ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

উইকেট হারানোর আফসোস ভুলে লড়াইয়ে বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম থেকে ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০৭:১৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
উইকেট হারানোর আফসোস ভুলে লড়াইয়ে বাংলাদেশ

সকাল ১১টা ৬ থেকে দুপুর ২টা ৪ মিনিট। তিন ঘণ্টার ব্যবধানে সাদমান ইসলাম দুইবার কাঠগড়ায় দাড় হলেন! প্রথমবার ব্যাটিং সঙ্গী নাজমুল হোসেন শান্তকে ভুল ডাকে রান আউট করিয়ে, দ্বিতীয়বার নিজের আউটে!

ওই দুই উইকেট চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন বাংলাদেশের হাহাকার হয়ে রইল। বাকিটা সময় বাংলাদেশ অতিথি ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিপক্ষে লড়াই করেছে ভালোভাবেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়েছে অতিথিরাও। ব্যাট-বলের লড়াই হয়েছে জমজমাট। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ৫ উইকেটে বাংলাদেশের রান ২৪২। সাকিব অপরাজিত ৩৯ রানে। তার সঙ্গী লিটন ২ রানে জীবন পাওয়ার পর করেন ৩৪ রান। দুইজনের জমাট জুটিতে এসেছে ৪৯ রান।

অথচ দিনটি হতে পারতো পুরোটাই বাংলাদেশের। হয়নি সাদমানের ভুলে। আবার ১৪ মাস পর মাঠে নামা সাদমানের ব্যাটেই বাংলাদেশ উড়ন্ত সূচনা পেয়েছিল। দিনের প্রথম বলটির কথাই মনে করা যাক। কেমার রোচের লেন্থ বল ড্রাইভ করে পাঠালেন বাউন্ডারিতে। এরপর দ্বিতীয় ওভারে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে ফ্লিক করে মিড উইকেটের বাইরে পাঠালেন। এভাবেই এগিয়ে যায় তার ব্যাটিং। কিন্তু সঙ্গী তামিম হাল ছেড়ে দেন।

রোচকে দারুণ কভার ড্রাইভে রানের খাতা খোলা তামিম গ্যাব্রিয়েলের বাজে বল বাউন্ডারিতে পাঠান। তবে দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে রোচের বল উইকেটে টেনে আনেন। তখন ব্যাট-প্যাডের বিশাল গ্যাপ। দ্বিতীয় উইকেটে হাল ধরলেন সাদমান-শান্ত। জমাট ব্যাটিংয়ে তাদের মনোবলে চিড় ধরাতে পারেনি ক্যারিবিয়ান বোলাররা। হঠাৎ দুই-একটি বল তাদের চমকে দিলেও চোয়ালবদ্ধ ব্যাটিংয়ে ৪৩ রান যোগ করেন তারা। কিন্তু সাদমানের ভুলে সব ওলটপালট।

মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার ৩৫ বল আগে সাদমানের ভুল ডাকে সাড়া দিয়ে উইকেট বিসর্জন দেন শান্ত। ফাইন লেগে বল পাঠিয়ে দুই রান নেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন সাদমান। শান্তর ইচ্ছে ছিল এক রান নেওয়ার। কিন্তু সঙ্গীর ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে যান। কিন্তু রোচের থ্রো নজরে আসার পর সাদমান ফিরে আসেন। ততক্ষণে মাঝক্রিজে ২৫ রান করা শান্ত। সাদমান ইসলাম হাঁটু মুড়ে বসে আছেন মাথা নিচু করে। পাশ দিয়ে নাজমুল হেসেন শান্তও হেঁটে যাচ্ছেন এক বুক হতাশা নিয়ে। দিনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক মুহূর্ত হয়তো ছিল সেটি।

ঘণ্টা তিনের ভেতরে সাদমান ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়িয়ে তুলে নেন ফিফটি। ক্যারিয়ার এবং ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে যা দ্বিতীয়। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। দিনের সর্বোচ্চ ৫৯ রান করে ফেরেন সাজঘরে।  চা-বিরতিতে যাওয়ার আগে জোমেল ওয়ারিক্যানের বল সুইপ করতে গিয়ে মিস করেন। আম্পায়ার আঙুল তুলে তাকে আউট দিলেন। ৩টি রিভিউ তখনও বাকি। চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু সাদমান সুযোগটি নেননি। অথচ রিপ্লেতে দেখা যায়, বল মিডল স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। 

বল কোথায় পিচ করেছে, কোথায় যেতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা ব্যাটসম্যানের থাকা বাধ্যতামূলক। অবশ্য এ জন্য সিনিয়র মুশফিকের ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তোলা যায়। অপরপ্রান্তে থেকে তার আরও স্পষ্ট ধারণা থাকার কথা। কিন্তু ২৩৫ মিনিট ক্রিজে থাকা সাদমানকে রিভিউ নেওয়ার জন্য জোর করতে পারেননি ৭০ টেস্ট খেলতে নামা মুশফিক।

সেই ওয়ারিক্যানকে শেষ সেশনে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে মুশফিক নিজের ইনিংসের ইতি টানেন ৩৮ রানে। অধিনায়ক মুমিনুলের ব্যাটিং ছিল ভুলে ভরা। অফস্ট্যাম্পের বাইরে একাধিক বল চালাতে গিয়ে পরাস্ত হয়েছেন। গ্যাব্রিয়েলের শর্ট বল গুলো খেলতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছিল তাকে। দুই স্পিনারকে দুইবার উড়াতে গিয়ে ফাঁকা জায়গায় বল ফেলেছেন। শেষমেশ ওয়ারিক্যানকে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ২৬ রানে।

দিনের শেষ সেশন ছিল সাকিব ও লিটনের। তাদের দৃঢ় ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ হাসিমুখে পড়ন্ত বিকেলে মাঠ ছেড়েছে। শেষ সেশনে বাংলাদেশ ছিল সবচেয়ে সাবলীল। প্রথম সেশনে ২.৩৮ রান রেটে ২৯ ওভরে ৬৯ রান তোলে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় সেশনে একই ওভারে বাংলাদেশ পায় ৭১ রান। প্রথম দুই সেশনে হারায় ২টি করে উইকেট। শেষ সেশনে ৩.১৯ রান রেটে রান তোলে ১০২।

৩ উইকেট নিয়ে দিনের সেরা বোলার ওয়ারিক্যান। চার স্পেলে দিন শেষ করেছেন তিনি। অন্যদিকে অফস্পিনার কর্নওয়াল চার স্পেলে ২২ ওভার করে ছিলেন উইকেটশূন্য। লিটনের ক্যাচটা বোনার না ছাড়লে তার উইকেটের খাতায় সাফল্য যোগ হতো। 

সাকিব ও লিটনের ব্যাটে তাকিয়ে বাংলাদেশ। দুই বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান নিজেদের ইনিংস যত বড় করবেন বাংলাদেশের ইনিংস তত বড় হবে। 

ঢাকা/রিয়াদ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়