ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

১৯৮৬: যে বছর ম্যারাডোনার

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১২, ২৬ নভেম্বর ২০২০  
১৯৮৬: যে বছর ম্যারাডোনার

মেক্সিকোতে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে একমাত্র বিশ্বকাপ, যা জিতেছিল শুধু একজন খেলোয়াড়ের কারণে। ফুটবলে একটি দলকে সংজ্ঞায়িত করা হয় দলগত পারফরম্যান্স দিয়ে। কিন্তু ওই আসরে ‘আর্জেন্টিনা’র জায়গায় ডিয়েগো ম্যারাডোনার নাম বসালেও ভুল হতো না। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ শুরু আর শেষ হয়েছিল ম্যারাডোনাকে নিয়ে।

আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচেই দেখা গিয়েছিল ম্যারাডোনা জাদু। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে আলবিসেলেস্তেরা যে তিনটি গোল করেছিল, সেগুলোর প্রত্যেকটি বানিয়ে দেন তিনি। ৬ মিনিটে তার ফ্রি কিক প্রতিপক্ষের মানবদেয়ালে আঘাত করে ফিরে আসলে দারুণ এক হেডে বক্সের মধ্যে বল পাঠান। হোর্হে ভালদানো ডানপ্রান্তে বল পেয়েই জড়ান জালে। দ্বিতীয় গোলেও ছিল তার বাঁ পায়ের জাদু। ফ্রি কিক থেকে গোলমুখের সামনে বল ভাসান, অস্কার রুগেরির ভলিতে ব্যবধান দ্বিগুণ করে আর্জেন্টিনা। আর তৃতীয় অ্যাসিস্ট ছিল চোখ ধাঁধানো। বক্সের মধ্যে ঢুকে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডানপ্রান্ত থেকে বল পাঠান একেবারে গোলমুখের কাছে। ভালদানো সহজে তার দ্বিতীয় গোল করেন।

দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল ইতালির সঙ্গে। পেনাল্টি গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ম্যারাডোনা গোল করে উদ্ধার করেছিলেন আর্জেন্টিনাকে। লব করা পাস থেকে বল পেয়ে ইতালিয়ান মার্কার গায়েতানোর কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বাঁ পায়ের শক্তিশালী ড্রাইভে চমৎকার গোল করেন। ম্যাচ শেষ হয় ১-১ গোলের ড্রয়ে।

তৃতীয় ম্যাচে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ২-০ তে জেতার পথে প্রথম গোলেও অ্যাসিস্ট ম্যারাডোনার। শেষ ষোলোতে উরুগুয়েকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। ওই ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেকে নিয়ে যান লিজেন্ডের উচ্চতায়। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সবচেয়ে বিতর্কিত আর ঐশ্বরিক গোলটি করেন তিনি। প্রথম গোলে ম্যারাডোনা ছিলেন বেপরোয়া। ইংল্যান্ডের গোলকিপার পিটার শিল্টনের চেয়ে উঁচুতে লাফিয়ে জালে বল জড়ালেন বাঁ হাত দিয়ে। বিশ্বের কাছে তা প্রতারণা হলেও ম্যারাডোনা বলেছিলেন, তা ছিল ‘ঈশ্বরের হাত’।

ওই গোল নিয়ে বিতর্ক হলেও তার পরের গোলটি ছিল মন্ত্রমুগ্ধকর। অসম্ভব দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন ম্যারাডোনা। নিজেদের অর্ধে বল পান তিনি, এরপর দুই ডিফেন্ডারের সামনে নিজেকে ঘুরিয়ে বল পায়ে রেখে ডি বক্সের দিকে দৌড় দেন। একে একে সাতজন ইংলিশ খেলোয়াড়কে পেছনে ফেলেন, একমাত্র বাধা হতে পারতেন শিল্টন। কিন্তু তাকেও বোকা বানান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক, গোলের সহজ সুযোগ আর নষ্ট করেননি। বল পায়ে রেখে ১২ সেকেন্ডে ৬০ গজ দৌড়ে এমন গোল করলেন ম্যারাডোনা, যাকে বলা হয়ে থাকে ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি।’

সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষেও ভয়ঙ্কর ছিলেন ম্যারাডোনা। ২-০ গোলের জয়ে প্রত্যেকটি করেছিলেন তিনি। বক্সের মধ্যে পাশে দুই ডিফেন্ডার আর গোলকিপারকে এগিয়ে আসতে দেখে ফ্লিক করে লক্ষ্যভেদ করেন। তার দ্বিতীয় গোলে ছিল একই সঙ্গে আশ্চর্য গতি আর বলের নিয়ন্ত্রণ। চার ডিফেন্ডারের বাধা পেরোতে গিয়ে ভারসাম্য হারাতে বসেছিলেন। তবুও দমে যাননি। নিখুঁত কোনাকুনি শটে জালে বল জড়ান ম্যারাডোনা।

লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন অধিনায়ক। শিরোপার লড়াইয়ের মঞ্চেও রাখেন সাফল্যের ছাপ। ৮০ মিনিটে পশ্চিম জার্মানি দ্বিতীয় গোল করে সমতা ফেরানোর তিন মিনিট পর ম্যারাডোনার লেজার গতির থ্রু পাস ধরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী গোলটি করেন হোর্হে বুরুশাগা।

পরিসংখ্যানও প্রমাণ দেয় যে ওই আসরটি ছিল ‘ওয়ান ম্যান শো’। মেক্সিকোতে আর্জেন্টিনার মোট গোলের ৭১ শতাংশে ম্যারাডোনা অবদান রেখেছেন হয় গোল করে নয়তো বানিয়ে দিয়ে। তুলনা করলে, ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ে পেলে মোট গোলের ৫৩ শতাংশে রেখেছিলেন অবদান।

বলা যায়, ফুটবলের ইতিহাসে ১৯৮৬ সালটা সবসময় ম্যারাডোনার বছর হয়েই থাকবে।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়