ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ফিরে দেখা ক্রাইস্টচার্চ 

সালেক সুফী, মেলবোর্ন থেকে:  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০১, ২২ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৭:৪৬, ২২ মার্চ ২০২১
ফিরে দেখা ক্রাইস্টচার্চ 

বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা অর্জনের সূবর্ণজয়ন্তীর মার্চ মাসে চলমান নিউ জিল্যান্ড সফরের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি আমরা যেভাবে হেরেছি সেটা এখন ইতিহাসের পাতায়। সেই পরাজয় নিয়ে আঁকড়ে থাকলে হতাশা বাড়বে।

আমাদের ভুল থেকে সঠিক শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে নতুন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। সিরিজে এখনো আরো দুটি ওয়ানডে ম্যাচ এবং তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বাকি আছে। আমি মনে করি এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যেভাবে মাত্র ১৩১ রান করে ডানোডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেলো এটা বাংলাদেশের সাধ্য আর সামর্থ্যের সীমানা নয়। এই প্রতিবেদনটিও ম্যাচটির ব্যাবচ্ছেদ নয়।

ফিরে দেখতে চাই ছবির মতো মনোরম রূপের পসরা সাজানো ক্রাইস্টচার্চ নগরীর হ্যাগলি ওভালে। বাংলাদেশের অর্জন যদি কিছু থেকেই থাকে সেখান থেকে কী অনুপ্রেরণা পেতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট।

বরাবর বলেছি আবারো বলছি চৌকস নিউ জিল্যান্ড এই মুহূর্তে ওদের ক্রিকেট ইতিহাসের হয়তো সেরা দল। আবার নিজেদের মাঠে খেলা হলে ওদের হারানোর ক্ষমতা বা স্বক্ষমতা কোনো দলের আছে বলে সন্দিহান বেশি আরো। বাংলাদেশের আবেগী ক্রিকেট আমাদের নিয়ন্ত্রিত ভাবে উঁচু আশা পোষণ করতে। খাঁটি কথা হলো জয় প্রায় অসম্ভব। তবে গৌরব উজ্জ্বল ক্রিকেটে অঘটন ঘটে থাকে। সেই আশায় বুক বাঁধা।

নিউ জিল্যান্ডের অন্যান্য যে কোনো শহরের চেয়ে ক্রাইস্টচার্চের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিবিড় সম্পর্ক আছে। এই শহরে গত সফরে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা মর্মান্তিক। মহান আল্লাহ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে রক্ষা করেছেন। শহরের মানুষ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিদের জন্য আন্তরিক সমবেদনা আছে। এবারেও বাংলাদেশ নিউ জিল্যান্ড সফরে এসে এই শহরেই কাটিয়েছে নির্জনতার কোয়ারেন্টাইনে।

জনসংখ্যা ঢাকা মহানগরীর ধানমন্ডি, উত্তরায় মাইল যত মানুষ থেকে তার চেয়ো কম। দেশটিতে ক্রিকেটের মাঠগুলো পিকচার পোস্ট কার্ডের মতো মনোরম। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভাল এমনি একটি। এখানেই ২৩ মার্চ বাংলাদেশের খুব সকালে শুরু হয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় ম্যাচটি। স্বপ্ন দেখবেন না বা স্বপ্ন দেখাবো না। তবে ভাবতেই দোষ নেই বাংলাদেশ নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে লড়াই করবে!

১৮৫১ থেকে এই মাঠে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট হয়ে আসছে। মূল মাঠটি ইউনিভার্সিটি ওভাল থেকে বেশ বড়। সবুজ ঘাসের গালিচা উইকেট এবং আউটফিল্ড, মাঠটি ঘিরে সবুজ গাছ গাছালি। ১৮ হাজার দর্শক নানাভাবে খেলা উপভোগ করতে পারে।

ডিসেম্বর ২৬-২৯, ২০১৪ নিউ জিল্যান্ড শ্রীলংকা টেস্ট এখানে সাম্প্রতিক সময়ের প্রথম টেস্ট এবং জানুয়ারির ৩-৬, ২০২১ পাকিস্তান নিউ জিল্যান্ড এই মাঠে শেষ টেস্ট খেলেছে। ওপর দিকে জানুয়ারী ২৩, ২০১৪ কানাডা স্কটল্যান্ডের মধ্যে এই মাঠে প্রথম ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচটি দিয়ে সূচনা বাংলাদেশ নিউ জিল্যান্ড খেলেছে শেষ ওয়ানড ম্যাচটি ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯। চলুন দেখি কী হয়েছিল সেই ম্যাচটিতে।

সেই ম্যাচটিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিল মুশফিকুর রাহিম আর নিউ জিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন। টস জিতে কেন বাংলাদেশকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। লোকি ফার্গুসন, জেমস নিশাম, টড অ্যাস্টলের সাঁড়াশি আক্রমণে বাংলাদেশ ৪৯.৪ ওভারে ২২৬ করেছিল। মার্টিন গাপটিলের ব্যাটিং ঝড়ে ৩৬.২ ওভারে ২২৯/২ রান করে স্বাগতিক দল হেসে খেলে জয় পেয়েছিলো।
নিউ জিল্যান্ডের এবারের দলেও সেই ম্যাচের ৬ জন আছেন স্বমূর্তিতে সক্রিয়। বাংলাদেশ দলে নেই শুধুমাত্র ভালো ব্যাটিং করা সাব্বির রহমান ও মাশরাফি  বিন মুর্তজা।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড: বাংলাদেশ ২২৬ অল আউট ৪৯.৪ ওভার (মোহাম্মদ মিঠুন ৫৭, সাব্বির রহমান ৪৩, মুশফিকুর রাহিম ২৪, সৌম্য সরকার ২২, মাশরাফি ১৩, সাইফুদ্দিন ১০, তামিম ৫, লিটন ১, ফার্গুসন ৩/৪৩, জেমস নিশাম ২/২১, টড আস্থল ২/৫২)

নিউ জিল্যান্ড ২২৯/২ ৩৬.১ ওভারে (মার্টিন গাপটিল ১১৮ মাত্র ৮৮ বল খেলে, কেন উইল্লিয়ামসন ৬৫* এবং রস টেলর ২১*, মুস্তাফিজের রহমান ২/৪২)

গুনে, মানে, চরিত্রে, পরিবেশে হ্যাগলি ওভাল, ইউনিভার্সিটি ওভাল থেকে সামান্য ভিন্নতার। মাঠটি অপেক্ষাকৃত বড়, বাতাসের গতিবেগ অপেক্ষাকৃত মৃদু মন্দ।  তবে সবুজ ঘাসের টুপি পড়া উইকেটের বাউন্স এবং পেস একই ধরণের। বাতাস অতটা তীব্র না থাকায় এবং আকাশ মেঘে ঢাকা না থাকলে সুইং কিছুটা কম হবে।

বলবো না বাংলাদেশ তেড়ে ফুড়ে জ্বলে উঠে মাটিতেই থাকা কিউই পাখিগুলোকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে। তবে অবশ্যই সুযোগ আছে নিজেদের ভুল ত্রুটিগুলো শুধরে নিয়ে অন্তত লড়াই করার।

দেখুন বাংলাদেশ দলের ম্যাচ পরিকল্পনায় গত সফরের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান এবং তুখোড় ফিল্ডার সাব্বির রহমান থাকা উচিত ছিল। সাব্বির ডানেডিনে সেঞ্চুরি করেছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাব্বির এখনো সক্রিয়। যে নেই তাকে নিয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। বাংলাদেশের ব্যাটিং অপশনস গুলো দেখতে হবে। গত সফরে ওয়ানডে ম্যাচে তামিম, লিটন, সৌম্য তিনজনই উপুর্যপরি ব্যর্থ হয়েছিল। এবারেও প্রথম ম্যাচে তামিম, সৌম্য যেভাবে পাত্র পাঠ উইকেট থেকে বিদায় নিয়েছে, ওরা বিশেষ কিছু করবে আস্থা পাচ্ছি না।

এখন বিকল্প কী আছে. সৌম্যকে বিশ্রাম দিয়ে নাজমুল শান্ত দলে আসতে পারে। তামিম পুরোপুরি ম্যাচ ফিট না থাকলে ঝুঁকি না না নেয়াই ভালো হবে. অচিরেই বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে হবে। সেই ক্ষত্রে লিটন শান্ত ওপেন করে মিঠুনকে তিন নম্বরে খেলানো যেতে পারে। মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর পর সেই ক্ষেত্রে আফিফ ধ্রুবকে বিবেচনা করা যায় ৬ নম্বরে ব্যাটিং পসিশনে যদি না মোসাদ্দেক ম্যাচ ফিট হয়ে যায়। জানিনা চৌকস খেলোয়াড় সাইফুদ্দিন ম্যাচ ফিট কিনা। হয়ে থাকলে ওকে অবশ্যই খেলাতে হবে।

আমি অনুরোধ করবো মেহেদী মিরাজ স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসাবে যথেষ্ট। ধ্রুব বা মোসাদ্দেক খেললে বল করবে। বাংলাদেশ অবশ্যই তিন পেসার ও সাইফউদ্দিনকে নিয়ে খেলতে হবে। সেই ক্ষেত্রে রুবেল, তাসকিন এবং শরিফুল প্রথম পছন্দ হতে পারে। হাসান মাহমুদকে গাপটিল নিশানা বানিয়ে ফেলেছে। তরুণ ছেলেটাকে আর আগুনের মুখে ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না।

লেখক: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ক্রিকেট লেখক

ঢাকা/ইয়াসিন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়