ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বার্সায় মেসির শেষ ৪২ মিনিট

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ৮ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৮:১৩, ৮ আগস্ট ২০২১
বার্সায় মেসির শেষ ৪২ মিনিট

এক মাস আগেই মারাকানায় একমাত্র অপ্রাপ্তি ঘুচান কোপা আমেরিকার ট্রফি হাতে নিয়ে। আন্তর্জাতিক ফুটবলের আকাঙ্ক্ষিত একটা শিরোপা লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারকে এনে দেয় পূর্ণতা। ততদিনে বার্সার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ। তারপরও ভাবছিলেন, এবার ন্যু ক্যাম্পে গিয়ে ওই আনন্দের মুহূর্তটা ভাগাভাগি করবেন। হ্যাঁ এলেন ন্যু ক্যাম্পে, প্রেস হলরুমে। সামনে ছিলেন ক্লাব প্রেসিডেন্ট হোয়ান লাপোর্তা, স্ত্রী আন্তোনেয়া রোকুজ্জো, তার তিন ছেলে এবং সতীর্থরা। সবাই দাঁড়িয়ে হাততালি দিলেন। কিন্তু সেই সম্ভাষণ তার অর্জনের জন্য নয়, তাকে বিদায় জানানোর। ২১ বছরের সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে ছিন্ন হয়েছে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) রাতে। নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না মেসি। অনেক চেষ্টা করে কান্না লুকাতে পারলেন না। হাতে স্ত্রীর দেওয়া রুমাল দিয়ে নাক-চোখ মুছলেন, গুডবাই যে বলতে হবে প্রিয় ভক্তদের।

গলায় কথা আটকে যাচ্ছিল, নিজেকের একটু থামিয়ে নিয়ে মেসি বলতে শুরু করলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি জানি না কী বলতে হবে। গত কয়েক দিন ধরে ভেবেছি আমি কী বলতে পারি। সত্যি কথা, আমি কিছুই ভেবে পাইনি। এতগুলো বছর এখানে থাকার পর এই মুহূর্তটা আমার জন্য সত্যিই কঠিন, গোটা জীবনই এখানে কাটালাম। আমি এটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’

গত মৌসুম শুরু না হতেই ব্যুরোফ্যাক্সে জানিয়ে দেন, ন্যু ক্যাম্পে থাকছেন না মেসি। তা যে অভিমান ছিল সেটাই বুঝিয়ে দিলেন তিনি, ‘ব্যুরোফ্যাক্সের মতো বোকামি করেছিলাম গত বছর। কিন্তু এই বছর একই রকম ছিল না। এই বছর আমার পরিবার ও আমি বুঝতে পারলাম, এখানে আমাদের বাসায় থাকতে যাচ্ছি। আমি যে কোনো কিছুর চেয়ে এটাই বেশি চেয়েছিলাম। ২১ বছরন পর আমার স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে চলে যাচ্ছি। এই শহরে বাস করেছি আমি, এটা আমাদের বাড়ি। সবকিছুর জন্য শুধুই কৃতজ্ঞতা, সব সতীর্থ ও আমার পাশে থাকা সবাইকে। এখানে আসার পর প্রথম দিন থেকে শেষ পর্যন্ত আমি আমার সবটুকু এই ক্লাবকে দিয়েছি। কখনো কল্পনা করিনি গুডবাই বলতে হবে, একদমই ভাবিনি।’

ন্যু ক্যাম্প ভর্তি দর্শকের সামনে বিদায় নিতে পারলে খুশি হতেন ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী, ‘আমি এই ক্লাবকে ভালোবাসি। দেড় বছর ধরে ভক্তদের দেখতে পাই না, এটা খুবই কষ্টের। ন্যু ক্যাম্প ভর্তি দর্শকদের সামনে আমি এটা (বিদায়ী বক্তব্য) দেওয়ার কথা ভাবছিলাম, ঠিকঠাক বিদায় বলতে চেয়েছিলাম।’

মেসি আরও বললেন, ‘আমার মনের মধ্যে অনেক ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এই ক্লাব যে ছাড়তে হচ্ছে, এখনো ভাবতে পারছি না। কিন্তু এটা মেনে নিয়ে সামনে এগোতে হবে।’ আবারো বার্সায় ফিরতে চান মেসি, ‘এখানে ভালো-মন্দ সময় কেটেছে। কিন্তু যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি তা সবসময় একই ছিল। আমি আশা করি একদিন এখানে ফিরব এবং ক্লাবের অংশ হতে পারব, সেটা যে কোনোভাবে হোক। আমার সন্তানদের কথা দিয়েছি। বিশ্বের সেরা বানাতে এই ক্লাবকে সহায়তা করতে চাই। যা বলতে চেয়েছিলাম তার অনেক কিছু ভুলে গেছি। সবাইকে ধন্যবাদ।’

ক্লাবে থাকতে না পারার জন্য বার্সা কর্তৃপক্ষের কোনো ত্রুটি পাননি মেসি, ‘আমি থাকার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করেছি। তারা (বার্সা) লা লিগার কারণে পারেনি। আমার সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হচ্ছে। আমার মতে আমরা সব চেষ্টাই করেছি কারণ আমি থাকতে চেয়েছিলাম। গত বছর আমি থাকতে চাইনি, সেটা স্বীকার করছি। এই বছর আমার মন পাল্টেছে, আমি থাকতেই চেয়েছিলাম। নতুন চুক্তির প্রত্যাশা ছিল। লাপোর্তা (ক্লাব প্রেসিডেন্ট) সেটাই বলেছিলেন। কিন্তু শেষ ‍মুহূর্তে হঠাৎ করে লিগের নিয়মের কারণে হলো না।’

প্রিয় মুহূর্ত কী জানতে চাইলে মেসি বলেন, ‘সেই সময়টা, যখন আমার অভিষেক হলো। ওইদিন আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। তারপরে যা পেলাম সব ছিল চমৎকার। আমি সবসময় সেই মুহূর্তকে স্মরণ করব যেখান থেকে সবকিছুর শুরু।’

পরের ক্লাব কি পিএসজি, মেসির জবাব, ‘এটা একটা সম্ভাবনা। কারো সঙ্গে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। প্রেস রিলিজ প্রকাশিত হওয়ার পর অনেক ফোন কল পেয়েছি। অনেক দল আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং আমরা অনেক কিছু নিয়ে কথা বলছি।’

এখন নতুন শুরুর দিকে তাকিয়ে বার্সার সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতা, ‘এই ক্লাবের সঙ্গে এখানেই শেষ এবং নতুন গল্প শুরু হবে। হ্যাঁ, এটা আমার জন্য অন্যতম কঠিন মুহূর্ত। আমি এই ক্লাব ছেড়ে যেতে চাই না। এই ক্লাব আমার ভালোবাসা। এই মুহূর্ত প্রত্যাশা করিনি কখনো।’ এই মুহূর্তের অনুভূতি জানাতে গিয়ে মেসি বলেন, ‘মনে হচ্ছে রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমি সত্যিই দুঃখিত। এখনো সত্যিই খারাপ লাগছে। যখন বাড়ি ফিরব তখন হয়তো আরো খারাপ লাগবে, হয়তো তার চেয়েও বেশি খারাপ লাগবে।’

বিদায়ী ম্যাচ খেলতে পারলে খুশি হতেন মেসি, ‘একটা বিদায়ী ম্যাচ খেলতে পারলে তিনি খুশি হতেন। কিন্তু সেটা আর সম্ভব নয়। এখনই বিদায় বলার মুহূর্ত।’

কোনো অনুশোচনা নেই মেসির, ‘আরেকটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারলে ভালো হতো। কিন্তু আমার কোনো অনুশোচনা নেই। আমি আমার সেরাটা দিতে চেষ্টা করেছি। অগণিত ট্রফি নিয়ে আমি এখানে আমার ক্যারিয়ার শেষ করছি। আমি ৫০ শতাংশ কম বেতন নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার কাছে আর কিছু চায়নি। আরও ৩০ শতাংশ বেশি বেতন চাওয়ার খবর মিথ্যা। লোকজন এ নিয়ে যা বলছে তা সত্যি নয়।’

প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন মেসি। শেষবার তাকে হাততালি দিয়ে বিদায় জানান হলরুমে উপস্থিত সবাই। হয়তো আবার ফিরবেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড, প্রাণের ক্লাবে যে ফিরতেই হবে তাকে।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়