ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সিরিজ জয়ের প্রাপ্তি আছে, অপ্রাপ্তিও কিছু কম নয়!

সালেক সুফী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১১, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১  
সিরিজ জয়ের প্রাপ্তি আছে, অপ্রাপ্তিও কিছু কম নয়!

অস্ট্রেলিয়ার পর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দাপুটে ভঙ্গিতেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। নিজ মাঠে, নিজ কন্ডিশনে, স্পিন সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশ এই দুই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয় পেয়েছে। 

জয় সবসময় আনন্দের। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর বড় মন্ত্র। এই দুই সিরিজের আগে অস্ট্রেলিয়া বা নিউ জিল্যান্ড বিপক্ষে কখনোই কোনো টি- টোয়েন্টি ম্যাচ জেতেনি বাংলাদেশ। সেই প্রেক্ষিতে এই দুটো সিরিজ জয় অবশ্যই বড় অর্জন। অস্ট্রেলিয়া নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে উপর্যুপরি সিরিজ জয় বাংলাদেশের আইসিসি র‌্যাংঙ্কিংও এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। টি- টোয়েন্টিতে টানা সিরিজ এবং ম্যাচ জয়ের এমন সুখকর দিন আগে কখনোই দেখেনি বাংলাদেশ। 

যে কন্ডিশনে এই দুটো সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ, তাতে এই জয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি আনন্দিত ঠিকই কিন্তু উচ্ছ্বাসটা একেবারে বাধভাঙা কোনোকিছু নয়। আমাদের দলও এই বাস্তবতা বোঝে।

সিরিজ জয়ের ঢেকুর তোলার পর এখন প্রশ্ন উঠছে- আমরা বিশ্বকাপের জন্য কেমন প্রস্তুতি নিলাম? এই প্রশ্নের সরল উত্তর, আমরা ঘরের মাটিতে এই সিরিজগুলো বিশ্বকাপের প্রস্তুতি বিবেচনা করে খেলিনি। খেলেছিলাম নিজ বাড়িতে নিজের সুবিধা কাজে লাগিয়ে সিরিজ জয় করতে। সেই উদ্দেশ্যে দারুণভাবে আমরা সফল হয়েছি। আদতে বিশ্বকাপের জন্য কোনো প্রস্তুতিই কিন্তু হলো না। আমরা সিরিজ জয়ী দলের মেজাজ নিয়ে বিশ্বকাপে যাচ্ছি। কিন্তু মনে রাখতে হবে বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে এখনো আমাদের প্রবেশাধিকার মেলেনি। মানছি এই মুহূর্তে আমাদের টি-টোয়েন্টি র‌্যাংঙ্কিং এখন বেশ উন্নত। অথচ আমাদের তো বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলতে হচ্ছে।

আমরা অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডকে হারালাম। কিন্তু আমাদের ব্যাটিং কতটা ঠিক ছিল এই দুই সিরিজে? মোটেও ঠিক ছিল না। টানা ৯ ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা মাত্র একটি। এই ৯ ম্যাচে রান গড় ১১৪! প্রতি ম্যাচই হচ্ছে লো-স্কোরের। উইকেট থেকে স্পিনাররা যে সুবিধা পাচ্ছেন তা কি বিশ্বকাপের মঞ্চে পাবেন? তরুণদের মতো দলের নিউক্লিয়াস ব্যাটিংও যে ডানা মেলল না।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ড দল তাদের টি- টোয়েন্টির ইতিহাসে দ্বিতীয়বার সর্বনিম্ন ৬০ রানে গুটিয়ে যায়। তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে কড়ায় গন্ডায় সেই শোধবোধ নিয়ে নেয় কিউইরা। ভালো লড়াই হয়েছে দ্বিতীয় আর চতুর্থ ম্যাচে। উইকেটে স্ট্রোক খেলার মতো সুযোগ সীমিত ছিল। ল্যাথাম, মাহমুদউল্লাহ আর ইয়াং ছাড়া কেউ আর কোনো ম্যাচে নিজের ব্যাটিংয়ের সুনাম রাখতে পারেননি। চার-ছক্কার ধামাকা কোনো ম্যাচেই দেখা গেল না। অবশ্য এমন উইকেটে ব্যাটিং দেখে কোনো ব্যাটসম্যানকেই সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যাবে না।

জানি না ওমান বা সংযুক্ত আরব আমিরাতে নাসুম বা মেহেদীর স্পিন কতটা সফল হবে? প্রয়োজন ছিল দ্বিতীয় ম্যাচের উইকেটটির মতো উইকেটে তাসকিন, শরিফুল ও রুবেলদের শক্তির ধার পরীক্ষা করা। বিশ্বকাপেও কি বাংলাদেশ স্পিননির্ভর একাদশই সাজাবে? 

নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে এই ম্যাচেও বাংলাদেশের অনেক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে। লিটন দাস, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের আউটের ধরন দৃষ্টিকটু লেগেছে। নিউ জিল্যান্ড স্পিনার এজাজ প্যাটেল ও রাচিন রবীন্দ্র বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের হাড় কাঁপুনি তুলে দিয়েছিল। শীতল মেজাজের মাহমুদউল্লাহ যোগ্য নাবিকের মতো হাল ধরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিলেন। স্টাম্পড আউট হওয়ার একটা সুযোগ দিয়েও রেহাই পান তিনি। ল্যাথাম সেই স্টাম্পিং মিস না করলে কে জানত এই ম্যাচের ভাগ্য কী হতো? ৯৪ রানের মামুলি টার্গেট টপকাতেই বাংলাদেশকে খেলতে হলো শেষ ওভার পর্যন্ত!

অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজ জয় অনেক আনন্দের। কিন্তু আবারো বলছি সার্বিক বিবেচনায় উচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে যাওয়ার মতো কিছু নেই।

লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ক্রিকেট বিশ্লেষক।

ঢাকা/সুফী/এমএম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়