ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ছক্কার রেকর্ডের ম্যাচে রান তাড়ার ইতিহাস

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ৮ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৮:২০, ৮ ডিসেম্বর ২০২০
ছক্কার রেকর্ডের ম্যাচে রান তাড়ার ইতিহাস

চার মেরে সেঞ্চুরি করে দলকে জেতান ইমন

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে বড় রান না হওয়ার অভিযোগ ছিল। ব্যাটসম্যানদের দিকেই ছিল অভিযোগের তীর। সেসব অভিযোগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন ফরচুন বরিশাল ও মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর ব্যাটসম্যানরা। 

মঙ্গলবার রান উৎসব হলো মিরপুরের ২২ গজে। সেঞ্চুরির জবাবে এসেছে সেঞ্চুরি। রেকর্ড রানের লক্ষ্য তাড়া হয়েছে অনায়াসে। হয়েছে ছক্কা বৃষ্টি। ওলট পালট হয়েছে রেকর্ড বই। 

মিরপুর শের-ই-বাংলায় আগে ব্যাটিং করে রাজশাহী ৭ উইকেটে ২২০ রান সংগ্রহ করে। জবাবে বরিশাল লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ১১ বল আগে, ৮ উইকেট হাতে রেখে। 

বাংলাদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েছে বরিশাল। ২২১ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলে অনায়াসে। এর আগে ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট রয়্যালস ১৯৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল। 

এদিকে ছক্কার রেকর্ডও হয়েছে এ ম্যাচে। রাজশাহী ১৮ ছক্কার জবাবে বরিশাল মেরেছে ১০ ছক্কা। এর আগে বাংলাদেশে ঘরোয়া কোনও আসরে এত ছয় হয়নি। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রিলিমিনারি ফাইনালে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস ও সিলেট রয়্যালসের ম্যাচে হয়েছিল ২৭ ছক্কা। তবে ২০১৪ সালে সিলেটে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের ম্যাচে হয়েছিল ৩০ ছক্কা। যা বাংলাদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ। 

নাজমুল হোসেন শান্ত ৫৫ বলে ১০৯ রান তুলে রাজশাহীকে এনে দিয়েছিলেন বিশাল পুঁজি। কিন্তু তার সেঞ্চুরি ভেস্তে যায় ইমনের দোর্দণ্ড প্রতাপে। মাত্র ৪২ বলে সেঞ্চুরি তুলে ইমন জেতান বরিশালকে। 

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তামিম এর আগে ৫০ বলে পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি।

নাজমুল ও ইমনের রেকর্ড গড়া ম্যাচের দিনে বল হাতে হ্যাট্রট্রিকসহ ওভারে ৪ উইকেট নিয়েছেন কামরুল ইসলাম রাব্বী। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পঞ্চম হ্যাটট্রিকের কীর্তি এটি। রাব্বী বাদে হ্যাটট্রিক আছে আল-আমিন হোসেন, অ্যালিস আল ইসলাম ও মানিক খানের।

ব্যাটিংয়ে নেমে শান্ত ও আনিসুল ইসলাম ইমন রাজশাহীকে দারুণ শুরু এনে দেন। শান্ত প্রথম বাউন্ডারি পেতে ১৩তম বল পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আনিসুল শুরু থেকেই আগ্রাসন দেখান। দুইজনের উদ্বোধনী জুটিতে আসে এবারের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১৩১ রান। আনিসুল ৩৯ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৯ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন। 

অন্যপ্রান্তে শান্ত ৩২ বলে তুলে নেন ফিফটি। এরপর ২২ গজে শুরু করেন আগ্রাসন। পরের ২০ বলে এসে যায় তার সেঞ্চুরি। ১০৯ রানে তাকে থামান রাব্বী। এর আগে ছক্কা বৃষ্টিতে মাঠ মাতান শান্ত। ১১ ছক্কা ছিল তার ইনিংসে। যা যৌথভাবে তামিমের সঙ্গে রয়েছে শীর্ষে। বিপিএলে ১৪১ রানের ইনিংস খেলার পথে তামিমও হাঁকিয়েছিলেন ১১ ছক্কা। তিনে নেমে রনি তালুকদার ১২ বলে করেন ১৮ রান। নুরুল হাসানের ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ১২ রান। 

রাব্বী শেষ ওভারে ৪ উইকেট নিয়ে রানের গতি কিছুটা থামিয়ে রেখেছিলেন। তবুও তার বোলিং ছিল হতশ্রী। ৪৯ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। তাসকিন একই রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। ৩ ওভারে ৩৫ রান দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪৩ রানে ২ উইকেট নেন সুমন খান। 

রান তাড়ায় শুরু থেকেই আগ্রাসী মনোভাবে ব্যাটিং করে বরিশাল। শুরুতে ২টি করে চার ও ছক্কায় সাইফ হাসান দ্রুত ২৭ রান তোলেন। এরপর সাইফ উদ্দিনের বলে আউট হলেও বরিশাল নিজেদের পথ ভোলেনি। দ্বিতীয় উইকেটে তারা পেয়ে যায় জয়ের ভিত। 

তামিম ও ইমন ৫৩ বলে ১১৭ রানের জুটি গড়েন। তাতে স্রেফ উড়ে যায় রাজশাহী। দুই বাঁহাতিকে থামানোর কোনও কৌশল কাজে লাগছিল না বোলারের। তামিম হাফসেঞ্চুরি পাওয়ার পর রান আউট হয়ে ৫৩ রানে ফিরে গেলেও ইমন ছিলেন দায়িত্বশীল। 

ইনিংসের শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন ইমন। শেষ ১২ বলে জয়ের জন্য লাগতো ৪ রান। আনিসুলের বল কভার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে জয়সূচক রানটি নেন ইমন। ওই ৪ রানে পৌঁছে যান তিন অঙ্কের ঘরে। ৪২ বলে ৯ চার ও ৭ ছক্কায় যুব বিশ্বকাপজয়ী ব্যাটসম্যান দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। 

রাজশাহীর বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে হতাশ করেন অভিজ্ঞ ফরহাদ রেজা। ডানহাতি মিডিয়াম পেসার ৩ ওভারে খরচ করেন ৪৭ রান। বরিশাল ম্যাচ বেরিয়ে যায় সেখানেই। এ বোলারের এক ওভারেই ইমন নিয়েছিলেন ২৬ রান। 

ধ্রুপদী ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন ইমন। সঙ্গে দিয়েছেন পরিষ্কার বার্তা, বড় মঞ্চের জন্য তিনি প্রস্তুত বেশ ভালোভাবেই।

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়