ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘এভাবে পেসার তৈরি হবে না’

চট্টগ্রাম থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
‘এভাবে পেসার তৈরি হবে না’

স্কোয়াডে ৫ পেসার। অথচ চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নামল শুধুমাত্র মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে। বোলিংয়ে উন্নতি করে মোস্তাফিজ জায়গা করে নিয়েছেন দলে। কিন্তু উপেক্ষিত টেস্ট দলের নিয়মিত পারফর্মার আবু জায়েদ রাহী।

রাহীর জন্য মন পুড়ছে বিকেএসপির ক্রিকেট পরামর্শক নাজমু‍ল আবেদীন ফাহিমের। বিসিবির সাবেক এ কোচের মতে, যেভাবে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মাটিতে টেস্ট খেলছে তাতে পেসাররা এ ফরম্যাটে খেলতে আগ্রহ হারাবে এবং দীর্ঘসময়ের জন্য এসব পরিকল্পনা সুফল বয়ে আনবে না।

রাইজিংবিডিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেস বোলিং নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম।   

টেস্টের জন্য পেস বোলিং উইকেট কি সত্যিই তৈরি হচ্ছে? কেন আমরা পেসাারদের সুযোগ দেই না? 

নাজমুল আবেদীন ফাহিম: আমাদের যখন একটা টেস্ট শেষ হয়, আমরা উপলব্ধি করি যে আমাদের পেস বোলিং শক্তি খুব বেশি না। তখন আমরা চিন্তা ভাবনা করি পেস বোলিং নিয়ে কাজ করব। পেস বোলিং বান্ধব পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করব। এটা আমরা চিন্তা করি। এটা নিয়ে কতটুকু কাজ করি সেটাই প্রশ্ন। পরে আরেকটি টেস্ট যখন আসে আমরা আস্থাশীল হতে পারি না, কারণ আমরা এর মধ্যে যথেষ্ট ভালো কাজ করিনি। আস্থা না থাকায় আমরা আগের কৌশলে চলে যাই। সেই একই স্পিন উইকেট বানাই এবং তাদেরকেই ব্যবহার করি। এরকম একটা চক্র চলেই আসছে আমাদের।

২০১৮ সালেও যেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসল সেবার চার স্পিনার নিয়ে খেলল বাংলাদেশ। এক টেস্টে মোস্তাফিজ ছিল, মাত্র ৪ ওভার করল। এভাবে কি পেসার তৈরি করা যাবে?

নাজমুল আবেদীন ফাহিম: খুব কঠিন। এমনিতেই ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির কারণে টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাপারে খেলোয়াড়দের আগ্রহ কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ওরা যখন দেখবে টেস্টে নিজের হোমগ্রাউন্ডেই খেলার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না, তখন তাদের আগ্রহটা কমতে পারে আরও। তখন তাঁরা টেস্ট বাদ দিয়ে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডের দিকে বেশি মনোযোগী হবে। কারণ এখানে ক্যারিয়ার ভালো হয়, আয় ভালো হয়। টেস্ট ক্রিকেটে বোলিংটা অনেক কষ্টকর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি থেকে। পরিশ্রম করার পর যখন সুযোগ পাবে না তারা একটু হতাশ হবে, নিরাশ হবে। এটার জন্য তারা টেস্ট ছাড়া অন্য ফরম্যাটে মনোযোগী হবে। এটার জন্য ভবিষ্যতে আমাদের টেস্ট উপযোগী বোলার আস্তে আস্তে কমতে থাকবে।

যেভাবে দেশের মাটিতে আমরা স্পিন উইকেটে এক ঝাঁক স্পিনার নিয়ে খেলছি এটার কোনো দীর্ঘ মেয়াদে কি সুফল আছে?

নাজমুল আবেদীন ফাহিম: না না মোটেই নেই। এই সুযোগটা থাকবে না কিন্তু। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টির (ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ) এ সব দেশের খেলোয়াড়রা এই উপমহাদেশে খেলতে আসে। ওদের মূল দলের অনেক খেলোয়াড় নেই, যাদের এই উপমহাদেশে খেলার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। যেটা হবে ভবিষ্যতে এ সব দলও এমন স্পিনার নিয়ে আসবে যারা আমাদের ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে ভালো একটা রোল প্লে করতে পারবে। আজ আমরা দেখেছি ওদের একজন স্পিনার (ওয়ারিক্যান) তিনটা উইকেট নিয়েছে। আমরা যদি স্পিন উইকেট বানাই ওরা স্পিনার দিয়েই আমাদের কাউন্টার দেবে। ভবিষ্যতে পেস-স্পিনের ভারসাম্য না আসে তাহলে ভুগতে হবে। আমাদেরকে যথেষ্ট চিন্তা করতে হবে এই ব্যাপারটা নিয়ে।

জয়ের চিন্তা করে বলেই কি এসব চিন্তা করা ঠিক। পেসাররা কেন জয় এনে দিতে পারবে না? এই আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিটা কোথায়?

নাজমুল আবেদীন ফাহিম: এবার আমরা তাদের (পেসারদের) বোলিং যেভাবে দেখেছি তাতে আমরা আশা করতেই পারি। পেস বোলারদের মানের উন্নয়ন ঘটেছে। সেটা দেখেই আমরা আশাবাদী ছিলাম এবার যদি পেস বোলাররা খেলে খুব একটা খারাপ করবে না এমন একটা আশা ছিল আমাদের। কিন্তু তাদের দেখার সুযোগ আমরা পেলাম না। আমাদের দলে চারজনের জায়গায় তিন স্পিনার থাকতো তাহলে বিশাল কোনো পরিবর্তন হতো না। আমরা যদি দুইজন পেস বোলার খেলাতাম তাতে কী হতো, আমরা বুঝতে পারতাম যে আমাদের পেস বোলারদের অবস্থান কোথায়। এমন একটা দলের বিপক্ষে খেলা হচ্ছে যারা পূর্ণশক্তি নিয়ে আসেনি, এটা বলতেই হয় তারা একটু দুর্বল। যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্বল বলে কিছু নেই। সবাইকে সমীহ করতেই হবে। এমন একটা সুযোগে আমরা আরও একজন পেস বোলার নিয়ে নামতে পারতাম। হোমগ্রাউন্ডে আমরা এতদিন ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছি, আমাদের আত্মবিশ্বাস শক্তিশালী না হওয়া, সাহস না বাড়া দুঃখজনক।

টেস্টে আমাদের প্রধান বোলার হিসেবে রাহীকে ধরা হয়, কিন্তু দলে নেওয়া হয়েছে মোস্তাফিজকে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

নাজমুল আবেদীন ফাহিম: মোস্তাফিজ সম্প্রতি যে বোলিং করেছে এটা ঠিক আছে, যথেষ্ট ভালো বোলিং করেছে। কিন্তু রাহীর ব্যাপারটা খুবই হতাশজনক। আমরা ভালো একজন বোলারকে কিছুটা নিরাশ করলাম। সে হয়তো আশা করছিল সুযোগ পাবে। পুরোনো রেকর্ড তার হয়েই কথা বলে। একমাত্র তাকেই আমরা দেখেছি একটা মান বজায় রাখতে টেস্ট ক্রিকেটে। এটা তার জন্য একটা হতাশজনক অভিজ্ঞতা হবে। আমি আশা করব সে নিরাশ হবে না, সে নিজেকে ধরে রাখবে এবং সামনে যখন সুযোগ পাবে ভালোভাবে খেলবে। এটা যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্যই কষ্টের।

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/রিয়াদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়