ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ইউরো ‘এফ’ গ্রুপ: মৃত্যুকূপ থেকে বের হবে কে?

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ১১ জুন ২০২১   আপডেট: ১২:২৯, ১১ জুন ২০২১
ইউরো ‘এফ’ গ্রুপ: মৃত্যুকূপ থেকে বের হবে কে?

শুক্রবার (১১ জুন) থেকে শুরু হচ্ছে ইউরোর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ১১টি শহরের ভিন্ন ১১ ভেন্যুতে লড়াই হবে ২৪ দলের। এই মহাযজ্ঞের আগে ছয় গ্রুপের বিশ্লেষণধর্মী ধারাবাহিক আলোচনার ষষ্ঠ গ্রুপ ‘এফ’ নিয়ে:

‘মৃত্যুকূপ’। ইউরোর এই আসরে ছয় গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন গ্রুপ ‘এফ’। দলে আছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, চারবারের বিশ্বকাপ জয়ী জার্মানি, বর্তমান ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল ও পুনর্জাগরণে থাকা হাঙ্গেরি।

‘এফ’ গ্রুপের সব খেলা হবে মিউনিখ ও বুদাপেস্টে, তাতে জার্মানি ও হাঙ্গেরি হোম ম্যাচের সুবিধা পাবে। কিন্তু মৃত্যুকূপ থেকে উতরে যাওয়া সহজ হবে না তাদের জন্য। পাঁচ বছর নির্বাসনে থাকা করিম বেনজেমাকে স্বাগত জানিয়েছে শক্তিশালী ফ্রান্স, গত বিশ্বকাপের নায়ক কিলিয়ান এমবাপ্পেও রয়েছেন দলে। আর পর্তুগালকে এবারও নেতৃত্ব দেবেন ফর্মে থাকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এই মৃত্যুকূপ থেকে শেষ পর্যন্ত কে বের হতে পারবে, তা এখনই বলা মুশকিল।

ফ্রান্স

আন্তর্জাতিক ফুটবলের গত দুটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছে ফ্রান্স। ইউরোতে রানার্সআপ হলেও বিশ্বকাপে আদায় করেছে শ্রেষ্ঠত্ব। তিন বছর আগের সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ইউরোপিয়ান মঞ্চেও চায় ফরাসিরা।

কোচ: দিদিয়ের দেশম

সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৪-৪-২; লরিস, হের্নান্দেজ, কিম্পেম্বে, ভারানে, পাভার্ড, লেমার, কান্তে, পগবা, কোম্যান, গ্রিয়েজম্যান, এমবাপ্পে।

সূচি: ১৫ জুন, প্রতিপক্ষ জার্মানি; ১৯ জুন, প্রতিপক্ষ হাঙ্গেরি; ২৩ জুন, প্রতিপক্ষ পর্তুগাল।

ইউরোতে খেলেছে: ৯ বার।

শেষ ইউরোতে: রানার্সআপ।

সেরা সাফল্য: চ্যাম্পিয়ন (১৯৮৪ ও ২০০০)।

নজরে থাকবেন: কিলিয়ান এমবাপ্পে। ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জেতাতে অসাধারণ অবদান ছিল তার। ওই সময় তিনি ছিলেন কিশোর। তিন বছর পেরিয়ে এখন তিনি আরও দুর্দান্ত। গতি, বল নিয়ন্ত্রণে রাখা ও গোলমুখের সামনে নির্দয়- এসব তাকে রেখেছে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ফরোয়ার্ডের স্থানে। গত ইউরোতে খেলেননি, তবে একই বছর অনূর্ধ্ব-১৯ ইউরো জিতিয়েছেন ফ্রান্সকে। পরে তো বিশ্বকাপে করেছেন বাজিমাত। ২২ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড এবারও একই ফর্ম ধরে রাখলে ফ্রান্স যে কোনও প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলতে পারে।

শক্তি: মাঠের যে কোনও পজিশনেই তাদের চমৎকার সব খেলোয়াড় আছে। কেউ যদি ইনজুরিতে পড়েন কিংবা কারও ফর্ম পড়ে যায়, তাহলে দিদিয়ের দেশম সহজেই তা পূরণ করতে পারবেন।

দুর্বলতা: তুরস্কের কাছে হারা ছাড়া বাছাইপর্ব খুব সহজেই ‍উতরে গেছে। অ্যান্ডোরা, আলবেনিয়া, মলদোভা ও আইসল্যান্ডের মতো দলগুলোর সঙ্গে একপেশে লড়াইয়ে জিতেছে ফ্রান্স। প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব এই কঠিন গ্রুপে তাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

জার্মানি

জার্মানিতে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ডাগআউটে জোয়াকিম লো। এই ইউরোর পর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন প্রধান কোচ। শেষ টুর্নামেন্ট জিতে বিদায়টা স্মরণীয় করতে প্রস্তুত তিনি, তার খেলোয়াড়দের চাওয়াও একই।

কোচ: জোয়াকিম লো।

সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৩-৪-৩; ন্যয়ার, গিন্টার, হামেলস, সুলে, গোসেন্স, ক্রুস, কিমিখ, ক্লস্টারম্যান, বার্নার, মুলার, গিন্যাব্রি।

সূচি: ১৫ জুন, প্রতিপক্ষ ফ্রান্স; ১৯ জুন, প্রতিপক্ষ পর্তুগাল; ২৩ জুন, প্রতিপক্ষ হাঙ্গেরি।

ইউরো খেলেছে: ১২ বার।

শেষ ইউরোতে: সেমিফাইনাল।

সেরা সাফল্য: চ্যাম্পিয়ন (১৯৭২, ১৯৮০ ও ১৯৯৬)।

নজরে থাকবেন: বায়ার্ন মিউনিখের উঠতি তারকা সার্জ জিন্যাব্রি। বাছাই পর্বে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮ গোল করেছেন। আক্রমণভাগে জার্মানরা তার দিকেই তাকিয়ে। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের নাকানিচুবানি খাওয়াতে তার ওপর ভরসা করাই যায়।

শক্তি: ফ্রান্সের মতো জার্মানিরও প্রত্যেক পজিশনে রয়েছে দারুণ সব খেলোয়াড়। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সবাইকে খেলার সুযোগ দিতে পারেন জোয়াকিম লো।

দুর্বলতা: কোচ লো, এই ইউরো শেষে জার্মানিতে ১৫ বছরের অধ্যায় শেষ করে করতে যাচ্ছেন তিনি। গত কয়েকটি বছর জার্মানির জন্য ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। তিন বছর আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে রাশিয়ায় মিশন শুরু করেছিল জার্মানরা, ফেভারিটও ছিল। কিন্তু প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিতে হয় তাদের। এবার কি সেই বিব্রতকর বিদায়ের ক্ষত শুকাতে পারবে তারা?

পর্তুগাল

রোনালদোর শেষ ইউরো। পর্তুগালের ‘জাতীয় বীরের’ হাত ধরে আরও একবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে নামবে তারা। কঠিন এই গ্রুপ থেকে বের হতে পারলে সেই চ্যালেঞ্জের জন্য বাড়তি আত্মবিশ্বাস পেয়ে যাবে তারা।

কোচ: ফার্নান্দো সান্তোস।

সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৪-৩-৩; লোপেজ, মেন্দেজ, ফন্তে, দিয়াজ, কানসেলো, বি. সিলভা, সানচেজ, নেভেস, ফেলিক্স, জোতা, রোনালদো।

সূচি: ১৫ জুন, প্রতিপক্ষ হাঙ্গেরি, ১৯ জুন, প্রতিপক্ষ জার্মানি, ২৩ জুন, প্রতিপক্ষ ফ্রান্স।

ইউরো খেলেছে: ৭ বার।

শেষ ইউরোতে: চ্যাম্পিয়ন।

সেরা সাফল্য: চ্যাম্পিয়ন (২০১৬)।

নজরে থাকবেন: কে হতে পারেন? নিশ্চিতভাবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। কিন্তু পর্তুগালকে ‘ওয়ান ম্যান টিম’ বললে তা হবে অন্যায়। তারপরও রোনালদোই থাকবেন নজরে। বাছাইয়ে দ্বিতীয় ও দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১১ গোল করেছিলেন। জাতীয় দলের জার্সিতে আর পাঁচটি গোল করলেই সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলদাতা আলী দাইয়ির পাশে বসবেন তিনি। দলকেও অনুপ্রাণিত করার ভারও থাকবে তার কাঁধে। সব মিলিয়ে এই গ্রুপে আলো ছড়াতে পারেন ৩৬ বছর বয়সী তারকা।

শক্তি: রোনালদো ছাড়াও পর্তুগিজদের আক্রমণে রয়েছে বৈচিত্রময় খেলোয়াড়। ব্রুনো ফের্নান্দেজ, ডিয়েগো জোতা, বের্নার্দো সিলভা ও জোয়াও ফেলিক্স- এই মৌসুমে সবাই নিজ ক্লাবের হয়ে চমৎকার খেলেছেন।

দুর্বলতা: পর্তুগালের সব পজিশনে গুণগত খেলোয়াড় থাকলেও দল যে রোনালদোর ওপর নির্ভরশীল, না বললেও চলে। কোনও কারণে প্রতিপক্ষ সিআরসেভেনকে বোতলবন্দি করলে বিপদ ঘটতেই পারে। তার প্রভাব ছাড়া দল কতটা মানিয়ে নিতে পারে, সেটাই দেখার। বিশেষ করে জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী দল যখন গ্রুপে।

হাঙ্গেরি

গতবার শেষ ষোলোতে উঠে চমক দেখিয়েছিল হাঙ্গেরি। ৪৪ বছর পর ইউরোর মঞ্চে নেমেই এমন সাফল্য নজর কাড়াই স্বাভাবিক, তাও আবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। ওই গ্রুপে ছিল পর্তুগালও, রোনালদো জোড়া গোল করায় এগিয়ে থেকেও ড্রয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। এবারের আসরে কঠিন গ্রুপে পড়লেও গতবারের স্মৃতি তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে যথেষ্ট।

কোচ: মার্কো রস্সি

সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৩-৫-২; গুলাকসি, ফিওলা, ওরবান, আত্তিলা সালাই, লভ্রেনসিক্স, ক্লেইনহেইসলার, এ ন্যাগি, গাজদাগ, ভার্গা, সাল্লাই, অ্যাডাম সালাই।

সূচি: ১৫ জুন, প্রতিপক্ষ পর্তুগাল; ১৯ জুন, প্রতিপক্ষ ফ্রান্স; ২৩ জুন, প্রতিপক্ষ জার্মানি।

ইউরো খেলেছে: ৩ বার।

শেষ ইউরোতে: শেষ ষোলো।

সেরা সাফল্য: তৃতীয় স্থান (১৯৬৪)।

নজরে থাকবেন: সেন্টার ব্যাক উইলি ওরবান। শুধু রক্ষণেই দায়িত্ব নিয়ে ক্ষান্ত হন না তিনি, মাঝেমধ্যে আক্রমণেও অবদান রাখেন। বাছাইয়ে তিন গোল করে হাঙ্গেরির শীর্ষ গোলদাতা ছিলেন তিনি।

শক্তি: ইউরোর আয়োজকদের একটি। হাঙ্গেরি তাদের গ্রুপ ম্যাচের তিনটিই খেলবে ঘরের মাঠ ‍পুস্কাস এরেনায়। পর্তুগাল ও ফ্রান্সের বিপক্ষে যা হবে তাদের জন্য বাড়তি সুবিধা।

দুর্বলতা: গ্রুপ পর্বের সবচেয়ে অভাগা দল বলা হচ্ছে হাঙ্গেরিয়ানদের। কারণ তারা এমন গ্রুপে পড়েছে, যেখানে রয়েছে গত দুই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও জার্মানি এবং ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল। বিশ্বের সেরা তিন দলের বিপক্ষে তারা কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, তা বলা এখন কঠিন।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়