ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্পিনে ফাঁদ পেতে অস্ট্রেলিয়া বধ

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২০, ৩ আগস্ট ২০২১  
স্পিনে ফাঁদ পেতে অস্ট্রেলিয়া বধ

চার উইকেট নিয়ে নাসুম হয়েছেন ম্যাচসেরা

ক্রিকেটে যাদের ইতিহাস ঐশ্বর্যময়, যাদের সাফল্য চিত্তাকর্ষক তাদের বিপক্ষে জয় মানেই বিরাট কিছু। প্রথমবার ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সেই স্বাদ পেয়েছিল ইংল্যান্ডের কার্ডিফে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওই ম্যাচটা ছিল ওয়ানডে। ১২ বছর পর ঘরের মাঠে সেই দলটিকে বাংলাদেশ হারায় টেস্ট ম্যাচে। টি-টোয়েন্টিতে জয় অধরা ছিল। প্রথম মুখোমুখির ১৪ বছর পর সেই অসাধ্য সাধন করল বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে এই ফরম্যাটে দুই দলের প্রথম দেখা, সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে চার ম্যাচ খেলে সবগুলোই হেরেছিল বাংলাদেশ। সেই বৃত্ত ভেঙে দিলো প্রথম দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজেই। 

অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে হারাল বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই-বাংলায় ২৩ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ১৩১ রানের পুঁজি পেয়েছিল তারা। কোনোমতে একশ পেরুনো অস্ট্রেলিয়া থেমে যায় ১০৮ রানে। তাতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ জয়ে শুরু করল মাহমুদউল্লাহর দল।

বিশ্বকাপে চোখ রেখে প্রস্তুতি সারতে চায়- এমন ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। এজন্য স্পোর্টিং উইকেটের প্রত্যাশায় ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার মিরপুরের ২২ গজে পাওয়া গেল স্পিন সহায়ক উইকেট। বোঝা যাচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়ার জন্য এমন ফাঁদ পেতেছিল বাংলাদেশ। তাতেই জয় চলে আসে সহজে।

নাসুমের ৪, মেহেদী হাসান ও সাকিব আল হাসানের ১টি করে উইকেট তো সেই কথাই বলছে। পাশাপাশি দুই পেসার শরিফুল ও মোস্তাফিজ যে ৪ উইকেট ভাগাভাগি করেছেন, প্রতিটি মায়াবি স্লোয়ার ও কাটারে। 

প্রথম ৩ ওভারে ৩ উইকেট শিকার। ১৩১ রানের পুঁজি নিয়ে এমন শুরুই তো চেয়েছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলে মেহেদী বোল্ড করেন অ্যালেক্স ক্যারিকে। তার ভেতরে ঢোকানো বলে ক্যারি পান ক্যারিয়ারের প্রথম গোল্ডেন ডাকের লজ্জা। দ্বিতীয় ওভারে নাসুম জস ফিলিপের হাতে ছক্কা হজম করলেও এক বল পর প্রতিশোধ নিয়ে নেন। তার বলে এগিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন ফিলিপে।

সাকিব তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথমটিতে পেয়ে যান উইকেট। হেনরিকস সুইপ করতে গিয়ে বল উইকেটে টেনে আনেন। ১১ রানে ৩ উইকেট নেই অতিথিদের।

সেখান থেকে ম্যাথু ওয়েড ও মিচেল মার্শ লড়াই করে ৩৮ রানের জুটি গড়েছিলেন। তবে তাদের জুটি ভাঙার পর অস্ট্রেলিয়া আর ম্যাচে ফেরেনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ম্যাচটা হেরে বসে তারা।

অজিদের মিডল অর্ডার ভাঙেন স্পিনার নাসুম। ওয়েডকে শর্ট ফাইন লেগে তালুবন্দি করানোর পর অ্যাস্টন আগারকে হিট উইকেট করান। এরপর হুমকি হয়ে দাঁড়ানো মার্শকে সাজঘরের পথ দেখান তিনি। তার বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ৪৫ বলে ৪৫ রান করা মার্শ। তাতে বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় ম্যাচ চলে আসে। ১৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নাসুম।   

ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের ইনিংস ছিল একেবারেই মন্থর। প্রথম ওভারে ৬ রানের পর ১৬তম ওভারে রান রেট ৬ অতিক্রম করে। বাকিটা সময় অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ২২ গজে কঠিন পরীক্ষা দিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের ব্যাটিং মন্থর হওয়ার পেছনে অজিদের ধারাবাহিক বোলিং ও উইকেট বড় কারণ।

বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের ধাঁধায় ফেলছিলেন স্টার্ক, টাই, জাম্পারা। নিয়মিত ডট বলে বাড়ছিল চাপ। সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, নাঈমরা টাইমিংয়ে গড়বড় করায় বাউন্ডারিও আসছিল না। গোটা ইনিংসে বাউন্ডারি এসেছে মাত্র ১১টি (৮ চার ও ৩ ছক্কা) । ৩ ছক্কার দুটিই মেরেছেন নাঈম, একটি মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসে ডট বলই ছিল ৪৭টি।

স্টার্কের ওভারে ইনিংসের দ্বিতীয় বল স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকান নাঈম শেখ। তাতে চমকে দিলেও পরে রান তুলতে সংগ্রাম করতে হয়েছে। হ্যাজেলউডের করা দ্বিতীয় ওভারে সৌম্য এলোমেলো শটে তালগোল পাকিয়ে ফেলছিলেন। তাতে আরেকপ্রান্তে বাড়ছিল চাপ। তৃতীয় ওভারে জাম্পা আসলেও রানের গতি বাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। অতিথিরা সাফল্য পেয়ে যায় চতুর্থ ওভারে। হ্যাজেলউডের বল উইকেট থেকে সরে খেলতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে আনেন সৌম্য (২)।

তিনে নেমে সাকিব প্রথম বলে পেয়ে যান ৩ রান। কিন্তু এরপর স্বরূপে ফিরতে পারেননি। টাইমিং মেলাতে না পারায় আত্মবিশ্বাস কমতে থাকে। অপরপ্রান্তে থাকা নাঈম পঞ্চম ওভারে স্টার্ককে আবার ছক্কা হাঁকান। এবার মিড উইকেট দিয়ে বল যায় গ্যালারিতে। আগের থেকে ঘোষণা ছিল, বল গ্যালারিতে গেলে নতুন বলে খেলা হবে। সেই মোতাবেক স্টার্কের হাতে যায় নতুন বল। পাওয়ার প্লে’তে বাংলাদেশের রান মাত্র ৩৩। সপ্তম ওভারে জাম্পা ফিরিয়ে দেন নাঈমকে। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ২৯ বলে ৩০ রান করা নাঈম।

এরপর মাহমুদউল্লাহ ও সাকিবের জুটি বাংলাদেশকে আশা দেখালেও রান তোলায় গতি ছিল না। দুজনই ইনিংস গড়ার পথে জীবন পান। ৫ রানে স্লিপে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ ছাড়েন টাই। ১৮ রানে সাকিবের ফিরতি ক্যাচ জমাতে পারেননি অ্যাগার।

১৩তম ওভারে হ্যাজেলউড বোলিংয়ে ফিরে ভাঙেন এ জুটি। ওভারের প্রথম বল ফুল সুইংয়ে ব্যাট চালিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকান বাংলাদেশের অধিনায়ক। পরের বল টাইমিং মেলাতে না পেরে লং অফে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ। সীমানা থেকে দৌড়ে দারুণ ক্যাচ নেন হেনরিকস। ২০ বলে ২০ রান করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।

দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করা সাকিবকেও ফেরান হ্যাজেলউড। নিজের চতুর্থ ওভরের শেষ বলে তাকে বোল্ড করেন ডানহাতি পেসার। শেষ দিকে আফিফের ১৭ বলে ২৩ রানের ইনিংসে রক্ষা বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ওই রানটাই ব্যবধান গড়ে দিল দুই দলের।

ভুল শুধরানোর সুযোগ নেই। বড়সড় পরিকল্পনারও সুযোগ নেই। দ্বিতীয় ম্যাচটা তো খেলতে হবে বুধবারই (৪ আগস্ট)। একই মাঠ, একই সময়ে- সন্ধ্যা ৬টায়।

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়