ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ে অসহায় বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৪, ১ মে ২০২১   আপডেট: ১৯:১১, ১ মে ২০২১
তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ে অসহায় বাংলাদেশ

উদ্বোধনী জুটি শতক ছুঁইছুঁই। ইনিংসের মধ্যভাগে আসল পঞ্চাশোর্ধ আরও দুইটি জুটি। ২২ গজে ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি কখনোই। উইকেট ‘উল্টা-পাল্টা’ আচরণও করছিল না। তবুও তালগোল পাকালেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ৩৭ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ গুটি েযায় সহজেই। 

শ্রীলঙ্কার নিখুঁত বোলিংয়ে আরেকটি ফলোঅনের লজ্জাও পেল অতিথিরা। শ্রীলঙ্কার করা ৪৯৩ রানের জবাবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ ২৫১ রান। ২৪২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে শ্রীলঙ্কা ২ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১৭ রান। বাংলাদেশের মাথায় এখন-ই ২৫৯ রানের বোঝা।

শনিবার দিনের শুরুতে ২১ বল ব্যাটিং করে স্বাগতিকরা। ১ উইকেট হারিয়ে ২৪ রান করে তারা ইনিংস ঘোষণা করেন। তাসকিন রামেশ মেন্ডিসকে মুশফিকের হাতে তালুবন্দী করিয়ে পান চতুর্থ উইকেটের স্বাদ।  ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ও সাইফের দুর্দান্ত শুরু। পুরো কৃতিত্বটাই অবশ্য তামিমের। প্রতি আক্রমণে রানের গতি বাড়িয়ে রেখেছিলেন তিনি। সাইফ সতর্ক ব্যাটিংয়ে আরেকপ্রান্তে লড়াই করছিলেন।

সাইফ ও তামিমের দারুণ শুরুতে মনে হচ্ছিল দিনটা খুব ভালোভাবে কাটিয়ে দেবে বাংলাদেশ। ৯৮ রানের উদ্বোধনী জুটিতে আশা বাড়ছিল। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির আগে সাইফের বিদায়ে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ডানহাতি ব্যাটসম্যান জয়বিক্রমার বলে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন ২৫ রানে।  বিরতির আগে বাংলাদেশের উইকেট হারানো নতুন কিছু নয়। শান্ত সেই ধারাবাহিকতা দেখালেন। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে শেষ বলে শান্ত রামেশ মেন্ডিসের বলে ক্যাচ দেন শূন্য রানে। টানা দুই ইনিংসে শান্তর দুই ডাক।

বিরতির আগে ৯৬ বলে ১১ বাউন্ডারিতে তামিম করেছিলেন ৭০ রান। দ্বিতীয় সেশনে ফিরে সতর্ক হয়ে এগোলেন। সাইফ ও শান্ত দ্রুত আউট হওয়ায় বাড়তি ঝুঁকি নেননি। শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের আক্রমণও ছিল নিখুঁত। ক্লোজ ইন ফিল্ডারদের হাতে প্রায়ই বল যাচ্ছিল। শেষমেশ স্লিপে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তামিমের দ্যুতিময় ইনিংসটি। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বোলিংয়ে এসে তুলে নেন তার উইকেট। ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন লাহিরু থিরিমান্নেকে। ১৫০ বলে ১২ বাউন্ডারিতে ৯২ রান করে সাজঘরের দীর্ঘ পথ ধরেন দেশসেরা এ ওপেনার।

অথচ স্পিন ও পেসে তামিম ছিলেন সমান সাবলীল। স্বাচ্ছন্দ্যে শট খেলেছেন উইকেটের চারপাশে। এক মুহূর্তের জন্য কোনও বোলারকে থিতু হতে দেননি। স্পিনারদের বিপক্ষে পায়ের কাজ দেখান দারুণভাবে। এগিয়ে এসে কভার ড্রাইভ, ইনসাইড আউট শটে লং অফ ও অন দিয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছেন চোখের পলকে। সুইপ শটে উইকেটের পেছন থেকেও বাউন্ডারি আদায় করেছেন অনায়াসে।

বিরতির আগে ও পরের ইনিংস ছিল আকাশপাতাল পার্থক্য। ৯৬ বলে ৭০ রান তোলা তামিম পরের ২২ রান তুলেছেন ৫৪ বলে। এ সময়ে বাউন্ডারি মেরেছেন মাত্র একটি। সেটাও বিরতির পর প্রথম ওভারেই। এরপর নিজেকে গুটিয়ে নেন।তাতেই যেন তালগোল পাকিয়ে গেল।

মুমিনুল ও মুশফিক চতুর্থ উইকেটে ৬৩ রানের জুটি গড়েন। তাদের ব্যাটে আশা বড় হচ্ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু বিরতির আগে আরেকটি উইকেট যাওয়া তো নিয়তি ছিল। মুশফিক নিজের উইকেট উপহার দিলেন জয়াবিক্রমাকে। ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে গিয়ে বল ভেতরে টেনে এলবিডব্লিউ হন মুশফিক (৪০)। আর বিরতির ঠিক পরপরই মুমিনুল (৪৯) ও লিটন (৮) সাজঘরে।  মুশফিকের আউটে শুরু ছন্দপতন। 

পরীক্ষিত সব ব্যাটসম্যানদের বিদায়ে বাংলাদেশের ফলোঅনের শঙ্কা তৈরি হয়। লোয়ার অর্ডারে কেউ প্রতিরোধ গড়তে না পারায় বাংলাদেশ অলআউট ২৫১ রানে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তাইজুল অদ্ভুতুড়ে আউট হন। লাকমালের বল ডিফেন্স করতে গেল তার জুতো খুলে স্টাম্পে আঘাত করেন। হিট উইকেটে শেষ তার ৫০ বলে ৯ রানের ইনিংস।

বাংলাদেশকে ফলোঅনে না পাঠিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। পড়ন্ত বিকেলে ৭ ওভারের বেশি খেলার সুযোগ হয়নি তাদের। তাতেই বাংলাদেশের দুই স্পিনার মিরাজ ও তাইজুল তুলে নেন ১টি করে উইকেট। লাহিরু থিরিমান্নে ২, ওশাদা ফার্নান্দো ১ রানে আউট হন। ১৩ রানে করুনারত্নে ও ম্যাথুস ১ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।

তাদের লিড কোথায় গিয়ে থামে সেটাই দেখার। তৃতীয় দিন ১৩ উইকেটের ১০টি নিয়েছেন স্পিনাররা। চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে স্পিনাররা আরও সুবিধা পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ এ ম্যাচে লড়াইয়ে ফিরতে পারে কিনা সেটাও দেখার। 

ঢাকা/ইয়াসিন/রিয়াদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়