ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সৌরভে জয়ের সুবাস

চট্টগ্রাম থেকে ইয়াসিন হাসান: || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০৯:৩৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
সৌরভে জয়ের সুবাস

ভিভিএস লক্ষ্মণ বলেছিলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি সে (মাহেলা জয়াবর্ধনে) এখানে (সিংহলিজ ক্রিকেট গ্রাউন্ড) যতবার ফিরবে, ততবার সেঞ্চুরি করবে।’ কলম্বোর ‘দারুচিনি বাগানের’ ক্লাব এসএসজিতে মাহেলা যতবার ফিরেছেন ততবার সেঞ্চুরি করেননি ঠিকই, কিন্তু যে ১১বার করে দেখিয়েছেন, নির্দিষ্ট এক ভেন্যুতে আর কোনো ক্রিকেটার কখনো পারেননি। বাংলাদেশের মুমিনুল হক সৌরভ কী তার রেকর্ডে চোখ রাঙাচ্ছেন!

২০১৪ সালে মাহেলা অবসরে গেলেন এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডের মুকুট মাথায় নিয়ে। এ তালিকায় যাঁরা মাহেলার পর আছেন তাঁরা কেউ-ই নেই ২২ গজে, শুধুমাত্র মুমিনুল ছাড়া। ব্র্র্যাডম্যান (৯), ক্যালিস (৯), সাঙ্গাকারা (৮), ক্লার্ক (৭) । মুমিনুল শনিবার ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি পেয়েছেন। যা জহুর আহমেদে তার সপ্তম। মুমিনুল কী তবে জয়াবর্ধনের রেকর্ড ছাপিয়ে যাবেন? উত্তরটা জানা যাবে কয়েক বছরের ভেতরেই।

তবে আজকের তিন অঙ্কে মুমিনুল হয়েছেন বাংলাদেশের সেরা। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির কীর্তি তার ব্যাটেই গড়া। তামিমের ৯টিকে ছাপিয়ে মুমিনুল এখন সেঞ্চুরির রেকর্ডে ভাস্বর।

তার দ্যুতি ছড়ানো সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লিডের পাহাড়ে বাংলাদেশ। ১৭১ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ২২৩ রান। সেখানে মুমিনুলের ব্যাট থেকে আসল অর্ধেকের বেশি রান, ১১৫। অতিথিরা টার্গেট পেল ৩৯৫ রানের। চতুর্থ দিন শেষে তাদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১১০ রান।

১১৫ রানের ইনিংস খেলার পথে মুমিনুল সাদা পোশাকে পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে ৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। দ্রুততম ৩ হাজার রানে তামিমের রেকর্ডে ভাগও বসিয়েছেন বাঁহাতি মিডল অর্ডার।

দীর্ঘদিন পর মাঠে ফিরে আজকের ইনিংসটি যেন তার আরেকটি মাস্টার ক্লাস। দিনের শুরুতে মুশফিকুর রহিমকে হারিয়ে দল খানিকটা চাপে পড়েছিল। কিন্তু তার ব্যাটে বাংলাদেশকে বিপদে পড়তে হয়নি। ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো ধৈর্য্য নিয়ে ইনিংসটি বড় করেছেন। সঙ্গে বাজে বল শাসন করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন। চওড়া হাসি ছিল তার মুখে। সেঞ্চুরি আসে ১৭৩ বলে, যা তার ক্যারিয়ারের মন্থরতম। এর আগে ফিফটি তুলেছিলেন ৮৪ বলে। ৯ চারে মুমিনুল খেলেছেন দ্যুতিময় স্ট্রোক সমৃদ্ধ ইনিংস।

মুমিনুলের সেরা হওয়ার দিনে লিটন রানে ফিরেছেন। ৫ বাউন্ডারিতে ৫৯ রান তুলে আগ্রাসন দেখান। তারও চেষ্টা ছিল ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়ার। কিন্তু ওয়ারিক্যানের বলে তার রিভার্স সুইপ পয়েন্টে মায়ার্সের হাতে জমে যায়। প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের বিদায়ের পর অধিনায়ক মুমিনুল বেশিক্ষণ সময় নেননি ইনিংস ঘোষণা করতে। লিড যখন ৪০০ ছুঁইছুঁই তখন অতিথিদের চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামান মুমিনুল।

শেষ বিকেলটা ছিল মেহেদী হাসান মিরাজময়। ডানহাতি অফস্পিনার ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে রেখেছেন। তাকে তিনবার সুইপে বাউন্ডারি পাঠিয়েছিলেন জন ক্যাম্পবেল। প্রতিশোধ নিতে সময় নেননি অফস্পিনার। একটু ফুলার লেন্থের বল ভেতরে ঢুকিয়ে এলবিডব্লিউ করান। এরপর ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটের উইকেট নেন মিরাজ। শর্ট লেগে দারুণ ক্যাচ নেন ইয়াসির আলী রাব্বী। তার শেষ শিকার মোসলে। দিনের শেষ ঘণ্টা অবশ্য প্রতিরোধ গড়েন মায়ার্স ও বুনার। প্রতি আক্রমণে ১৫.৪ ওভারে ৫১ রান তুলে দিন শেষ করেন তারা।

৩৯৫ রান তাড়া করে জয়ের জন্য ইতিহাস গড়তে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এজন্য করতে হবে আরও ২৮৫ রান। বাংলাদেশের প্রয়োজন ৭ উইকেট। এর আগে মাত্র চারবার ৩৯৪ রানের বেশি রান তাড়া করে জয়ের ঘটনা ঘটেছে। সর্বোচ্চ ৪১৭ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড অবশ্য এই ওয়েস্ট ইন্ডিজে দখলে। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তবে ওই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও এই ওয়েস্ট ইান্ডিজের ভেতরে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।

চট্টগ্রামে জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ। মুমিনুল হক সৌরভের ব্যাট দিয়েছে বড় পুঁজি। বল হাতে মিশন ফিনিশ করার অপেক্ষা মিরাজ-তাইজুলদের।

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়