময় কাটানো রুবেল পেয়েছেন চেনা ছন্দ। নতুন বল হাতে আসায় আত্মবিশ্বাস বেড়েছে দ্বিগুণ। তাতেই আসছে সাফল্যধারা, ‘নতুন বলে খুব ভালো বোলিং করছি। নতুন বলটা নিয়ে আমি গিবসনের (বোলিং কোচ) সঙ্গে কাজ করছি। সুইংটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কীভাবে আরও ভালো করা যায়, সেই চেষ্টাই আমি করছি। টানা অনুশীলনের কারণেই নতুন বলে বোলিংটা আগের চেয়ে বেশি ভালো হচ্ছে।’

লাল বলে ধারাবহিকভাবে সুইং নিয়ে কাজ করায় সাদা বলে সুফল পাচ্ছেন মনে করেন রুবেল, ‘আমরা লাল বলে টেস্টের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। ওই সময় লাইন-লেন্থ নিয়েই বেশি কাজ করেছি। সুইং নিয়ে খেটেছি। লাল বলে সাধারণত সুইং কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে থাকে। সেটাতেই উপকৃত হচ্ছি।’  

পাশাপাশি হালকা পরিবর্তনও এসেছে, ‘আমি সাধারণত গ্রিপটা একটু শক্ত করে ধরি। এখন গ্রিপটা ওতটা শক্ত করে ধরি না। আলগা করে ধরেই ডেলিভারি করি। এতে আমার সুইংটা ভালো হচ্ছে। নতুন বলে তো সুইং সবারই হয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন। আমার মনে হচ্ছে নতুন বলে আমার সুইংয়ের নিয়ন্ত্রণ ভালো হয়েছে। এটা এখন ধরে রাখতে চাই।’ 

রুবেলের সঙ্গে নতুন বলে ভালো করছেন মোস্তাফিজ, তাসকিন, আল-আমিনরাও। ধারাবাহিক উইকেট পাচ্ছেন তারাও। পেসারদের এ অলিখিত প্রতিযোগিতা বেশ উপভোগ করছেন রুবেল। বড় পরিসরে এ প্রতিযোগিতা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি, ‘সব দলের পেসাররাই দ্রুত নতুন বলে উইকেট তুলে নিয়েছেন। আমার মনে হয় পেস বোলারদের প্রতিযোগিতা থাকাটা খুব ভালো, এটা বাংলাদেশ দলের জন্যও ভালো। সবাই এখানে ভালো খেলতে চায়। যখন প্রতিযোগিতা বেশি থাকবে, তখনো ফোকাস আরও ভালো হবে। এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য খুব ভালো। বাংলাদেশে এখন অনেক পেসার আছে যারা ১৪০ এর উপর  কিংবা কাছাকাছি বোলিং করে। এই জিনিসগুলো বাংলাদেশের জন্য ভালো।’ 

উন্নতির শেষ নেই। ভালো বোলিং হলেও স্লগ ওভার নিয়ে আরও কাজ করতে মুখিয়ে এ পেসার, ‘বাংলাদেশের পেস বোলার সবেচেয়ে বেশি ভোগে স্লগ ওভারে গিয়ে। এটা নিয়ে গিবসনের সঙ্গে অবশ্যই কথা বলবো আমরা। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তার সঙ্গে স্লগ ওভার নিয়ে কাজ করবো। কীভাবে আমি স্লগ ওভারে উন্নতি করতে পারি ও বৈচিত্র্য আনতে পারি তা নিয়ে কাজ করতে হবে।’ 

বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের ফাইনাল খেলার সুযোগ হবে কি না জানা নেই রুবেলের। তবে চার ম্যাচে যে সাফল্য পেয়েছেন তাতে তৃপ্ত। লিস্ট ‘এ’ মর্যাদার টুর্নামেন্ট না হওয়ায় এই সাফল্য যুক্ত হবে না পরিসংখ্যানে। তাতে আফসোস নেই। বরং কোচ, নির্বাচকদের সামনে নিজেকে তুলে ধরতে পেরে দারুণ উৎফুল্ল রুবেল।

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়