ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সাকিব, মাহমুদউল্লাহর ‘কাণ্ডে’ আম্পায়ারিং ছেড়েছেন তিনি

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২১, ২৯ জুন ২০২১   আপডেট: ২২:৪৩, ২৯ জুন ২০২১
সাকিব, মাহমুদউল্লাহর ‘কাণ্ডে’ আম্পায়ারিং ছেড়েছেন তিনি

পেসার শহীদুলের বল মোস্তাফিজ কভারে পাঠালেন। মোসাদ্দেকের হাতে বল। আবাহনী শিবিরে উল্লাস। ঢাকা লিগের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের আনন্দ। প্রাইম ব্যাংককে ৮ রানে হারিয়ে আবাহনী জিতে নেয় বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগের শিরোপা।

আবাহনীর শিরোপা উৎসবের মাঝেও ঘটে যায় দৃষ্টিকটু এক ঘটনা। প্রাইম ব্যাংকের দুই ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজ ও অলোক কাপালি আবাহনীর খেলোয়াড়, আম্পায়ার কারও সঙ্গে হাত না মিলিয়ে ঢুকে যান ড্রেসিংরুমে। সেখান থেকে আর বের হননি। প্রাইম ব্যাংকের খেলোয়াড়রা আবাহনীর খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফদের সঙ্গে হাত মেলালেও আম্পায়ারদের সঙ্গে মেলাননি।

ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ার্স রুমে বসে সেগুলো দেখছিলেন টিভি আম্পায়ার মনিরুজ্জামান টিংকু। আর ভেতরে ভেতরে কষ্ট পাচ্ছিলেন! অজ্ঞতা বলে দেন, ‘আম্পায়াররা কি এতটাই খারাপ?’ রাগে-ক্ষোভে-কষ্টে সেই রাতেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘গুডবাই আম্পায়ারিং।’

তার রাগ-ক্ষোভ-কষ্ট অবশ্য একদিনে বা এক ঘটনায় তৈরি হয়নি। সদ্য শেষ হওয়া ঢাকা লিগে কয়েকদিনের ব্যবধানে দুই সিনিয়র ও বাংলাদেশের পোস্টারবয়দের আচরণ দেখে রীতিমত বিস্মিত মনিরুজ্জামান। সাকিব আল হাসানের লাথি ও স্টাম্প তুলে আছাড় মারার ঘটনা এবং আউট না পাওয়ায় মাহমুদউল্লাহর মাঠে গড়াগড়ি এবং বসে খেলা বন্ধ রাখার ঘটনা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না স্থানীয় এ আম্পায়ার।

নিজের ভাবনা রাইজিংবিডির কাছে প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘নিজের একটা সম্মান আছে, এটা ভেবেই আম্পায়ারিং ছেড়ে দিয়েছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আম্পায়ারদের সম্মান কমে গেছে। ভালো লাগার জায়গা থেকে করেছি। কিছু পাওয়ার আশায় করিনি। স্থায়ী চাকরি আছে। আগে ক্রিকেট খেলেছি। মাঠে থাকতে পারলে ভালো লাগে। সেসব চিন্তা করে আম্পায়ারিংটাও করেছি। যেভাবে সম্মান পাচ্ছি তাতে কষ্ট বাড়ছে। এজন্য নিজের আত্মসম্মান রাখতেই আম্পায়ারিং ছেড়েছি।’

বিসিবির বেতনভুক্ত আম্পায়ার নন মনিরুজ্জামান। কাজ করেন বেক্সিমকোর এইচআর বিভাগে। ২০০৭ পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন। রাজশাহী ও বরিশালের হয়ে খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। ঢাকা লিগে সিটি ক্লাব, ইয়াং ক্রিকেটার্সের হয়ে খেলেছেন। ফলে ক্রিকেটার হিসেবে তার আলাদা পরিচিতি আছে। আম্পায়ার হিসেবে কাজে যুক্ত হয়ে সেই পরিচিতি আরও বেড়ে যায়।

আজকের তারকা ও উঠতি ক্রিকেটারদের কাছ থেকে দেখেছেন মনিরুজ্জামান। প্রত্যেককেই তার কাছের, প্রত্যেকেই আদরের। কিন্তু সেই ক্রিকেটারদের কাছ থেকে এমন অসম্মান, অপদস্ত হতে হবে তা কোনোদিন ভাবতেও পারেননি মনিরুজ্জামান। তাইতো পছন্দের জায়গা ছাড়তে দ্বিতীয়বার চিন্তাও করতে হয়নি তাকে।

নিজের আক্ষেপ ঝেরে তিনি আরও বলেন, ‘কীভাবে আম্পারিং করবো। আজ আমাদের একজন কলিগের সিদ্ধান্ত না মেনে সাকিব স্টাম্পে লাথি মারলো। এভাবে প্রতিক্রিয়া জানালো। কাল করবে না এর নিশ্চয়তা কী? বিপিএলে এক ম্যাচে তানভীর ভাইকে তো যাচ্ছেতাই শুনিয়েছিল। কোনও পরিবর্তন আছে? মাহমুদউল্লাহ মাঠে বসে পড়ছেন। খেলা শুরু করতে বললেও তিনি বসেই আছেন। এটা কেমন আচরণ। প্রাইম ব্যাংকের ক্রিকেটাররা আমাদের সঙ্গে হাতটাও মেলালো না। আমরা কী এতোটাই খারাপ হয়ে গিয়েছি নাকি?‘

এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মনিরুজ্জামানকে আম্পায়ারিং ছাড়তে বাধ্য করেছে বলে জানালেন। পাশাপাশি তার শঙ্কা, সিনিয়র আরও অনেক ক্রিকেটার মাঠে এমন আচরণ করেন, তাদের দেখে জুনিয়ররাও সেদিকে এগোচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে আম্পায়ারদের আরও খারাপ দিক দেখতে হতে পারে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে অনেকেই। আবার অনেকে সময় নেওয়ার কথাও বলেছেন। বিসিবির আম্পায়ার গাজী সোহেল লিখেন, ‘আমি খুবই অবাক এবং বিস্মিত টিংকু। তুমি খুবই ভালো মানুষ। তোমার সততা, সরলতা, নম্রতা ও ব্যক্তিত্ব পৃথিবীর সবার কাছে সুপরিচিত। তোমাকে ক্রিকেটে দরকার। শুধু ক্রিকেটেই না, আমরা যারা তোমার সতীর্থ, আমাদেরও তোমাকে দরকার। আশা করছি তুমি তোমার সিদ্ধান্ত পুনরায় চিন্তা করবে। আমরা অধীর আগ্রহে তোমার পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবো।’

 

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়