ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ফিয়ারলেস ক্রিকেট ভার্সেস আউটপ্লেইড!

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ২৮ মার্চ ২০২১  
ফিয়ারলেস ক্রিকেট ভার্সেস আউটপ্লেইড!

অধিনায়করা আশার আলো দেখাবেন, জানাবেন ভালো করার প্রত্যাশা। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কথাও বলবেন। নিজেদের পরিকল্পনার আঁচ দেবেন। মাঠে নামার আগে অধিনায়কদের দায়িত্বের ভেতরেই পড়ে এগুলো। কিন্তু এমন আশা দেখানো কী ঠিক মাঠের ক্রিকেটে যেগুলোর অস্তিত্বই থাকে না!

ফিয়ারলেস মানে ভয়ডরহীন ক্রিকেট! ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল, টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে দলের সুর বেঁধে দিলেন ফিয়ারলেস ক্রিকেটের স্বপক্ষে। দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে চাপহীন ক্রিকেটের মানসিকতা তৈরি করেছিলেন তারা। কিন্তু ২২ গজে গোটা দল আউটপ্লেইড! আতাহার আলী খান যেমন সরাসরি বললেন, ‘দুঃখজনক, এক পক্ষের খেলা হয়ে যাচ্ছে।’

টি-টোয়েন্টি শেষে নিজের ইউটিউব পেজে একটি ভিডিওতে আতাহার আলী খান বলেন, ‘আশা করছি দল ভালো করবে। কিন্তু ভালো করার জন্য অবশ্যই ব্যাটসম্যানদের রান করতে হবে। ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।’

নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে বোলাররা সব সময়ই কঠিন পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। উপমহাদেশের বোলাররা জুবুথুবু খেয়ে যান কিউই কন্ডিশনে। বিশেষ করে ছোট মাঠগুলোতে ব্যাট-বলের টাইমিং হলে রানের ফোয়ারা ছোটে। স্বাভাবিকভাবেই স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের এ কন্ডিশন প্লাস পয়েন্ট। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যারা কাটিয়ে দিয়েছেন তারা কী ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না?

মোস্তাফিজুর রহমান বর্তমান দলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলার। তার থেকে দলের প্রত্যাশা অনেক উচুঁতে। তামিম যেমন ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে জানিয়েছেন, মোস্তাফিজকে বোলিং ইউনিটের নেতা হতে হবে, আউটস্পোকেন হতে হবে। অথচ মাঠের ক্রিকেটে তিনি পুরোপুরি বিবর্ণ। বোলিংয়ে ধার নেই। বেহিসেবী রান খরচ করছেন। ডেথ বোলিংয়ে একেবারেই হতশ্রী। তিন ওয়ানডেতে মোস্তাফিজের বোলিং ফিগার, ২৬/০, ৬২/২ এবং ৮৭/১। শেষ ওয়ানডেতে দলের ৫০তম ওভার করতে এসে দিয়েছিলেন ২১ রান। আর রোববার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শেষ ওভারে ব্যয় করেন ২০ রান।

মোস্তাফিজ শেষ ওয়ানডেতে ৮৭ রান দিয়ে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে বোলিং করেছেন। টি-টোয়েন্টিতেও অবশ্য এর থেকেও বাজে বোলিংয়ের রেকর্ড আছে। উইকেট থেকে সামান্য সহায়তা না পেলে একেবারেই নির্বিষ মোস্তাফিজ।  কয়েক বছর ধরেই বলে আসছেন, ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য বল ভেতরে ঢোকানো নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু নিউ জিল্যান্ড সফরে একবারও ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের ভোগাতে পারেনি। নিজের স্টক বল ও কাটারেই যতটুকু সাফল্য এসেছে।

ব্যাটসম্যানরা গোটা টুর্নামেন্টে আউটপ্লেইড। বাংলায় ভাবার্থ দাড়ায়, স্রেফ উড়ে যাওয়া। ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিন ব্যাটসম্যান। প্রথম ওয়ানডেতে কেউ নেই। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তামিম ও মিথুন। শেষ ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আফিফ সর্বোচ্চ ৪৫। বাকিরা একেক জনের থেকে একেকজন হতশ্রী।

টপ অর্ডারে লিটন, সৌম্যর দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। তাদের আউট হওয়ার ধরন বাজে। প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দিচ্ছেন যখন-তখন। মিথুন এক ম্যাচে রান পেলেও বাকিগুলোতে যেভাবে আউট হয়েছেন তাতেও হতাশা বেড়েছে। ওয়ানডেতে তামিম প্রথম ও শেষ ম্যাচে রান পাননি। মুশফিক তিন ম্যাচেই ছিলেন ব্যর্থতার বৃত্তে। মাহমুদউল্লাহও ধারাবাহিক ছিলেন না।

লিটন তিন ওয়ানডেতে ১৯, ০, ২১ করার পর টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ৪ রান। সৌম্য ব্যাট থেকে এসেছে ০, ৩২, ১ ও ৫। মিথুন প্রথম ও শেষ ওয়ানডেতে যথাক্রমে ৯ ও ৬। রোববার (২৮ মার্চ) টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ৪। মাহমুদউল্লাহর ব্যাট হাসেনি প্রত্যাশামাফিক। তিন ওয়ানডেতে ১১৯ এবং টি-টোয়েন্টিতে ১১ রান। ব্যাটিংয়ে তিন ওয়ানডেতে মুশফিকের রান ২৩, ৩৪ ও ২১।

ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমর্পণে মাহমুদউল্লাহ বলতে দ্বিধা করেননি, ‘আমরা আউটপ্লেইড হয়েছি।’ যে ফিয়ারলেস ক্রিকেটে চোখ ছিল বাংলাদেশের সেখান থেকে রীতিমত নাকানিচুবানি খেয়েছে গোটা দল। অনেক কিছু চেষ্টা করেও যখন কিছু হচ্ছে না তখন মাহমুদউল্লাহর আকুতি, ‘কাউকে এগিয়ে আসতে হবে এবং দেখাতে হবে যে সে বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতাতে সক্ষম।’

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়