ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ধুমকেতু নয়, ধ্রুবতারা হয়ে থাকতে চান মায়ার্স

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২০:২৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ধুমকেতু নয়, ধ্রুবতারা হয়ে থাকতে চান মায়ার্স

‘আমি সত্যিই মনে করতে পারছি না ম্যাচে কী হয়েছিল! ম্যাচ শেষ হওয়ার পর সবকিছু ঘোলা লাগছিল। আমি ওই মুহূর্তটা ব্যাখ্যা করতে পারবো না। আমার সতীর্থ ও কোচদের কাছ থেকে অভিনন্দন পাচ্ছিলাম। ড্রেসিংরুমে ম্যাচ জয়ের পর আমরা পর্যালোচনা করেছিলাম। প্রত্যেকে অভিষিক্তদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছিল। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না আমি কী করেছি। হয়তো আগামীকাল (সোমবার) সকালে ঘুমের পর আমি অনুধাবন করতে পারবো।’- সাগরপাড়ের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৩৯৫ রানের লক্ষ্যে অপরাজিত ২১০ রানের মহাকাব্য রচনা পর এভাবেই জয়ের মুহূর্তের কথা রোমন্থন করছিলেন কাইল মায়ার্স।

অভিষেক টেস্টে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো, এশিয়ার মাটিতে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়; বার্বাডোজের বরপুত্রের ২১০ রানে রেকর্ড বই হয়েছে ওলটপালট। নিজের কীর্তিতে দারুণ খুশি মায়ার্স। সঙ্গে জানিয়ে রাখলেন বড় কিছু পাওয়ার ইচ্ছা থেকেই এসেছে তার ডাবল, ‘আমি খুবই গর্ববোধ করছি। এটা আমার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রান এবং সবচেয়ে লম্বা ইনিংস। শুনতে হাস্যকর লাগলেও, ড্রেসিংরুমে জানতে চাওয়া হয়েছিল আমাদের ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী? আমি আমার ১৭৫ রানের ইনিংস নিয়ে কথা বলেছিলাম। জানিয়ে রেখেছিলাম, সেই রান ছাপিয়ে যেতে চাই। সারারাত আমার ঘুম হয়নি। মাঠে নেমে দুটি বল খেলার পর আমার অনুভব হয়েছে আমার পক্ষে বড় কিছু করা সম্ভব। নিজেকে সেভাবে মানিয়ে নিয়েছি। কঠোর পরিশ্রম করেছি। তাতে ফল পেয়েছি।’

দীর্ঘতম ইনিংস খেলার পথে মায়ার্স পাশে পেয়েছিলেন আরেক অভিষিক্ত এনক্রুমাহ বোনারকে। যিনি ৮৬ রানের ইনিংস খেলে ফিরেছেন সাজঘরে। তাদের ২১৬ রানের জুটি গড়ে দিয়েছিল জয়ের ভিত। তাতে সব পাওয়া হয়ে যায় অতিথিদের। দুজনের ব্যাটিংয়ের রসায়ন সম্পর্কে জানাতে গিয়ে মায়ার্স বলেন, ‘খুব স্বাভাবিক ভাবনা ছিল দুজনের। আমরা মাঠে সময়টা উপভোগ করছিলাম। যেহেতু আমাদের দুজনের প্রথম টেস্ট, আমরা চাচ্ছিলাম মাথা ঠান্ডা রেখে ব্যাটিং করি। আমরা স্কোরবোর্ডে চোখ রাখছিলাম না। আমাদের বিশ্বাস ছিল যদি আমরা ধীরস্থির হয়ে খেলি, দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবো। আমরা দুজন দুজনকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলাম, ক্রিজে থাকতে হবে এবং রান তুলতে হবে।’

মায়ার্সের অতিমানবীয় ও বোনারের দায়িত্বশীলতায় এশিয়ার মাটিতে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তার এক ডাবল সেঞ্চুরির পেছনে রয়েছে অজস্র পরিশ্রম। তাইতো নির্দিষ্ট কাউকে ইনিংসটি উৎসর্গ করেননি, ‘এই ইনিংসটি শুধু নির্দিষ্ট করে একজনের প্রাপ্য নয়। আমার জীবনের পেছনে বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমার পরিবার, বন্ধু, কোচ, খেলোয়াড় সবাই আমাকে সাহায্য করেছে। তাদের সবার জন্য এ ইনিংস।’

অভিষেকে বাজিমাত করে হারিয়ে যাওয়া ক্রিকেটারদের সংখ্যা কম নয়। প্রত্যাশা ও সামর্থ্য অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি অনেকে। আবার অনেকেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ২২ গজ শাসন করেছেন। মায়ার্স কোন দলে যাবেন? উড়ন্ত সূচনা করলেও বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মাটিতে পা রাখছেন। সোজাসুজি বললেন, ‘আমি এ খেলায় এখনও ছাত্র। প্রতিটি মুহূর্তে নতুন কিছু শিখছি। উন্নতি করা, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া সব সময়ই ভালো। আমাকে পরের ম্যাচে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। এক ইনিংস খেলেই হারিয়ে যেতে চাই না।’

ধুমকেতু হয়ে মায়ার্স এসেছেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট আকাশে, ধ্রুবতারা হয়ে টিকে থাকতে চান অনন্তকাল।

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়