প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিংয়ে ম্লান সিরিজ জয়ের আনন্দ
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আনন্দে কোথায় রঙ বেরঙয়ের ফানুশ উড়ানোর কথা, আতশবাজি পুড়িয়ে উৎসব করার কথা, হৈ হুল্লোড় আর ‘আমরা করবো জয় গানে’ ড্রেসিংরুম মাতিয়ে রাখার কথা...। কিন্তু সেসব কিছুই হলো না মিরপুরের সবুজ গালিচায়।
৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের ট্রফি হাতে নিয়েও ম্লান মাহমুদউল্লাহর মুখের হাসি! অফিসিয়াল ফটোসেশনের জন্য যতটুকু করা দরকার, ততটুকু করতেই হয়। বাকিটা সময় মিরপুর যেন মৃত্যুপুরী। প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিংয়ে ম্লান সিরিজ জয়ের অর্জন। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের হার ২৭ রানে। নিউ জিল্যান্ড ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে রান উৎসব করে ৫ উইকেটে ১৬১ রান করে। জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ১৩৪ রানে।
বারবার বলা হচ্ছিল, মিরপুরের ধীর গতির, অসমান বাউন্সের উইকেটে খেলে কতটুকু উপকার পাচ্ছে বাংলাদেশ? অস্ট্রেলিয়া সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জয় ও নিউ জিল্যান্ড সিরিজেও একই উইকেটে খেলে, জিতে কী লাভটা হলো! টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা সংশ্লিষ্টরা আশা দেখিয়ে বারবার বলেছে, ‘ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিংও ভালো হবে।’ বাংলাদেশের ব্যাটিং ও স্কোরকার্ড স্পষ্ট বলে দিচ্ছে, এতদিন শুধু আশাই দেখিয়েছে স্বাগতিকরা।
সতেজ উইকেট। আগের চার ম্যাচে যেখানে একটি বলও পড়েনি, তেমন উইকেট দেওয়া হলো পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে। হয়তো কিউরেটর গামিনি ডি সিলভাও দেখতে চেয়েছিলেন, একটু ভালো উইকেটে বাংলাদেশ কেমন করে দেখা যাক! নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের ব্যাটিং মাথার ব্যথার বড় কারণ। বিশেষ করে টপ অর্ডাররা যেভাবে পারফর্ম করছে তাতে নিবেদন নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলা যায়। চার ম্যাচ পর দলে ফেরা সৌম্য (৪) যেমন ব্যাটিংয়ের বেসিকটাই ভুলে গিয়েছিলেন। লিটন (১০), নাঈমরা (২৩) তো আসা-যাওয়ার মিছিলে। দলের ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিক (৩) নিজের ছায়া হয়েই রইলেন। সব মিলিয়ে পাঁচ ম্যাচে ৩৯ রানে শেষ তার হতশ্রী সিরিজ।
যতুটুক লড়াই করেছেন ওই আফিফ হোসেনই। তার ৩৩ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৯ রানের ইনিংস বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং চিত্রর পুরোপুরি উল্টো। সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর ২১ বলে ২৩ রানের ইনিংসে সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান ১২০!
বাংলাদেশ যে উইকেটে তালগোল পাকানো ব্যাটিং করেছে সেখানে নিউ জিল্যান্ড রানের পসরা সাজিয়ে বসেছিল। ওপেনার ফিন অ্যালেন ২২ গজে ঝড় তুলেছেন। ২৪ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে তোলেন ৪১ রান। শরিফুল ইসলামের এক ওভারে অ্যালেন ২ চার ও ১ ছক্কা ও রবীন্দ্রর ১ চারে ১৯ রান পায় কিউইরা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের রান ২ উইকেটে ৫৮। অ্যালেনের ঝড়ো শুরুর পর মধ্যভাগে ইনিংস টেনেছেন অধিনায়ক ল্যাথাম। ৩৭ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৫০ রানের ইনিংস কিউইদের দেয় বিশাল সংগ্রহ।
শেষ দিকে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন নিকোলস। ২১ বলে করেন ২০ রান। এছাড়া ম্যাককনচি ১০ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৭ রান করে স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করেন। প্রথম চার ম্যাচে মাত্র ৪ ছক্কা হাঁকানো নিউ জিল্যান্ড আজকেই হাঁকিয়েছে ৬টি ছক্কা। ধীর গতির উইকেট শুধুমাত্র টাইমিং মেলাতে পারেনি তারা। একটু ভালো উইকেটে তারা যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারত তার প্রমাণ মিলল মিরপুরে। ৩-২ এ সিরিজ জয় বাংলাদেশের পক্ষে কতটুকু কাজে আসল তা বিরাট প্রশ্নই থেকে যাচ্ছে।
পরীক্ষা নিরীক্ষা কি পরাজয়ের কারণ? এমন অজুহাত হতে পারে না। কারণ সাকিব, মোস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন ও মেহেদী হাসানের পরিবর্তে দলে আসা সৌম্য, শামীম, শরিফুল ও তাসকিনকে নিয়েই তো বাংলাদেশ যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সিরিজ নিশ্চিতের পর বেঞ্চের পরীক্ষা করানোর সাহসই যদি না করে, তাহলে বিশ্বকাপ গিয়ে কী করবে বাংলাদেশ?
নিউ জিল্যান্ড চতুর্থ ম্যাচ হারের পর এক কিউই পেসার টুইট করেছিলেন, ‘এমন উইকেটে ম্যাচ খেলে, জিতে কতদূর যাবে বাংলাদেশ?’ প্রশ্নটা অযৌক্তিক ছিল না নিশ্চয়ই।
ঢাকা/ফাহিম
আরো পড়ুন