তিন তরুণের ‘সেঞ্চুরি গাঁথা’
ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানে রানের ফোয়ারা। ব্যাটসম্যানদের ব্যাট যেন হয়ে ওঠে তরবারি। চোখ থাকে বাউন্ডারি লাইনের দিকে। বাঘা বাঘা বোলাররা প্রতি বলে বলে ঝপতে থাকেন ডটের আশা। কখনো পার পান কখনো পান না।
‘বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট স্পন্সরড বাই ওয়ালটন’ শেষের পথে। গ্রুপ পর্বের খেলা শেষে এখন এখন শেষ চার অবস্থান করছে চার দল। এই দলগুলো থেকে দুটি দল যাবে ফাইনালে। রানের হিসেব করলে টুর্নামেন্টে টি-টোয়েন্টি সুলভ রান হয়নি। অর্থাৎ ব্যাটসম্যানরা আশানুরূপ রান পাননি।
কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাটসম্যানদের থেকে সবচেয়ে বড় পাওয়া ধরলে তিন তরুণের সেঞ্চুরি। তার মধ্যে আছেন অভিজ্ঞ নাজুমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে নাঈম শেখ ও যুব বিশ্বকাপ জয়ী পারভেজ ইমন। এর মধ্যে পারভেজই শুধু দলকে জেতাতে পেরেছেন বাকি নাঈম-শান্তরা হেরে গেছেন।
সেঞ্চুরি করেও দুর্ভাগা শান্ত
এ দিন মিরপুরে যেনো বইছিল রানের বন্যা। তাসকিন-সুমন খানের বলকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে আছড়ে ফেলছিলেন গ্যালারিতে। শান্ত ছিলেন একেবারে অশান্ত। মাত্র ৫৫ বলে ১০৯ রান করে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন রান পাহাড়ে। কিন্তু হায় জেতাতে পারলেন না দলকে।
তাইতো বলেই ফেললেন, এ সেঞ্চুরি মূল্যহীন। ‘দল হেরে গেলে সেঞ্চুরি মূল্যহীন। আমি যদি ৮০ রান করেও দলকে জেতাতে পারতাম সেটি আমার ভালো লাগতো। এই ম্যাচে আমাদের বোলাররা পরিকল্পনামাফিক বোলিং করতে পারেনি এটিই আমাদের ভুগিয়েছেন।’
বিপিএলেও শান্তর একটি সেঞ্চুরি রয়েছে। এবার করেছেন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। তার এই ফর্ম বজায় থাকলে আখেরে লাভ বাংলাদেশেরই।
ইমন খেলেন এমনই!
যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল। শান্ত-ইমনের ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় কোনো উদাহরণ নেই। আগের ইনিংসে শান্ত ৫৫ বলে ১০৫ করেছেন, আর ইমন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁলেন মাত্র ৪২ বলে! দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যা একটি রেকর্ড।
ইমন জানালেন তার এটা সহজাত খেলা। ইমনের কথায় ‘আমি স্বাভাবিক খেলার চেষ্টা করেছি। ওরকম কোন চাপ নেই যে অনেক বেশি। আমি ন্যাচারালি এমন খেলার চেষ্টা করি। এই অভ্যাসটা আগে ছিল। তবে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে এমন ছিলাম না। না। (যুব বিশ্বকাপের পর) এমন (আক্রমণাত্মক ব্যাটিং) আসেনি। তবে আমি এইচপির শেষ দুইটা প্রস্তুতি ম্যাচে মেরে খেলার চেষ্টা করেছি। সেখানে সফল হয়েছি। এরপরই আত্মবিশ্বাসটা এসেছে।’
হতাশা নাঈমেরও
শান্তর মতো সেঞ্ছুরির পরও দলকে জেতাতে পারেননি নাঈম শেখ। ১৯৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে নাঈম শুরু থেকেই খেলছিলেন দুর্দান্ত। কিন্তু তিনি আউট হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরার সঙ্গে নিয়ে আসলের দলের জয়ভাগ্যও। তার ব্যাট থেকে আসে ৬৪ বলে ১০৫।
তাইতো হতাশা প্রকাশ করে বলছেন তিনি থাকলে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তেন। নাঈম বলেন, ‘দলের যে পরিস্থিতি সেভাবেই চেষ্টা করেছি। প্রথম ৬ ওভার অনেক কঠিন ছিল আমার জন্য। আমি জানি সেট হলে পরে কভার করতে পারবো। এভাবে পরিকল্পনা করেই এগোচ্ছিলাম। আমি থাকলে এটা সহজ হয়ে যেত আমাদের জন্য।’
বড় ইনিংস নেই, দলীয় রানও বেশি নেই
একটু পরিসংখ্যান দেখা যাক। এখন পর্যন্ত গ্রুপ পর্বের ২০টি ম্যাচ হয়েছে। প্রত্যেকটি দল মুখোমুখি হয়েছে দুবার করে। মোট খেলা হয়েছে ৪০টি ইনিংস। এর মধ্যে মাত্র ১১টি ইনিংস ছিল ১৬০ থেকে ২০০ এর মধ্যে। আর দুটি ইনিংস ছিল ২০০ এর বেশি। ১৯০ এর ঘরও পার হয় মাত্র দুই বার। তার মধ্যে তিনিটি ইনিংসে আসে সেঞ্চুরি। অর্থাৎ এই তিনটি ম্যাচের দিকে তাকালেই বোঝা যায় ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলেই বড় দলীয় রান নেই!
ঢাকা/রিয়াদ
আরো পড়ুন