ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অস্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করলো বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৭:৩৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
অস্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করলো বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৪০৯ রানের জবাবে নেমে প্রথম ইনিংসে পর্যদুস্ত বাংলাদেশ। ১০৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অস্বস্তি নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে স্বাগতিকরা। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ- প্রথম ইনিংস: ৩৬ ওভারে ১০৫/৪ (মুশফিক ২৭*, মিথুন ৬*)

আউট: সৌম্য ০, শান্ত ৪, মুমিনুল ২১, তামিম ৪৪

ওয়েস্ট ইন্ডিজ- প্রথম ইনিংস: ১৪২.২ ওভারে ৪০৯ (কর্নওয়াল ৪*)

আউট: ক্যাম্পবেল ৩৬, মোসলে ৭, ব্র্যাথওয়েট ৪৭, মায়ার্স ৫, ব্ল্যাকউড ২৮, বোনার ৯০, ডা সিলভা ৯২, আলজারি ৮২, ওয়ারিকান ২, গ্যাব্রিয়েল ৮।

মিথুনের দৃঢ়তা

তামিম ইকবাল সাজঘরে ফিরে যাচ্ছেন। মোহাম্মদ মিথুন এগিয়ে যাচ্ছেন ২২ গজে। তার ওপর রাজ্যের চাপ। খেলতে নেমেছেন সাকিবের জায়গায়। আবার এমন এক অবস্থায় মাঠে গেছেন যখন বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৭১। ফলো অন এড়াতে টার্গেট ২০৯ রান!

মুশফিককে সঙ্গ দিলেন মিথুন। লড়ে গেলেন দিনের বাকিটা সময়। তাদের জুটি ক্রিজে কাটাল ৮৯ মিনিট, ১২২ বল। জুটিতে এলো মাত্র ৩৪ রান । তাতে মিথুনের অবদান মাত্র ৬। মাঠে নামার সময় হয়তো ভেবে রেখেছিলেন দাঁতে দাঁত চেপে টিকে থাকবেন, লড়াই করবেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। তেমনি চোয়ালবদ্ধ তার ব্যাটিং। 

অতিথি বোলারদের একটুও সুযোগ দিলেন না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বল দেখে খেলেছেন। তাতে মনোবল একটু হলেও শক্ত হয়েছে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। প্রথম রান পেতে খেলেছেন ১৬ বল। দ্বিতীয় রানের জন্য অপেক্ষা আরও ২১ বল। রান পেতেই হবে এমন ভাবনা না থাকায় দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাটিং করে গেছেন মিথুন। তার ব্যাট থেকে তৃতীয় দিন ভালো কিছুর আশা করাই যায়। অপরপ্রান্তে মুশফিকুর রহিম তো আছেন-ই। 

শেষটায় খানিকটা প্রতিরোধ

মুশফিক ও মিথুনের ব্যাটে শেষ দেড় ঘণ্টায় কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। এর আগে দ্রুত উইকেট হারালেও দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ঠান্ডা মেজাজের ব্যাটিংয়ে শেষ বিকেলে খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে বাংলাদেশ। ১২২ বলের জুটিতে রান এসেছে ৩৪। যেখানে মুশফিকের অবদানই ২৮। মিথুন করেছেন ৬ রান। দলের রান ৪ উইকেটে ১০৫। তবুও অস্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। ফলো অন এড়াতে যেতে হবে ২০৯ রানের ঠিকানায়। আর ম্যাচে শক্তিভাবে ফিরে আসতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যেতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৪০৯ রান। কঠিন হলেও অসম্ভব কিন্তু নয়। 

শুরুর ধাক্কা সামলে নেওয়ার পর মুমিনুলের বিদায়

মাত্র ১১ রানে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের কাছে দুটি উইকেট হারানোর ধাক্কা বাংলাদেশ কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪০৯ রানের প্রথম ইনিংসের জবাবে নেমে সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এরপর ক্রিজে নামেন মুমিনুল হক। তামিম ইকবালের সঙ্গে পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি গড়ে শুরুর ক্ষত সারানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু মুমিনুলকে বিদায় নিতে হলে ৫৮ রানের জুটি গড়ে। ৩৯ বলে চারটি চারে ২১ রান করে রাকিম কর্নওয়ালের বলে জশুয়া ডা সিলভার ক্যাচ হন স্বাগতিক অধিনায়ক।

গ্যাব্রিয়েলের আঘাতে শুরুতেই চাপে বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসের ৪০৯ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতেই বিপদে বাংলাদেশ। এই ডানহাতি ফাস্ট বোলার তার প্রথম দুই ওভারে সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্তকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়েছেন। চার বল খেলে রানের খাতা না খুলে মিড উইকেটে কাইল মায়ার্সকে ক্যাচ দেন সৌম্য।

গ্যাব্রিয়েল তার দ্বিতীয় ওভারে শিকার করেন শান্তকে। ২ বল খেলে ৪ রান করে গালিতে এনক্রুমাহ বোনারের ক্যাচ হন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান। ১১ রানে স্বাগতিকরা হারায় ২ উইকেট।

উইন্ডিজকে ৪০৯ রানে থামালো বাংলাদেশ

ব্যক্তিগতভাবে আফসোস থাকতে পারে এনক্রুমাহ বোনার, জশুয়া ডা সিলভা ও আলজারি জোসেফের। সেঞ্চুরির বেশ কাছে গিয়েও তারা সফল হননি। তবে তাদের ব্যর্থতার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ হয়েছে। ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ৪০৯ রান।

২৫ রানের ব্যবধানে শেষ চার উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ডা সিলভা ও আলজারির শতাধিক রানের জুটিতেই চারশ পার করার পথে ছিল তারা। কিন্তু ৯২ রানে ডা সিলভার বিদায়ে উইন্ডিজের স্কোর দাঁড়ায় ৩৮৪/৭। এই প্রতিরোধ ভাঙার পর আলজারিও টিকতে পারেননি। ৮২ রানে আউট হন আবু জায়েদ রাহীর পরে। ডানহাতি পেসার তার পরের ওভারে ফেরান জোমেল ওয়ারিকানকে। ডা সিলভাকে মাঠছাড়া করা তাইজুল ইসলাম ৮ রানে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান। তাতে শেষ হয় সফরকারীদের ইনিংস।

বাংলাদেশের পক্ষে চারটি করে উইকেট নিয়ে সফল বোলার রাহী ও তাইজুল।

রাহীর জোড়া আঘাতের পর চারশ ছাড়িয়ে উইন্ডিজ

সপ্তম উইকেটে শতরানের জুটি ছাড়ানোর পর বিপদে পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাত্র ১৪ রানে তিন উইকেট হারিয়েছে তারা। যদিও স্কোর চারশ পার করে নিরাপদ অবস্থানে আছে সফরকারীরা।

জশুয়া ডা সিলভা যে ওভারে আউট হলেন, তার পরের ওভারে বিদায় নিলেন আলজারি জোসেফ। আবু জায়েদ রাহীর বলে লিটন দাশের কাছে ক্যাচ হওয়ার আগের দুই বলে ৬ ও ৪ হাঁকান তিনি। ১০৮ বলে ৮ চার ও ৫ ছয়ে সাজানো ছিল তার ৮২ রানের গতিময় ইনিংস। রাহী তার পরের ওভারে ওয়ারিকানকেও একইভাবে মাঠছাড়া করেন। মাত্র ২ রান করে উইন্ডিজ ব্যাটসম্যান ক্যাচ দেন লিটনকে।

ডা সিলভাকে সেঞ্চুরিবঞ্চিত করে তাইজুলের ‘সেঞ্চুরি’

এনক্রুমাহ বোনারের পর জশুয়া ডা সিলভাও সেঞ্চুরি থেকে অল্প একটু দূরে থাকতে আউট হলেন। তাকে ৮ রানের আক্ষেপে রেখে বোল্ড করেন তাইজুল ইসলাম। তাতে দেশের মাটিতে শততম টেস্ট উইকেটটি শিকার করলেন বাংলাদেশের স্পিনার। 

১৮৭ বলে ১০ চারে ৯২ রান করেন ডা সিলভা। আর সপ্তম উইকেটে আলজারি জোসেফকে নিয়ে ১১৮ রানের জুটি গড়েন, যা উপমহাদেশে ভারতের বাইরে তাদের সর্বোচ্চ। এর আগে ভারতের বাইরে তাদের সপ্তম কিংবা নিচের দিকের উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি ছিল ৮১ রানের।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য পূরণ

প্রথম দিনের খেলা শেষে এনক্রুমাহ বোনার বলেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে সাড়ে তিনশর বেশি রান করতে চায়। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে সফরকারীদের। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করতে ব্যর্থ হলেও ক্রিজে প্রতিরোধ গড়েছেন আলজারি জোসেফ ও জশুয়া ডা সিলভা।

ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশনে বোনারকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু এনেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তা ঠিকই সামাল দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ডা সিলভা সেঞ্চুরির পথে, আর ৮৬ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি করেছেন আলজারি। দুজনের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটিতে লাঞ্চের পরও অপ্রতিরোধ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

অস্বস্তি নিয়ে লাঞ্চে বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের দুই বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানের একজন ছিলেন এনক্রুমাহ বোনার। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের চেষ্টাতেও সেঞ্চুরি হলো না তার। ৭৪ রানে অপরাজিত খেলতে নামা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে ৯০ রানে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ।

গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি পেলেও স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ। জশুয়া ডা সিলভার অপরাজিত হাফ সেঞ্চুরিতে ম্যাচে চালকের আসনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোনারের সঙ্গে ৮৮ রানের জুটি গড়ার পর আলজারি জোসেফের সঙ্গে ৫৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে অবদান রেখেছেন ডা সিলভা। ৭০ রানে অপরাজিত তিনি, অন্য প্রান্তে ৩৪ রানে খেলছেন আলজারি। দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশনে এক উইকেটের বিনিময়ে ১০২ রান করেছে সফরকারীরা। ৫ উইকেটে ২২৩ রানে দিন শুরু করেছিল তারা।

ডা সিলভার হাফ সেঞ্চুরি

নিউ জিল্যান্ডে অভিষেক ম্যাচে ৫৭ রান করেছিলেন জশুয়া ডা সিলভা। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে আরেকটি হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। এনক্রুমাহ বোনারের উইকেট যাওয়ার দুই ওভার পর মেহেদী হাসান মিরাজকে চার মেরে ৮৬ বলে দ্বিতীয় ফিফটি উদযাপন করেন ডা সিলভা।

এবার ১০ রানের আফসোস বোনারের

চট্টগ্রাম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও সেঞ্চুরি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন এনক্রুমাহ বোনার। ১৪ রানের আফসোস নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি তাইজুল ইসলামের শিকার হয়ে। ঢাকা টেস্টেও আক্ষেপে পুড়লেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডানহাতি ব্যাটসম্যান। এবার ১০ রানের জন্য হলো না সেঞ্চুরি।

দিনের ১১তম ওভারের তৃতীয় বলে মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার হয়েছেন বোনার। ২০৯ বলে ৭ চারে ৯০ রান করে মোহাম্মদ মিথুনের ক্যাচ হন। তাতে ভাঙে জশুয়া ডা সিলভার সঙ্গে ৮৮ রানের জুটি।

প্রথম সেঞ্চুরির সামনে বোনার

চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষিক্ত এনক্রুমাহ বোনার ১৪ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি। আউট হয়েছিলেন ৮৬ রানে। এবার সেই আক্ষেপ কাটানোর পথে তিনি। বাংলাদেশের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। জীবনের প্রথম দুটি টেস্টেই ফিফটি হাঁকিয়ে ৭৪ রানে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেছেন বোনার।

বাংলাদেশ চায় তিনশর মধ্যে রাখতে, উইন্ডিজের চাওয়া ৩৫০

ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের লড়াই হয়েছে সমানে সমান। শুক্রবার নতুন দিনে দুই দলই নামছে একে অপরকে ছাড়িয়ে যেতে। দিনের খেলা শেষে স্বাগতিক পেসার আবু জায়েদ রাহী বলেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনশর বেশি রান করতে দিতে চায় না বাংলাদেশ। আর উইন্ডিজের পক্ষে কথা বলেন দিনের সেরা ব্যাটসম্যান এনক্রুমাহ বোনার। জশুয়া ডা সিলভার সঙ্গে ৪৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিন শেষ করা এই ডানহাতি বলেছেন, সাড়ে তিনশ রান স্কোরবোর্ডে রাখতে চান তারা।

৭৪ রানে বোনার ও ২২ রানে ডা সিলভা শুক্রবারের খেলা শুরু করেছেন। আগের দিন অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের ৪৭ রান দারুণ শুরু এনে দেয় সফরকারীদের। আরেক ওপেনার জন ক্যাম্পবেল করেছিলেন ৩৬ রান।

উইন্ডিজের পাঁচ উইকেটের দুটি করে নিয়েছেন রাহী ও তাইজুল ইসলাম।

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়