ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

খুনসুটিতে ভরা সাকিবের অনুশীলন

চট্টগ্রাম থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ২৪ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৭:১৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২১
খুনসুটিতে ভরা সাকিবের অনুশীলন

দল যখন জয়ের ধারাবাহিকতায় থাকে, খেলোয়াড়রা যখন থাকেন ছন্দে তখন ভুলগুলো আড়াল হয়ে যায়! সত্যিই-ই কি তাই?

যদি তাই হতো তাহলে সাকিবের আজকের ব্যাটিং অনুশীলন নিশ্চিয়ই এমন হতো না। নেটে স্পিনার মেহেদী হাসান ও মাহেদী হাসানকে খুব সাবলীল খেললেও এক-দুই বল পর বলে ওঠলেন, ‘আরেকটু ওয়াইড কর। ওই বলগুলো ভেতরে ঢুকলে খেলতে সমস্যা হয়…’ দুই স্পিনার সাকিবের কথা মতো কাজ করলেন। ওয়াইডে ফোর্থ বা ফিফথ স্ট্যাম্প বরাবর বল করে ভেতরে ঢোকাচ্ছেন। সাকিব সেগুলো খেলছেন একটু লেটে। পেছনের পায়ে ভর করে। কখনো শর্ট মিড উইকেটে, কখনো ডিপ মিড উইকেটে। কখনো আলতো টোকায় ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ বা ফাইন লেগে বল পাঠাচ্ছেন।

আবার হিসেব করে রানও গুনছেন। শট খেলার পর বলে ওঠছেন, এক বা দুই। মানে এক রান, দুই রান। ব্যাটিং শেষে বোলিংয়ে আসা আফিফ বল করেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে। তার একটি বল ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেললেও টাইমিংয়ে গড়বড় করেন। ব্যাটের চুমু খেয়ে বল যায় উইকেটের পেছনে। আফিফকে সাকিবের জিজ্ঞাসা, ‘কি হলো এটা।’ আফিফের উত্তর, ‘চার হয়ে যাবে। উইকেট কিপার ধরতে পারবে না...।’ যদিও বল না ধরার মতো একদমই ছিল না। কাজী নুরুল হাসানের মতো দক্ষ গ্লাভসে বল জমে যেত।

ড্রেসিংরুমের সামনে সাকিবের ব্যাটিং অনুশীলনের শুরুটা ছিল খুনসুঁটিতে ভরা। আবার ভিন্নভাবেও ভাবতে পারেন! নেটে শুরুতে খেলবেন চার পেসার হাসান মাহমুদ, রুবেল হোসেন, শরীফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমানকে। সাকিব তখন গার্ড নেওয়ার অপেক্ষায়। আম্পায়ারের ভূমিকায় ব্যাটিং কোচ জন লুইস। কোচের নামটা ঠিক মনে করতে পারছিলেন না সাকিব। পাশে নেটে থাকা শান্তকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ব্যাটিং প্রশিক্ষকের নামটা যেন কি?’ শান্তও মনে করতে সময় নিলেন….অপেক্ষার পর বললেন, ‘লুইস।’ এরপর সাকিবের ডাক, ‘লুইস লেগ অ্যান্ড মিডল স্ট্যাম্প।’

কোচ ঠিকঠাক মতো গার্ড দিয়েছিলেন।কিন্তু রসিকতায় মেতে থাকা সাকিবের খুঁনসুটি তখনও থামে না। সাকিব বলে ওঠেন, ‘আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না, যদিও আমার হাতে আর অপশন নেই।' লুইসের পাল্টা জবাব, ‘তুমি আমায় বিশ্বাস করো না কেন?’

এবার অনুশীলন শুরু। রুবেলের প্রথম বলে সাকিবের উইকেট। বেরিয়ে যাওয়া বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। রুবেল মুখ ভরা হাসি নিয়ে চলে আসেন বল নিতে। সাকিব বলেন, ‘আর আউট করতে পারবি না।’ এরপর সত্যিই রুবেল আর আউট করতে পারলেন না। হাসান মাহমুদ কিংবা শরিফুলরাও সাকিবকে খুব ভোগাতে পারেননি।

পরবর্তীতে চার স্পিনারকে খেলেন বাংলাদেশের প্রাণভোমরা। স্পিনারদের বিপক্ষে কখনো আগ্রাসন দেখিয়েছেন, কখনো সিদ্ধহস্তে টাইমিংয়ে জোর দিয়েছেন। আরেকটি বিষয় ছিল চোখে পড়ার মতো, শেষ কয়েকটি বলে সাকিবের অনুশীলন ছিল পুরোটাই দুই রানের জন্য। সার্কেলের বাইরে বল উড়িয়ে দুই রানের কল দিচ্ছিলেন বারবার। তাইজুলকে একবার মিড অন দিয়ে উড়ান। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ডমিঙ্গো বলছিলেন, ‘ছক্কা’। সাকিবের উত্তর, ‘মোটেও না। এটা দুই রান। উইকেটটা একটু বাঁকানো। ওখানে ফিল্ডার থাকবে। ’

দিনের শেষ বল খেলেন আফিফের। সাকিবের টার্গেট ছিল এক রান। সেটা স্কয়ার কাট করে সাকিব কন্ঠে, ‘নো রান।’ আফিফ বলেন,‘মারতে পারতেন কিন্তু।’ সাকিব বোঝালেন,‘নাহ আমি এক রান নেওয়ার জন্য ব্যাটিং করেছি। অনুশীলন বাদে এমন ভাবনায় ব্যাটিং করা যায় না।’

এক বছর নির্বাসনে থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে ১৯ ও ৪৩ রানের ইনিংস। চট্টগ্রামে সাকিবের জন্য কি বিশেষ কিছু অপেক্ষা করছে? উত্তরটা জানা যাবে সোমবারই। বলে রাখা ভালো, এখানে ২০১৪ সালের নভেম্বরে ৩৭ ইনিংসের পর ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সাকিব। যা বন্দরনগরীতে তার একমাত্র ওয়ানডে সেঞ্চুরি। 

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়