ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হৃদয় ছোঁয়া এক সেঞ্চুরি

চট্টগ্রাম থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৩, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০৮:০৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
হৃদয় ছোঁয়া এক সেঞ্চুরি

জোমেল ওয়ারিকানের লেন্থ বল সুইপ করে ফাইন লেগে পাঠিয়ে দৌড় মেহেদী হাসান মিরাজের। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তার উল্লসিত চিৎকার। রান নেওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছেন, সঙ্গে মুখে চড়া হাসি। চোখে মুখে বড় কিছু পাওয়ার আনন্দ। ব্যাট উঠিয়ে ক্রিজের মাঝখানেই উদযাপন শুরু। ওই রানে ৯৯ থেকে মিরাজ পৌঁছে গেলেন তিন অঙ্কে, টেস্ট অঙ্গনে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার প্রথম। দ্বিতীয় রানটি নেওয়ার সুযোগও হাতছাড়া করেননি।

দৌড়ে প্রান্তবদলের পর হেলমেট খুলে ব্যাট উঁচিয়ে ধরলেন। ড্রেসিংরুমের বাইরে গ্যালারিতে বসে তার ব্যাটিং দেখেছেন কোচিং স্টাফ। সবাই দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানালেন ইনিংসের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানকে। এরপর সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মিরাজ দিলেন সিজদাহ।

ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতক এভাবেই উদযাপন করেন মিরাজ। আট নম্বরে নেমে ১৬০ বলে এলো শতক। ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত থামে ১০৩ রানে। আটে নেমে এর আগে বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খালেদ মাসুদ পাইলটের ১০৩, ২০১০ সালে নিউ জিল্যান্ডের হ্যামিল্টনে মাহমুদউল্লাহর ১১৫ ও ২০১৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সোহাগ গাজীর ১০১ রান।

মিরাজের ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে নেই কোনও প্রশ্ন। দল যখন খাদের কিনারায়, তখন অনেকবারই ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেছেন। সাফল্যে ভাসিয়েছেন। তবে ব্যক্তিগত মাইলফলক ছোঁয়া হয়নি। এবার বন্দরনগরীতে মিরাজ দেখালেন কারিশমা।

দীর্ঘদিন পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেছে বাংলাদেশ। টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকলেও কেউ বড় রান পাননি। সাদমান ইসলাম ও সাকিব আল হাসান ফিফটি করলেও বড় ইনিংস খেলার আক্ষেপ নিয়ে তারা ফেরেন সাজঘরে। কিন্তু মিরাজ জানতেন কোথায় যেতে হবে? দলের ঠিকানা কোথায়?

নিজেও হতাশ হননি। হতাশা বাড়াননি দলের। তিন অঙ্কের মাইলফলক ছুঁয়ে মিরাজ দলের রান নিয়ে গেছেন চূড়ায়। ৪৩০ রানে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস। যেখানে ১০৩ রানের ঝকঝকে ইনিংস উপহার দিয়ে মিরাজ আরও উপরে ব্যাটিংয়ের দাবি জানিয়ে রাখলেন।

লিটন দাশ ৩৮ রানে আউট হওয়ার পর সাকিবকে সঙ্গ দিতে নামেন মিরাজ। তার ব্যাটিং পজিশন আট। নির্বাসন কাটিয়ে ক্রিকেটে ফেরা সাকিবের সঙ্গে তার জুটির রান ৬৭। সাকিব ৬৮ রানে সাজঘরে ফিরলেন, যে জুটিতে মিরাজ অবদান ৩৮। সঙ্গী ফিরলেও তিনি হাল ছাড়েন না। তাইজুল ইসলামের সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি গড়ায় ২২ ও নাঈম হাসানের সঙ্গে ৫৭ রানের জুটি গড়তে রাখলেন ৩২ রানের অবদান।

নাঈমের সঙ্গে জুটি গড়ার পথে মিরাজ জীবন পেলেন কর্নওয়ালের বলে, ৮৫ রানে। এক ওভার পর নাঈমের উইকেট তুলে নেন এনক্রুমাহ বোনার। শেষ উইকেটে মিরাজের সঙ্গী মোস্তাফিজুর রহমান। ৩ বল খেলে আস্থার প্রতিদান দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। পরের ওভারে মিরাজ পেয়ে যান শতক।

পাঁচ উইকেটের অপেক্ষায় থাকা ওয়ারিকানকে কাট করে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে পাঠিয়ে ৯৩ থেকে ৯৭ রানে পৌঁছান ডানহাতি ব্যাটসম্যান। পরের বল সুইপার কাভারে ঠেলে আরও ২ রান। তৃতীয় বল ডটের পর চুতর্থ বলে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যেটা মিরাজ কখনও ভুলবেন না, ভুলবে না বাংলাদেশও।

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়