ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইউরো গ্রুপ ‘ডি’: এবার কি ট্রফি ঘরে ফেরাতে পারবে ইংল্যান্ড?

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৯, ৯ জুন ২০২১   আপডেট: ১০:৩০, ৯ জুন ২০২১
ইউরো গ্রুপ ‘ডি’: এবার কি ট্রফি ঘরে ফেরাতে পারবে ইংল্যান্ড?

আগামী ১১ জুন থেকে শুরু হচ্ছে ইউরোর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ১১টি শহরের ভিন্ন ১১ ভেন্যুতে লড়াই হবে ২৪ দলের। এই মহাযজ্ঞের আগে ছয় গ্রুপের বিশ্লেষণধর্মী ধারাবাহিক আলোচনার চতুর্থ পর্ব ‘ডি’ গ্রুপ নিয়ে:

‘ডি’ গ্রুপের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর উদ্বোধনী ম্যাচ: ইংল্যান্ড বনাম ক্রোয়েশিয়া, ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পুনরাবৃত্তি ম্যাচ। ওই খেলায় জিতে ক্রোটরা উঠেছিল ফাইনালে এবং থামিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ড জুড়ে চলতে থাকা ‘ইট’স কামিং হোম’ শ্লোগান। তিন বছর পর ইউরোতে নামার আগে ইংল্যান্ড উন্নতি করেছে আর ক্রোয়েশিয়ার পারফরম্যান্সের গ্রাফ নিচের দিকে। এই গ্রুপে তাই ফেভারিট থ্রি লায়নরা।

টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল নিয়ে মাঠে নামবে ইংল্যান্ড। এখন দেখার যে, উচ্চ প্রত্যাশার পারদ তারা ছুঁতে পারে কি না। গ্রুপের অন্য দুই দল স্কটল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্র। তাদের কেউই থ্রি লায়নদের জন্য বড় কোনও হুমকি নয়। যদিও বাছাইয়ে ইংল্যান্ডের একমাত্র হার চেকদের কাছেই। এই অনুপ্রেরণা কাজে লাগিয়ে স্কটিশরা যুক্তরাজ্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরীক্ষা করে দেখতে পারে।

ইংল্যান্ড

৫৫ বছরের শিরোপা খরা অল্পের জন্য কাটেনি ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে। তিন বছর পেরিয়ে আরেকটি বড় টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ড। এবার তরুণ ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের নিয়ে নতুন শুরু করতে যাচ্ছে গ্যারেথ সাউদগেটের শিষ্যরা। এই গ্রুপ জিতে ফাইনাল পর্যন্ত উঠতে পারলে হোম ম্যাচের সুবিধা পাবে তারা। সাত ম্যাচের ছয়টিই হবে তাদের মাঠ ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। সেই লক্ষ্যেই এগোবে থ্রি লায়নরা, রাশিয়ার আক্ষেপ এবার ভুলে যাওয়ার পালা।

কোচ: গ্যারেথ সাউদগেট

সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৩-৪-৩; পিকফোর্ড, মাগুইরে, স্টোনস, ওয়াকার, শ, মাউন্ট, রিস, ট্রিপিয়ের, স্টার্লিং, কেন, র‌্যাশফোর্ড।

সূচি: ১৩ জুন, প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া; ১৮ জুন, প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড; ২২ জুন, প্রতিপক্ষ চেক প্রজাতন্ত্র।

ইউরো খেলেছে: ৯ বার।

গত ইউরোতে: শেষ ষোলো।

সেরা সাফল্য: তৃতীয় স্থান (১৯৬৮, ১৯৯৬)।

নজরে থাকবেন: হ্যারি কেইন। থ্রি লায়ন্স তারকা আরেকটি অবিশ্বাস্য মৌসুম কাটিয়েছেন। টটেনহ্যাম হটস্পারের হয়ে প্রিমিয়ার লিগের এবারের সর্বাধিক গোল (২৩) ও অ্যাসিস্ট (১৪) তার। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জয়ের পর আরেকটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শীর্ষ গোলদাতার পুরস্কার পাওয়ার দৌড়ে তিনি থাকবেন আগ্রহের কেন্দ্রে।

শক্তি: আক্রমণভাগ। কেনের সঙ্গে রহিম স্টার্লিং ও মার্কাস র‌্যাশফোর্ড থাকবেন। এছাড়া ফিল ফডেন, জ্যাডন স্যানচো, জ্যাক গ্রিলিশ ও ডোমিনিক ক্যালভার্ট-লেভিন বেঞ্চের শক্তি বাড়াবেন। ইউরোপের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আক্রমণভাগের দলগুলোর একটি এই ইংল্যান্ড। ইউরো বাছাইয়ের আট ম্যাচের সাতটিতেই চার বা তার বেশি গোল করেছে থ্রি লায়নরা।

দুর্বলতা: গোলকিপিং। খুব বেশি বাজে, তা নয়। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে গোলপোস্ট সামলানো জর্ডান পিকফোর্ড এবারও থাকবেন একই দায়িত্বে। কিন্তু বিশ্বমানের পারফরম্যান্স থেকে একটু পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। ম্যানইউ গোলকিপার ডিন হেন্ডারসন সম্ভাবনাময়ী পারফরম্যান্স করেছেন, কিন্তু অভিজ্ঞতায় অনেক পিছিয়ে তিনি, মাত্র একবার জাতীয় দলের জার্সি উঠেছে তার গায়ে।

ক্রোয়েশিয়া

২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা মারিও মানজুকিচ, ইভান রাকিতিচ ও দানিয়েল সুবাসিচ অবসর নিয়েছেন। তাদের শূন্যতার প্রভাব পড়েছে মাঠে দলের পারফরম্যান্সেও। তবে লুকা মদরিচের নেতৃত্বে আরেকবার ওই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করতে মুখিয়ে ক্রোটরা।

কোচ: জ্লাৎকো দালিচ

সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৪-১-৪-১; লিভাকোভিচ, বারিসিচ, ভিদা, লভ্রেন, ভ্রাসালিজকো, ব্রোজোভিচ, পেরিসিচ, কোভাচিচ, মদরিচ, ভ্লাসিচ, ক্রামারিচ।

সূচি: ১৩ জুন, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, ১৮ জুন, প্রতিপক্ষ চেক প্রজাতন্ত্র; ২২ জুন, প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড।

ইউরো খেলেছে: ৫ বার।

ত ইউরোতে: শেষ ষোলো।

সেরা সাফল্য: কোয়ার্টার ফাইনাল (১৯৯৬, ২০০৮)।

নজরে থাকবেন: লুকা মদরিচ। দেশের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন, চারবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ বিজয়ী, ২০১৮ সালের ব্যালন ডি’অর জয়ী এবং অর্জনের তালিকা লম্বা হয়ে চলেছে। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ক্রোটদের প্রথমবার ফাইনালে তুলতে নেতৃত্ব দেওয়া এই মিডফিল্ডারের বয়স এখন ৩৫। সম্প্রতি তার ফর্মে কিছুটা ভাটা পড়েছে। কিন্তু আরেকটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নেতৃত্ব দেওয়ার বেলায় মাঝমাঠের প্রাণভোমরা তিনিই।

শক্তি: নিশ্চিতভাবে মাঝমাঠ। ইভান রাকিতিচ গত বছর অবসর নিলেও ক্রোয়েশিয়া তার শূন্যস্থান পূরণে যথেষ্ট প্রতিভা পেয়ে গেছে দলে। মদরিচের সঙ্গে ভ্লাসিচ, মাতেও কোভাচিচ, মার্সেলো ব্রোজোভিচ, মারিও পাসালিচ ও ইভান পেরিসিচকে নিয়ে বিত্তশালী মিডফিল্ড এই টুর্নামেন্টে সফল হতে আশাবাদী।

দুর্বলতা: আক্রমণভাগ। মিডফিল্ডে রাকিতিচের উত্তরসূরি মিললেও স্ট্রাইকার মারিও মানজুকিচের শূন্যস্থান পূরণ হয়নি। বিশ্বকাপ শেষে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলেন তিনি। পেরিসিচ ও পাসালিচকে সম্প্রতি সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলানো হয়েছে। হফেনহেইম স্ট্রাইকার আন্দ্রেজ ক্রামারিচ ৩৪ ম্যাচ খেলে ২৫ গোল করে দারুণ মৌসুম কাটান। কিন্তু জাতীয় দলের সঙ্গে এখনও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। এবার তার সুযোগ।

চেক প্রজাতন্ত্র

১৯৯৬ সালের ইউরো হয়েছিল ইংল্যান্ডে, ওই আসরে ফাইনাল পর্যন্ত খেলেছিল চেক প্রজাতন্ত্র। এবারও ইংল্যান্ডে খেলবে তারা। সম্প্রতি এই গ্রুপের দুই দলকে হারানোর স্বাদ পেয়েছে চেকরা। স্কটল্যান্ডকে নেশনস লিগে, আর বাছাইয়ে ইংল্যান্ডকে। তাই গ্রুপ পর্ব পেরোনোর স্বপ্নের বীজ হয়তো বুনেই রেখেছে মনে।

কোচ: জারোস্লাভ সিলহাভি।

সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৪-২-৩-১; ভাকলিক, বোরিল, সেলুসৎকা, কালাস, কোফাল, ক্রাল, সোসেক, জাঙ্কতো, দারিদা, মাসোপুস্ত, স্কিক।

সূচি: ১৪ জুন, প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড; ১৮ জুন, প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া; ২২ জুন, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।

ইউরো খেলেছে: ৬ বার।

গত ইউরোতে: গ্রুপ পর্ব।

সেরা সাফল্য: চোকোস্লোভাকিয়া হিসেবে চ্যাম্পিয়ন (১৯৭৬), চেক প্রজাতন্ত্র হিসেবে রানার্স আপ (১৯৯৬)।

নজরে থাকবেন: টমাস সোসেক। ছয় ফুট চার ইঞ্চি লম্বা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার প্রতিপক্ষের জন্য বড় হুমকি হতে পারেন। মাঠজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করার দক্ষতা তাকে বিশেষভাবে এগিয়ে রাখছে। ওয়েস্ট হ্যামকে এই প্রিমিয়ার লিগ মৌসুমে ষষ্ঠ স্থানে রাখতে তার অবদানই বেশি, করেছেন ১০ গোল।

শক্তি: শারীরিক উচ্চতা। দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় ছয় ফুটের বেশি লম্বা। সোসেকের সঙ্গে ক্রাল ও প্যাট্রিক স্কিককে নিয়ে দাপট দেখাতে পারে চেক প্রজাতন্ত্র। অধিনায়ক ভ্লাদিমির দারিদার সেট পিস থেকে শট নেওয়ার দক্ষতাও ভালো কিছুর আশা জাগাচ্ছে।

দুর্বলতা: সেন্ট্রাল ডিফেন্স। রক্ষণের নেতৃত্বে থাকবেন টমাস কালাস, ব্রিস্টল সিটির অধিনায়ক তিনি। দ্বিতীয় স্তরের ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপে তার দল শেষ করেছেন ১৯ নম্বরে থেকে। তার ওপর কতটা ভরসা করা যায় সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাকে ছাড়া সেন্ট্রাল ডিফেন্সের দায়িত্ব নেওয়ার কেউ নেই। সেন্টার ব্যাক ওন্দ্রেজ কুদেলা বর্ণবাদীর অভিযোগে ১০টি উয়েফা ম্যাচে নিষিদ্ধ এবং দাভিদ হোভোরকা ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন।

স্কটল্যান্ড

২৩ বছরে প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলছে তারা। বাছাইয়ের প্লে অফে সার্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে নাটকীয়ভাবে ইউরো নিশ্চিত করে স্কটিশরা, দেশবাসীকে এনে দেয় আনন্দের উপলক্ষ। এবার মূল পর্বেও আরেকটি আনন্দের উপলক্ষ খোঁজার চেষ্টায় থাকবে তারা।

কোচ: স্টিভ ক্লার্ক

সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৫-২-৩; মার্শাল, রবার্টসন, টিয়েরনি, কুপার, ম্যাকটমিনি, ও’ডনেল, ম্যাকগিন, ম্যাকগ্রেগর, ফ্রেসার, অ্যাডামস, ক্রিস্টি।

সূচি: ১৪ জুন, প্রতিপক্ষ চেক প্রজাতন্ত্র, ১৮ জুন, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড; ২২ জুন, প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া।

ইউরো খেলেছে: ২ বার।

গত ইউরোতে: বাছাই হয়নি।

সেরা সাফল্য: গ্রুপ পর্ব (১৯৯২, ১৯৯৬)।

নজরে থাকবেন: অ্যান্ড্রু রবার্টসন। ২০১৮ সাল থেকে জাতীয় দলের অধিনায়ক। লিভারপুল ফুলব্যাক তার পজিশনে বিশ্বের অন্যতম সেরা। স্কটল্যান্ড যদি নকআউট পর্বে ওঠে, তাহলে রক্ষণে থেকে বল দখল, হুট করে দুরন্ত গতিতে আক্রমণে যাওয়া ও চমৎকার ক্রসিংয়ে তার সামর্থ্য হতে পারে তাদের সাফল্যের চাবিকাঠি।

শক্তি: বাঁ প্রান্তের দুই খেলোয়াড়কে ধরা হচ্ছে স্কটিশদের মূল শক্তি হিসেবে। উইং ব্যাক হিসেবে বাঁ প্রান্তে রবার্টসন এবং রক্ষণের বাঁ প্রান্তে আর্সেনাল ফুলব্যাক কিয়েরেন টিয়েরনি আছেন। তাদের সেরা এই দুই খেলোয়াড়কে নিয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে প্রতিপক্ষকে তটস্থ করে রাখতে পারে স্কটল্যান্ড।

দুর্বলতা: আক্রমণভাগ। রবার্টসন, টিয়েরনি ও স্কট ম্যাকটমিনিকে নিয়ে রক্ষণ ও মিডফিল্ড শক্তিশালী হলেও স্কটল্যান্ডের মাথাব্যথা আক্রমণভাগ নিয়ে। নেশনস লিগের ছয় ম্যাচে তারা মাত্র পাঁচ গোল করেছিল। এই দশা তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে কি না দেখার বিষয়।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়