ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ১০ ক্লাসিক (২য় পর্ব)

মানজুর মোরশেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ৯ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৭:১১, ৯ জুলাই ২০২১
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ১০ ক্লাসিক (২য় পর্ব)

ফুটবলে সুপার ক্লাসিকো বলতে বোঝায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদের ধ্রুপদী লড়াইকে। একটি জাতীয় দল, আরেকটি ক্লাব পর্যায়ে; অন্য কোন ফুটবল লড়াইয়ের সাথে যার তুলনাই চলে না!

১৯১৪ সালে প্রথমবার মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আমেরিকার দুই দেশ। আর দুই দলের  সবশেষ ম্যাচে রিয়াদে মেসির গোলে ব্রাজিলকে হারায় আর্জেন্টিনা। তবে, মোটের পরিসংখ্যানে একটু এগিয়ে ব্রাজিল। দুই দলের ১০৫ মোকাবেলায় ব্রাজিলের জয় ৪১, আর্জেন্টিনার ৩৮, আর বাকি ২৬ ম্যাচ ড্র।

কোপায় এবার তারা ফাইনালে মুখোমুখি। আসুন ঘুরে আসি দুই দেশের সেরা ১০ লড়াই থেকে।  ইংলিশ ফুটবল সাংবাদিক ক্রিস্টোফার অ্যাটকিনসের লেখা থেকে রাইজিংবিডির জন্য সেই ফুটবল আনন্দ তুলে এনেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্রীড়া সাংবাদিক মানজুর মোরশেদ। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।  

(৬) ব্রাজিল ২(৪)- ২(২) আর্জেন্টিনা: ১৯৯৫ কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের সীমান্ত শহর রিভেইরায় মুখোমুখি হয় দু'দেশ। ব্রাজিলের সীমান্ত সংলগ্ন রিভেইরায় দর্শক সমর্থনে এগিয়েছিল কোচ মারিও জাগালোর দল। ড্যানিয়েল প্যাসারেলার আর্জেন্টিনা দলে ছিল সিমিওনে-জানেত্তি-বাতিস্তুতার মত তারকা। ৮৬'র বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার সেই 'হ্যান্ড অফ গডে'র মূল্য একরকম করে দিতে হয় আর্জেন্টিনাকে। বালবো-বাতিস্তুতার গোলে আর্জেন্টিনা যখন ২-১ গোলে এগিয়ে, সেমিফাইনালের স্বপ্নে বিভোর; তখনই সেই অভিশাপ নেমে আসে।

ম্যাচের তখন ৮১ মিনিট; বল জালে ঢোকার আগে ব্রাজিল ফরোয়ার্ড টুলিও মারাভিলহার হাত স্পর্শ করে, কিন্তু চোখ এড়িয়ে যায় রেফারির। দুর্ভাগ্যের শিকার হয় আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আলবিসেলেস্তেরা। টুলিও'র ঐ গোল 'হ্যান্ড অফ দ্যা ডেভিল' বা 'শয়তানের হাত' নামে কুখ্যাতি অর্জন করে। গান তৈরি করে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। ফাইনালে ঐ টাইব্রেকারেই উরুগুয়ের কাছে হারতে হয় ব্রাজিলকে।

(৫) ব্রাজিল ২-৩ আর্জেন্টিনা: এই সেই লড়াই ইতিহাসে যা 'ব্যাটল অফ সান্টিয়াগো' নামে খ্যাত কিংবা কুখ্যাত। ৫ গোলের তিনটিই আসে ডিফেন্ডারদের কাছ থেকে। কোপার ১৯৯১ আসরে চিলির রাজধানী সান্টিয়াগোর ঐ ম্যাচে ৫টি লালকার্ড দেখাতে হয় প্যারাগুয়ের রেফারি ম্যাকিয়েলকে। ব্রাজিল ৮, আর আর্জেন্টিনা ৯ জন নিয়ে ম্যাচ শেষ করে। ব্রাজিলের মাজিনহো, মারসিও ও ক্যারেকা এবং আর্জেন্টিনার ক্যানিজিয়া ও এনরিকে লালকার্ড দেখেন। সুন্দর ফুটবলের বদলে শরীরী লড়াইয়ে মেতে ওঠে দু'দল। 'অফ দ্যা বল' বেশ কটি উত্তেজনাকর বড় ঘটনা ঘটে ম্যাচে।

ডিফেন্ডার দারিও ফ্রাঙ্কো ১ম মিনিটেই লিড এনে দেন আর্জেন্টিনাকে।  ব্রাজিলের লেফট ব্যাক ব্রাঙ্কো দূরপাল্লার এক শটে সমতা ফেরান ৪ মিনিটের মধ্যেই। তবে আবারও ফ্রাঙ্কো ২-১'র লিড এনে দেন আলবিসেলেস্তেদের। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে হবে ক্যারিয়ার শুরু করা বাতিস্তুতার গোলে ৩-১ এর লিড নেয় আর্জেন্টিনা।  স্ট্রাইকার জোয়াও পাউলো এক গোল শোধ দিলেও সেলেসাওদের হার এড়াতে পারেননি। ফাইনালহীন আসরের চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা।

(৪) ব্রাজিল ০-১ আর্জেন্টিনা: ১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপের সেই ঐতিহাসিক শেষ ১৬'র ম্যাচ, যেখানে ব্রাজিল সমর্থকদের হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছিল ম্যারাডোনার সেই অবিশ্বাস্য পাস, আর ক্যানিজিয়ার ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিং! ফুটবল ইতিহাসে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল করার ব্যাকরণ হয়ে গেছে ঐ গোলটি। খেললো ব্রাজিল, জিতলো আর্জেন্টিনা- ঐ ম্যাচের পর গণমাধ্যমে এমন শিরোনাম হয়েছিল বিশ্বজুড়ে। ম্যাচের ৮০ মিনিট পর্যন্ত ম্যারাডোনাকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি, যখনই বল পেয়েছেন, তখনই ট্যাকলের শিকার হয়েছেন। একের পর এক আক্রমণ করে গেছে ব্রাজিল, ডান-বাম দুই সাইডবারেই বল লেগেছে-কিন্ত গোল হয়নি। দুঙ্গা-ক্যারেকা মাথায় হাত দিয়ে মাঠে বসে পড়েছেন, আর অবিশ্বাস্য সব সেভ করেছেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক গয়কোচিয়া। তবে সব ভুলে সবাই শুধু মনে রেখেছে ম্যাচের ৮১ মিনিটে বল পায়ে ম্যারাডোনার সেই অসাধারণ দৌড় ও দুর্দান্ত থ্রু আর ক্যানিজিয়ার নিখুঁত গোল।

(চলবে)

মানজুর মোরশেদ: বিশেষ প্রতিনিধি যমুনা টিভি

* ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ১০ ক্লাসিক (১ম পর্ব)

ঢাকা/রিয়াদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়