ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তবুও তারা চান না অনুশীলনে ফুটবল বন্ধ হোক

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ৫ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:২৯, ৫ ডিসেম্বর ২০২০
তবুও তারা চান না অনুশীলনে ফুটবল বন্ধ হোক

'দ্য আগলি সাইড টু দ্য বিউটিফুল গেম' শিরোনামে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ২০১৮ সালে একটি প্রতিবেদন করেছিল। আশ্চর্য মনে হলেও সত্যি যে এই প্রতিবেদনের মূল 'নায়ক' দুই বাংলাদেশি ক্রিকেটার; আর বিষয় ছিল অনুশীলনে ফুটবল খেলা।

অর্থাৎ ক্রিকেটাররা অনুশীলনে গা গরম করতে গিয়ে নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলেন কিংবা ইনজুরির কবলে পড়েন সেই বিষয়টিকে 'সুন্দর খেলার (পড়ুন ক্রিকেটের) অসুন্দর দিক' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তাই বলে কী অনুশীলনে ফুটবল নিয়ে গা গরম বন্ধ করে দেওয়া যায়?

মাথা ব্যথা হলে কি মাথা কেটে ফেলা হয়? অবশ্যই না। অনুশীলনে ফুটবল খেলতে গিয়ে প্রায়ই ইনজুরিতে পড়েন ক্রিকেটাররা। তাই বলে গোলাকার এই বস্তুটির নেশা কেটেও উঠতে পারেন না তারা। তাই বন্ধ হোক এটাও চান না তারা। আবার উল্টো দিকও আছে; এই বছরের শুরুতে অনুশীলনে ফুটবলই নিষিদ্ধ করে দেয় ইংল্যান্ড।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ অনেকটা সেই পথেই হেঁটেছিল। মুশফিকুর রহিম ও নাসির হোসেন ইনজুরিতে পড়ায় অনুশীলনে ফুটবল নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) । তবে একেবারে বন্ধ হয়নি!

হঠ্যাৎ কেন এত আলোচনা?

বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন সরগরম অনুশীলনে ফুটবল খেলা নিয়ে। কারণ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের আগে ফুটবল নিয়ে কারিকুরি করতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন সাইফউদ্দিন। অথচ তার দল মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী তাকে ঘিরেই সাজিয়েছিল রণকৌশল। প্লেয়ার্স ড্রাফটের প্রথম ধাপেই তাকে কিনেছিল দলটি। অথচ এখন পর্যন্ত কোনও ম্যাচই খেলতে পারেননি। এর আগেও ক্রিকেটারদের ফুটবল খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ার ঘটনা রয়েছে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অনুশীলনেও কি এবার ফুটবল বন্ধের সময় এসেছে? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে দুই সাবেক ক্রিকেটার এবং এমন কি সাইফউদ্দিন নিজেও রাইজিংবিডিকে জানালেন, ফুটবল বন্ধ করা উচিত হবে না। বিসিবির ফিটনেস ট্রেনার তুষার কান্তি হালদারেরও একই মন্তব্য। তাদের ভাষ্য ফুটবল খেলার কৌশল বদলাতে হবে। খেলতে হবে নিছক মজা করে।

ক্রিকেটারদের অনুশীলনে ফুটবল কেন?

বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে জানায়, ফুটবল ক্রিকেটারদের বিভিন্ন দিক থেকেও উপকার করে। বিশেষ করে ফিটনেসে। দলীয় একতা বৃদ্ধিতেও খুব কাজে দেয় ফুটবল। খেলোয়াড়দের মনোনিবেশ বাড়ায়। শরীর ঝরঝরে করে। ক্লান্তি দূর করে। মূলত শরীরকে অনেক হালকা করে দেয়। বিরাট কোহলি নিজেই বলেন, টানা ভ্রমণের পর একটু ফুটবল খেললে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়!

কারা পড়েছেন ইনজুরির কবলে (উল্লেখ যোগ্য)

দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে মুশফিকুর রহিম ছিটকে যান তিন সপ্তাহের জন্য। নাসির হোসেন ভোগেন ৬ মাস! চোটে পড়েন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানও। একেবারে সম্প্রতি সাইফ উদ্দিন। সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিমও ভুগেছিলেন ইনজুরিতে। বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে জনি বেয়ারেস্টো, ররি বার্নস, ম্যাট প্রিয়র, জো ডেনলি ও ফিডেল অ্যাওয়ার্ডস, শ্রীলঙ্কার পেসার শামিন্দা এরাঙ্গা ছিটকে যান ফুটবল খেলতে গিয়ে। ভারতের রোহিত শর্মা তার টেস্ট অভিষেকের ঠিক আগেই ফুটবলের জন্য ইনজুরিতে পড়েন।

যার জন্য এত আলোচনা, সেই তিনি চান না বন্ধ হোক ফুটবল

সাইফ উদ্দিনকে নিয়েই মূলত আলোচানাটা পুনরায় শুরু হয়। কিন্তু তিনিই চান না এটা বন্ধ হোক। তার মতে, 'আসলে বিপদ যে কারও হতে পারে। এটা আসলে সাধারণ ব্যাপার কখন কী হয় বলা যায় না। আসলে আমরা খেলোয়াড়, ট্রেনাররা আমাদের ওয়ার্ম আপের জন্য যেটাই বলবে, সেটাই করবো। আমাদের যদি নিষেধ করেন, আমরা করবো না। আমি বলবো না যে ফুটবলটা বন্ধ করে দেওয়া হোক। কারণ ফুটবল খেললে অনেক যোগ্যতা বাড়ে, মনোযোগ বাড়ে। ক্লান্তি চলে যায়, ঘুম চলে যায়। আসলে এটার  ভালো দিকও আছে খারাপ দিকও আছে। যে কোন কাজেই পজিটিভ-নেগেটিভ দুটোই থাকবে।'

দৌড়াতে গিয়ে ইনজুরি হয়, তাই বলে দৌড়ানো বন্ধ হবে?

ঠিক এমন প্রশ্ন রেখেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম। তার ভাষ্যমতে, 'আমাদের সময় ফুটবল নিয়ে রীতিমতো হাতাহাতি হয়েছে, মারামারি হয়েছে। আমার কাছে মনে হয় ফুটবল খেলাটা ঠিক। ফিটনেসের একটা ব্যাপার থাকে । যদি একটু কড়াকড়ি করে দেয়, যেমন তিনবারের বেশি বল স্পর্শ করা যাবে না। এটা আমাদের ক্ষেত্রে করেছিল। আমাদের মধ্যে একটু বল নিয়ে বেশি কাড়াকাড়ি হতো। দৌড়াতে গিয়েও ইনজুরি হয়, শুধু একটা জিনিসই মাথায় রাখতে হবে যে এটা প্রতিযোগিতা নয়। রাফ অ্যান্ড টাফ খেলা যাবে না। আমার নিজেরও অপারেশন হয়েছে ফুটবল খেলার জন্য। বল শুট করতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ি। এক ম্যাচ খেলতে পারিনি। এটা অনেকেরই হয়। একটু সাবধানে খেলা উচিত।'

 

আরও বেশি ফুটবল খেলতে দিতেন খালেদ মাসুদ পাইলট!

'আসলে এটা নির্ভর করে আপনি কীভাবে ফুটবল খেলছেন। অনেক সময় খেলতে খেলতে  এমনও হয় যে রাফ অ্যান্ড টাফ। ওয়ার্ম আপ ফিটনেসের জন্য যতটুকু দরকার, সেটা ঠিক আছে। সবাই একটা অজুহাত দেয় যে ফুটবল খেলা  বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলে, এটা খেলার একটা অংশ। খুব দ্রুত মনোনিবেশ করা যায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ফুটবল খেলে নিজেকে প্রস্তুত করে ফেলা যায়। ১০ মিনিট আপনার বন্ধুরা মিলে ফুটবল খেলে দেখেন শরীর ছেড়ে গেছে। অনেকে অজুহাত দেয় ফুটবল খেলা উচিত না তাহলে অনুশীলনে বোলিংও করা উচিত না। এটা নির্ভর করছে আপনি কতটুকু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে খেলছেন। খেলোয়াড়দের ইনজুরি হবেই, এটা যে কোনোভাবেই হতে পারে। আমি দায়িত্বে থাকলে আরও বেশি ফুটবল খেলতে দিতাম।'

কী বলছেন বিসিবির ট্রেনার তুষার কান্তি হাওলাদার

'যেমন ছুরি আমাদের জীবনে প্রয়োজনীয় একটা জিনিস। এটা দিয়ে আপনি ভালো কাজও করতে পারেন, আবার মানুষও মারতে পারেন। আপনি কীভাবে তা ব্যবহার করছেন, সেটা হলো ব্যাপার। ট্রেনার- ফিজিও সবার একটা দর্শন আছে। খেলোয়াড়দের কীভাবে তারা  জাগিয়ে তুলবে, ওয়ার্ম আপ করাবে, সেটা ট্রেনারের উপর নির্ভর করে।’

‘আমাদের দেশে মানসিকভাবে একটা বিষয় আছে যে ফুটবল খেললে খুব ভালো করবে। এটা বুঝে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমি বলবো না যে এটার খুব প্রয়োজন আছে, আবার বলবোও না যে প্রয়োজন নেই। ভারতীয় দলের ফুটবল ছাড়া ওয়ার্ম আপ চলে না। মজা করার জন্য খেলতে হবে। কোনও খেলোয়াড় যদি সিরিয়াস হয়ে যায়, তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ট্রেনারদের। খেলার আগে ফুটবলটা মজার জন্য প্রয়োজন আছে। কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত করে খেলতে হবে। ফুটবল ম্যাচ খেলার প্রয়োজন নেই, মাথায় নিয়ে ফান করতে পারে, চোর চোর খেলতে পারে, সেখানে যেন মজা থাকে। খেলাটা হবে এমন যে তা জেতার জন্য নয়।'

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়