ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ক্রিকেটারদের আন্দোলনের এক বছরে পূরণ হলো কয়টি দাবি?

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:১৯, ২১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ০৯:২৫, ২১ অক্টোবর ২০২০
ক্রিকেটারদের আন্দোলনের এক বছরে পূরণ হলো কয়টি দাবি?

ঘরোয়া ক্রিকেটের পারিশ্রমিক বাড়ানো, নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, ক্রিকেটারদের প্রতি বিসিবির দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোসহ মোট ১১ দফা দাবিতে ঠিক এক বছর আগে দেশের সব পেশাদার ক্রিকেটার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে সেই দাবি দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন চাওয়া। সব মিলিয়ে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে ১৩ দফা দাবি দেওয়া দেন সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ। ক্রিকেটারদের দাবির কয়েকটি তাৎক্ষণিক পূরণ করেছে বিসিবি। কয়েকটি পূরণের পথে আছে। তবে একাধিক দাবি দেওয়া ঝুলে আছে, দুই-একটি পূরণ হবে না কখনোই।

ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরাতে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে ১৩ দাবির ৯টিই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মেনে নিয়েছিলেন। সেসব দাবির মধ্যে ছিল ক্রিকেটারদের বেতন বৃদ্ধি, ঘরোয়া ক্রিকেটের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়। আর্থিক দাবি দেওয়ায় বিসিবি কার্পণ্য করেনি। যেগুলো পূরণ করা সম্ভব, সেগুলো দ্রুতই সমাধান করেছে। যেমন জাতীয় ক্রিকেট লিগ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের ম্যাচ ফি বাড়ানো হয়েছে। যদিও ক্রিকেটারদের দাবি ছিল ১ লাখ টাকা। বিসিবি সেটা প্রথম স্তরের জন্য করেছে ৬০ হাজার, দ্বিতীয় স্তরে ৫০ হাজার। বিসিএলে ম্যাচ ফি ৫০ হাজার। ক্রিকেটারদের দৈনিক ভাতা, আসা-যাওয়ার খরচ দ্বিগুণ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে সম্ভাব্য সেরা হোটেলে আবাসনের ব্যবস্থা করছে বিসিবি। এছাড়া ১২ মাস ট্রেনার ও কোচ রাখার দাবি দেওয়া হয়েছিল। করোনার কারণে সেসব পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সেসব ‘বড় কিছু’ নয় বলে দাবি বিসিবির।

নিজেদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধির পাশাপাশি মাঠকর্মী, স্থানীয় কোচ, আম্পায়ার, ফিজিও ও ট্রেইনারদের সম্মানী বৃদ্ধি করার দাবি করেছিলেন সাকিবরা। প্রত্যাশামাফিক না হলেও সেই দাবি পূরণ করা হয়েছে নতুন বছরে। ক্রিকেটারদের দাবি দেওয়ার মধ্যে অন্যতম ছিল ঢাকা লিগে প্লেয়ার্স ড্রাফট উঠিয়ে নেওয়া। এ দাবি তাৎক্ষণিক উঠিয়ে নেয় বিসিবি এবং ক্রিকেটারদের যার যার পছন্দের ক্লাবে খেলার সুযোগ দেয়। এছাড়া অন্য পারিশ্রমিক সংক্রান্ত বিধিনিষেধও তুলে নেয় বিসিবি।

ঘরোয়া ক্রিকেটেরর জন্য বিসিবি পঞ্জিকা চূড়ান্ত করেছে। বিসিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মৌসুম শুরু হবে জাতীয় লিগ দিয়ে। এরপর বিসিএল, বিপিএল হবে। মাঝে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে ঢাকা লিগ। যদি জাতীয় দলের খেলোয়াড় না পাওয়া যায় সূচি অনুযায়ী চলবে ঢাকা লিগ। যদিও করোনার কারণে এবার পঞ্জিকা বাস্তবায়ন করা যায়নি। জানিয়ে রাখা ভালো, বিসিবি কখনোই পঞ্জিকা অনুযায়ী টুর্নামেন্ট চালাতে পারে না। অবস্থা বুঝে প্রতিযোগিতা আয়োজন করে বিসিবি।

বিপিএল গত বছর হয়েছিল বিসিবির আয়োজনে। কোনও ফ্রাঞ্চাইজি না নিয়ে বিসিবি আয়োজন করায় ক্রিকেটারদের আপত্তি ছিল না। তবে ক্রিকেটারদের দাবি ছিল, বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের ব্যবধান কমানো। নতুন করে আসর না হওয়ায় ক্রিকেটারদের এ দাবি পূরণ হয়েছে কি না তা বলা যাচ্ছে না এখনই।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের মতোই আরও একটি করে ৫০ ওভার ও ২০ ওভারের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আয়োজন করার দাবি করেছিল বিসিবি। তাৎক্ষণিক ঘোষণায় বিসিবি সভাপতি এ দাবি মেনে নিলেও এখনও তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে নিকট ভবিষ্যতে এ ধরণের প্রতিযোগিতা আয়োজন করবে বিসিবি। প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সারাবছর ক্রিকেটারদের মাঠে রাখতে চাই। নতুন টুর্নামেন্টের সুযোগ থাকলে অবশ্যই আয়োজন করা হবে। করোনার কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। সামনে আমাদের ব্যস্ত সূচি রয়েছে।’

জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের দাবি ছিল, ৩০ জনকে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আনা ও তাদের বেতন বৃদ্ধি করা। বিসিবি এবার লাল ও সাদা বলে আলাদা দল তৈরি করে কেন্দ্রীয় চুক্তি করেছে। সঙ্গে যুক্ত করেছে রুকি খেলোয়াড়। কিন্তু আলাদা দল করেও কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ক্রিকেটার সংখ্যা মাত্র ১৬ জনের। ক্রিকেটারদের এ দাবি পূরণ হয়নি বিভিন্ন কারণে। খানিকটা ধারণা দিলেন প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন সুজন, ‘সাকিব যেমন নিষেধাজ্ঞার কারণে নেই। মাশরাফি নিজ থেকে থাকতে চাননি। আবার কেবল সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা কেন্দ্রীয় চুক্তি বাড়াতে পারি না। এটা ক্রিকেটারদের সবচেয়ে সম্মানের জায়গা। এটা তাদেরও বোঝা উচিত।’

ক্রিকেটাররা দুইটির বেশি বিদেশি লিগে খেলতে আগ্রহী। সেই দাবি তুলেছিলেন আন্দোলেন। সেই দাবি পূরণ করা হবে বলে নিশ্চিত করলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ইনজুরির প্রবণতা আছে এমন খেলোয়াড় খেলোয়াড়ের জন্য সতর্ক থাকবে বিসিবি।

ক্রিকেটারদের দাবির মধ্যে সবার প্রথমে ছিল ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা কোয়াবের নির্বাচন দেওয়া। এ নির্বাচন হয়নি এক বছরেও। সভাপতি পদে আছেন বোর্ড পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়, সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল। নির্বাচন না দেওয়ার পেছনে তাদের দায়ের থেকে ক্রিকেটারদের পাল্টা দায় দিলেন দেবব্রত। তার ভাষ্য, ‘আমরা দায়িত্ব ছাড়তে আগ্রহী ছিলাম। নতুন নেতৃত্ব চাচ্ছিলাম। ক্রিকেটারদের উন্মুক্ত করে দিয়েছি দায়িত্ব নিতে। কিন্তু তারা তিনদিনের সময় নিয়ে আজও নিজেদের সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। তবে করোনা মহামারিতে আমরা সবাই একযোগে কাজ করেছি। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’

১১ দফা দাবির সঙ্গে যে দুইটি নতুন করে যুক্ত করা হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল, বিসিবির আয়ের লভ্যাংশ। বিসিবির প্রধান নাজমুল হাসান পাপন তখনই বলে দিয়েছিলেন, এ দাবি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবাস্তব। প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানালেন, সেদিনের পর এই বিষয়ে কোনও ক্রিকেটারের সঙ্গে আলোচনাও হয়নি। তবে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কোনও কমতি রাখছে না বিসিবি।

তার ভাষ্য, ‘লভ্যাংশর বিষয়টি আমাদের প্রেসিডেন্ট স্যার সরাসরি বলে দিয়েছেন। নতুন করে কোনও বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা চাই ক্রিকেটাররা সারাবছর মাঠে থাকুক। সেটার জন্য যতটুকু করা আমরা করবো। তাদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার কাজ আমাদের। আমরা সামনেই সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখবো।’

ধর্মঘটের এক বছর হওয়া নিয়ে জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটারদের বেশ কজনের সঙ্গেই কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউই কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়