ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বিশ্বকাপ, ডোপ পজিটিভ এবং থমকে যাওয়া ম্যারাডোনার ক্যারিয়ার

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০২, ২৬ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ২০:১০, ২৬ নভেম্বর ২০২০
বিশ্বকাপ, ডোপ পজিটিভ এবং থমকে যাওয়া ম্যারাডোনার ক্যারিয়ার

ফুটবলের জাদুতে নিজেকে নিয়ে গেছেন ‘ঈশ্বর’-এর আসনে। শেষ পর্যন্ত মর্ত্যের মানুষ হয়েই ফুটবলকে বিদায় বলতে হয়েছে দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনাকে।

‘ঈশ্বর’ সে তো দেবতাতুল্য। ‘ঈশ্বর’ সে তো পবিত্র, ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে। কিন্তু মানুষ মাত্রই ভুল। আর এই দুইয়ের মিশেল ছিলেন হাজার ভক্ত-অনুসারী রেখে যাওয়া ম্যারাডোনা।

১৯৬০ সালে জন্ম নেওয়া ম্যারাডোনা মাত্র ৮ বছর বয়সে ফুটবল জাদুতে মোহিত করেছিলেন ট্রেনার ফ্রান্সিসকো কর্নেজোকে। তিনি দিয়েছিলেন প্রথম সুযোগ। সেই থেকে পায়ের জাদুতে সবাইকে মাত করে কেবল ছুটে চলা ম্যারাডোনার। সেই জাদুর সর্বোচ্চ দেখেছে ১৯৮৬ সাল। যেবার একাই ছুটে নিজেকে বানিয়েছেন ফুটবল ঈশ্বর।

অবশ্য মাঠের ফুটবলে ম্যারাডোনার উপস্থিতিতে ভুল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ঈশ্বর হয়ে ওঠা তার স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু মাঠের বাইরের ম্যারাডোনা ছিলেন রক্ত-মাংসের মানুষ। যিনি কিনা ভুল করতেন। বলা চলে ভুলের সর্বোচ্চটাই করেছেন। আর এই ভুলের খেসারত শেষ পর্যন্ত মাঠের ফুটবলকে বিদায় বলেই দিতে হয়েছিল।

যার শুরু ১৯৯৪ বিশ্বকাপ। সেবার বিশ্বকাপ চলাকালীন ম্যারাডোনার শরীরে বলবর্ধক ওষুধের উপস্থিতি খুঁজে পায় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। যার ফলে আসরের মাঝপথেই আমেরিকার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল ম্যারাডোনাকে।

সেই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল গ্রিস। তাদের বিপক্ষে ৪-০ গোলের সহজ জয় পায় ম্যারাডোনার দল। যার মধ্যে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার হ্যাটট্রিক ও অধিনায়ক ম্যারাডোনার এক গোল ছিল।

পরের ম্যাচ ছিল নাইজেরিয়ার বিপক্ষে। সেই ম্যাচে শুরুতে নাইজেরিয়া এগিয়ে গেলেও ম্যারাডোনা এই ম্যাচেও ছিলেন উজ্জ্বল। নিজে করেছেন এক গোল আর করিয়েছেন একটি। শেষ পর্যন্ত নাইজেরিয়াকে ২-১ ব্যবধানে ম্যাচ হারিয়ে টানা দুই জয়ে দারুণ শুরু করে আর্জেন্টিনা।

কিন্তু বিপত্তি ঘটে এরপরে। সেই ম্যাচের মাঝে ফিফা কর্মকর্তা রবের্তো আসেন ফুটবলারদের ডোপ টেস্ট করতে। যেটা স্বাভাবিক রুটিন চেক আপের মধ্যেই পড়ে। অন্য সবার মতো ফুটবল ঈশ্বর ম্যারাডোনাকেও পড়তে হয় এই প্রক্রিয়ার মধ্যে।

এরপরের দিন ৩০ জুন ফুটবল ইতিহাসের কালো অধ্যায় হয়ে দেখা দেয় আর্জেন্টাইন শিবিরে। ফিফা থেকে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাছে ফোন যায় ‘ম্যারাডোনার ডোপ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ’। সঙ্গে সঙ্গে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান হুলিও গ্রোনদানো ফোন করেন দলের ডাক্তার পেদ্রোকে। বলেন, ‘ম্যারাডোনার মূত্র টেস্টে বলবর্ধক ওষুধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফিফার সঙ্গে কথা বলে নাও।’

পেদ্রোও তখনকার ফিফা প্রধান সেপ ব্ল্যাটারকে ফোন দেন। বিস্তারিত জানতে চান। ব্ল্যাটার জানিয়ে দেন, ম্যারাডোনার ডোপ টেস্ট পজিটিভ। তাকে নিষেধাজ্ঞাও করা হবে। সেদিনই দেড় বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষেধাজ্ঞা পান ৩৪ বছর বয়সী মানুষ ম্যারাডোনা। মুহূর্তের মধ্যে ছিটকে পড়েন মাঠ থেকে।

এই খবর শোনার পর কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে নিজের রুমে ঢুকে পড়েন এই কিংবদন্তি। সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। নিজেই হয়ত দেখে গিয়েছিলেন ফুটবলের ঈশ্বর হয়ে আর মাঠে নামা হবে না তার। যদিও অন্ধকারে জড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে থামতে হয়েছিল ম্যারাডোনাকে, কিন্তু যে কীর্তি তিনি গড়ে গিয়েছিলেন; মানুষ ম্যারাডোনার ব্যক্তিজীবন নয় বরং সারাজীবন ফুটবল ঈশ্বর হয়ে বেঁচে ছিলেন সকলের হৃদয়ে।

ঢাকা/কামরুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়