ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

উইন্ডিজকে উজ্জীবিত করতে লয়েডের খোলা চিঠি

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২০:৪৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২১
উইন্ডিজকে উজ্জীবিত করতে লয়েডের খোলা চিঠি

১৯৬৬ সালে ভারত সফরের প্রথম টেস্টে ২২ বছর বয়সী গায়ানিজ তরুণ ক্লাইভ লয়েডের আন্তর্জাতিক অভিষেকটা হয়েছিল আচমকা। ওই সময়ের বোম্বে শহরে তিনি দলে ডাক পান ম্যাচ শুরুর এক ঘণ্টারও কম সময়ের আগে। সেইমোর নার্সের আঙুলের চোটে দলে ঢুকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ৮২ ও অপরাজিত ৭৮ রানের ইনিংস খেলে সিরিজে লিড এনে দেন সফরকারীদের। আকস্মিক সুযোগ পেয়ে তা লুফে নেন এবং দৃঢ়চেতা ব্যাটিংয়ে ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন অন্যতম সফল ও দাপুটে অধিনায়ক হিসেবে।

এখনক লয়েডের বয়স ৭৬, অভিষেকের ওই গল্পটা এতদিন পর মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশ সফররত অনভিজ্ঞ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে। তিন ওয়ানডে ও দুটি টেস্ট খেলতে টেস্ট ও সাদা বলের দলের প্রথম সারির খেলোয়াড়রা এই সফর থেকে নাম কেটে ফেলেছেন। আর তাদের বদলে সুযোগ পেয়েছেন অনভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা। তাদের উজ্জীবিত করতে একটি খোলা চিঠি লিখলেন লয়েড। ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রেসিডেন্ট রিকি স্কেরিটের সৌজন্যে তা খেলোয়াড়দের কাছে বিলি করা হয়েছে।

ক্রেইগ ব্যাথওয়েটদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠির শুরুটা এভাবে করেছেন লয়েড, ‘আমি তোমাদের কাছে এমন সময়ে একটা বার্তা দিচ্ছি, যখন তোমরা এমন একটা সফরে আছ যেটার জন্য সম্ভবত তোমরা প্রস্তুত ছিলে না। হয়তো মনে হতে পারে তোমাদের গর্তে ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং লোকজন তোমাদের কাছে কিছু প্রত্যাশা করছে। তোমাদের একটা জিনিস বুঝতে হবে, তা হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে জায়গাটা পাকাপাকি করার দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছো তোমরা। শূন্যস্থান পূরণের জন্য এসেছো, এটা ভাবা চলবে না। তোমরা তোমাদের মেধা দিয়ে এসেছো। এটাই নিয়তি। এই সুযোগ ব্যবহার করতে হবে। তোমাদের প্রতিভা ও দক্ষতা বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়ার দারুণ একটা সুযোগ। দেখিয়ে দাও তোমরা দ্বিতীয় শ্রেণির ক্রিকেটার নও, তোমরাও পারো।’

নিজের অভিষেকের ব্যাপারটি মনে করিয়ে দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম দুটি বিশ্বকাপ জয়ের অধিনায়ক, ‘১৯৬৬ সালে মূল টেস্ট দলে আমি ছিলাম না। সৌভাগ্যবশত, সেইমোর নার্স ইনজুরিতে পড়লেন এবং প্রথম টেস্টের ৪৫ মিনিট আগে আমাকে জানানো হলো আমি খেলছি এবং টানা ৩৫ ম্যাচ খেললাম, কারণ ভালো পারফর্ম করেছিলাম। আমরা সিরিজও জিতেছিলাম। তোমরা দেখ, আমার প্রতিভা ও সামর্থ্য দেখানোর ভালো সুযোগ এসেছিল এবং দুই হাত দিয়ে তা লুফে নিয়েছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা হলো, একজন নাগরিক হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে পারাই তো অনেক উচ্চ সম্মানের ব্যাপার। আমি তখন তা বিশ্বাস করতাম এবং এখনও করি।’

লয়েড আরও লিখেছেন, ‘ঠিক একই জায়গায় তোমরা। তোমরা যে যোগ্য হিসেবে দলে ঢুকেছ, সেটা প্রমাণ করো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্লেজার ও ক্যাপ পরতে যাচ্ছ, এটা গর্ব করা উচিত। তোমরা একটা সেরা ক্রিকেটীয় জাতির প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছ, যারা গর্বিত রেকর্ডের অধিকারী। মনে রেখো, ৫০ লাখের বেশি মানুষের একটি জাতি আমরা।’

১৯৭৪ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত অধিনায়কত্ব করে ২৯ ম্যাচ অজেয় ছিলেন লয়েড, টানা জয় ছিল ১১টি। টানা ১৭ বছর একটিও টেস্ট ম্যাচ হারেনি ক্যারিবিয়ানরা। ওই গর্বিত অধ্যায় কঠোর পরিশ্রম ও নিবেদনের ফসল। ওই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি অসম্ভব মনে করছেন না লয়েড, ‘আমি তোমাদের উপদেশ দিবো, তোমরা তোমাদের ফিটনেসের দিকে মনোযোগ দাও। একজন ব্যাটসম্যান বা বোলার হিসেবে নিজেদের কৌশল ও দক্ষতা পরিশুদ্ধ করো। আমার দল এটা করেছিল এবং আমি আত্মবিশ্বাসী তোমরাও পারবে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ সফর হয়তো কঠিন মনে হচ্ছে, কিন্তু দুর্গম তো নয়। এটা আদর্শ সুযোগ। তোমাদের দৃঢ়তা, পেশাদারিত্ব, যৌবন ও জেদ নিয়ে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের অধীনে নতুন একটি অধ্যায় শুরু করতে পারো।’ তরুণ এই দলকে নিয়ে আশাবাদী লয়েড, ‘আমি তোমাদের একটা প্রবাদ মনে করাতে চাই: উচ্চতায় যেতে হলে তোমাদের অবশ্যই সঠিক মনোভাব থাকতে হবে। ইতিবাচক মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি তোমাদের অনেক কঠিন পরিস্থিতি পার করে দেবে। এই সফরের ক্ষেত্রেও তোমরা তেমন করে সফল হতে পারবে আমি নিশ্চিত। শেষ কথা হলো, কেবল অভিধানেই সাফল্য কাজের আগে আসে। আমি তোমাদের শুভ কামনা জানাই। দয়া করে মনে রাখবে, বেশিরভাগ মানুষকে বিচার করা হয় তারা কত বাধা পেরিয়ে এসেছে।’

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়