ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভবিষ্যতের সাকিব-মুশফিক তৈরি করতে বাংলাদেশে এসেছি: টাইবু

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ২০:০২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
ভবিষ্যতের সাকিব-মুশফিক তৈরি করতে বাংলাদেশে এসেছি: টাইবু

বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠের ড্রেসিংরুম থেকে উঁকি দিয়ে টাটেন্ডা টাইবু জানতে চাইলেন, ‘আপনাদেরই কি আসার কথা?’ হ্যাঁ, উত্তর দিতেই হাসিমুখে বললেন, ‘এখন মধ্যাহ্ন বিরতি। ৩০ মিনিট পর ফিরে এসে চুটিয়ে কথা হবে।’

যেমন কথা তেমন কাজ। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে ফিরে এসে মোবাইল ফ্লাইট মুডে দিয়ে জিম্বাবুয়ে কিংবদন্তি মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়িয়ে গেলেন ক্যামেরার সামনে। সেই মুক্তামাখা হাসি, শুদ্ধ সরল চাহনি, কণ্ঠে পরমানন্দ ও শারীরিক ভাষায় প্রফুল্লতা দেখে বোঝাই যাচ্ছিল কথার ঝাঁপি খুলতে যাচ্ছেন তিনি। ২৯ মিনিটের সাক্ষাৎকারে উঠে আসলো তার ক্যারিয়ার, বাংলাদেশের ক্রিকেট, বিকেএসপির কোচিং, নোংরা রাজনীতির কারণে থমকে যাওয়া তার ক্যারিয়ার ও সমসাময়িক অনেক কিছু।

রাইজিংবিডির ক্রীড়া প্রতিবেদক ইয়াসিন হাসানের মুখোমুখি হয়ে দীর্ঘ আড্ডা জমালেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হচ্ছে আজ:

বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করছেন। পেশাদারিত্ব দেখিয়ে করছেন অবশ্যই। তবুও জানতে চাওয়া, নিজ দেশের হয়ে কাজ করলে কি আরও ভালো অনুভূতি হতো না …

টাটেন্ডা টাইবু: অবশ্যই (ভালো) অনুভূতি হতো। দেশের হয়ে কাজ করার বিকল্প কিছু হতে পারে না। কিন্তু দেশের সঙ্গে আমার অনেক দূরত্ব, অনেক সমস্যাও রয়েছে। সেসব নিয়ে অনেক ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে। দেখুন ক্রিকেটাঙ্গনে নিশ্চয়ই আমার আলাদা পরিচিতি রয়েছে, সম্মান রয়েছে। কিন্তু দেশে সেই সম্মান কখনো পাইনি। এখানে এসে সেই সম্মান পাচ্ছি। মানুষ টাকা চায়, বাড়ি-গাড়ি চায়। কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সম্মান। আমি যেখানে সম্মানিত হব, যেখানে আমার মূল্যায়ন হবে সেখানে আমি কাজ করে আনন্দ পাব। বাংলাদেশের কথাই ধরুন, এখানকার মানুষ ক্রিকেট বোঝে। তারা আমার অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করছে। সম্মান দিচ্ছে। এখানে কাজ করার পরিবেশ আছে। সেজন্য এখানে আসা। 

মাসখানেক হলো এখানে এসেছেন। কতটা মানিয়ে নিতে পেরেছেন এবং ছাত্র-ছাত্রী যাদের পেয়েছেন তাদের দেখে কী মনে হচ্ছে?

টাটেন্ডা টাইবু: প্রথমত যেটা বলতে চাই, এখানকার সুযোগ-সুবিধা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বিশ্বের অনেক দেশ ঘুরেছি। ক্রিকেটের অনেক সুযোগ-সুবিধা দেখেছি। বিশ্বজুড়ে যেসব দেখে অভ্যস্ত হয়েছি, বিকেএসপিতে সব পেয়েছি। খেলোয়াড় যাদের সঙ্গে কাজ করছি তাদের দেখে অভিভূত। ক্রিকেটকে মন থেকে ভালোবাসে। জীবন দিয়ে পরিশ্রম করে। প্রচুর প্রশ্ন করে, জানতে চায়। এজন্য কাজ করে আনন্দ পাচ্ছি। আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালোমানের খেলোয়াড় প্রস্তুত করতে পারব।

আপনি নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন, সাকিব-মুশফিকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল এটি। এখান থেকে প্রতি বছরই ক্রিকেটার বের হয়, যারা অনেকেই জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করে। আপনার দায়িত্বটা এখন বিশাল চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেল না?

টাটেন্ডা টাইবু: মোটেও না। এখানে চ্যালেঞ্জিংয়ের কিছু নেই। এরকম সুযোগ-সুবিধায় কিছু ক্ষুধার্ত ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করছি। তাদের নিবেদন দেখে আমি আশ্চর্য। আমি শতভাগ আত্মবিশ্বাসী এখান থেকে ভবিষ্যতের সাকিব, মুশফিক বেরিয়ে আসবে যারা শুধু বাংলাদেশকেই প্রতিনিধিত্ব করবে না বরং বিশ্ব ক্রিকেটে সমাদৃত হবে।  

বাংলাদেশের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আপনার কেমন মনে হচ্ছে? এখানকার সুযোগ সুবিধা কেমন এবং উন্নতির জন্য আর কী করা উচিত?

টাটেন্ডা টাইবু: এখানে বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা আছে। যা ক্রিকেটারদের বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগেও বলেছি ক্রিকেটীয় সুযোগ-সুবিধাও দারুণ। আবার স্থানীয় যারা কোচ আছেন তারা প্রত্যেকে ক্রিকেটটাকে মন দিয়ে ভালোবাসেন। পরিচালনা পরিষদে যারা আছেন তারা খেলা ভালোবাসেন, বিকেএসপিকে ভালোবাসেন। এটা দেখে ভালো অনুভূতি হয়। যে জিনিসটির উন্নতির প্রয়োজন অনুভব করছি তা হলো, দীর্ঘ মেয়াদে একটি পরিকল্পনা দরকার। তাদের পরিকল্পনাও আছে। আমি বোঝাতে চাচ্ছি যেমন, দশ বছরে আমাদের কী করতে হবে। সেই মোতাবেক পরিকল্পনা করে পাঁচ বছর পর কতটুকু পেরেছি, তিন বছর পর কতটুকু এগিয়েছি, এরপর দুই-এক বছর… এরপর মাস, সপ্তাহ, দিন হিসেব করে কতটুকু এগিয়েছি সেসব মূল্যায়ন করতে হবে। আমি মনে করি এই কাঠামো তৈরি করার এখনই সেরা সময়।

এবার একটু খেলাধুলা নিয়ে কথা বলি… ২০০৫ সালে আপনার নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশে এসেছিল। সেবার প্রথম টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?

টাটেন্ডা টাইবু: আমার সব মনে আছে। চোখের সামনেই সব হয়েছিল। বাংলাদেশ জিতল। আমরা হেরেছি বলেই বলছি না, আমরা আনন্দিত ছিলাম যে টেস্ট অঙ্গনে আরেকটি দল এসেছে যাদের সম্ভাবনা আছে, যারা জিততে পারে। মনে আছে, সেই সিরিজে আমি প্রচুর রানও করেছিলাম। আমার বন্ধু এনামুল হক জুনিয়র সিরিজ সেরা হয়েছিল। দুই ম্যাচে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছিল সে। সেই সফরে প্রচুর বন্ধুও তৈরি করেছিলাম।

সেই সফরেই আপনি একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ঢাকায় ১৫৩ রান করেছিলেন। প্রায় ৬ ঘণ্টা ব্যাট করে ম্যাচ বাাঁচিয়েছিলেন। সেই ইনিংসটির কথা মনে আছে?

টাটেন্ডা টাইবু: আমার স্মরণীয় একটি টেস্ট ছিল সেটি। ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ম্যাচটা হয়েছিল। আমি সেঞ্চুরি করি। ডগলাস হোন্ডোর সঙ্গে আমার বিশাল একটি জুটি হয়েছিল। আমি জানি, সেই টেস্টের পর আমি বাংলাদেশে প্রচুর শত্রু তৈরি করেছিলাম। বিশেষ করে তরুণ যারা টিভিতে, গ্যালারিতে দেখেছিল আমায়। কিন্তু তারা এখন হয়ত বুঝতে পারছে, সেটা একটা ম্যাচই ছিল শুধু।  

বাংলাদেশে সাবেক কিংবা বর্তমান কোনো ক্রিকেটারের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ রয়েছে?

টাটেন্ডা টাইবু: একটু আগে বললাম না, আমার অনেক বন্ধু হয়েছিল। আমি যখন ক্যারিয়ার শুরু করি আমার কোচ ছিলেন বিল ফ্লাওয়ার। তিনি আমাকে একদিন বলেছিলেন, তুমি যদি ক্রিকেট খেল তাহলে সারাবিশ্বে প্রচুর বন্ধু তৈরি করতে পারবে। সত্যিই এমনটা হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান দলে বেশ কয়েকজন ভালো বন্ধু রয়েছে এবং প্রাক্তন অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। 

২০০৫ সালের সেই বাংলাদেশ ও এখনকার বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য করলে কী বলবেন?

টাটেন্ডা টাইবু: আমি মনে করি ২০০৫ সালের দলটি বাংলাদশ ক্রিকেট উত্থানের সূচনার অগ্রদূত ছিল। বর্তমান দল ওই দলের সাফল্য ধরে রেখেছে। ২০০৫ সালের দলটি দেশে ও বিদেশে সফর করেছে এবং ভালো ক্রিকেট খেলে নজর কেড়েছে। বর্তমান ছেলেরা সেই সুফল পাচ্ছে এবং সাফল্য ধারা অব্যাহত রেখেছে। তারা যেটা করেছে, সাফল্যর ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে এবং প্রতিটি সিরিজে সাফল্যর পালক যুক্ত করেছে। আমি বিশ্বাস করি সামনের দশ বছরে তারা আরো সাফল্য নিজেদের ভাণ্ডারে যুক্ত করবে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা আপনার সেরা মুহূর্ত কোনটিকে বলবেন?

টাটেন্ডা টাইবু: অবশ্যই ১৫৩ রানের ইনিংসটির কথাই বলব। যেটা আমার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্কোর। তাও দেশের বাইরে। মনে আছে ঢাকা স্টেডিয়ামে ম্যাচটা হয়েছিল। যেটা এখন আর ক্রিকেট মাঠ নেই।

ওই ইনিংসের পর কি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে পা রেখেছিলেন?

টাটেন্ডা টাইবু: নাহ, আসলে সুযোগ হয়নি। ঢাকায় এসে তো অবাক। সব কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। মেট্রোরেল হচ্ছে। আমি তা দেখতে মুখিয়ে আছি। 

মাশরাফিকে খেলেছিলেন। সাকিব, তামিম, মুশফিকদেরও পেয়েছেন। তারা বিশ্ব ক্রিকেটে এখন বড় নাম। যখন তাদের দেখেছিলেন, তখন কি মনে হয়েছিল তারা এতটা বড় খেলোয়াড় হবে? 

টাটেন্ডা টাইবু: হ্যাঁ, সাকিবকে দেখে মনেই হয়েছিল বড় কিছু হবে। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়েতে গিয়েছিল ‘এ’ দলের হয়ে। তাকে অনুশীলনে দেখে মনে হয়েছিল, ছেলেটা খেলতে পারে। পরে ম্যাচে দেখতে পেলাম তার মাথা খোলা।

তামিমকে দেখার স্মৃতিও মনে আছে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলতে এলাম। তামিম আমাদের প্রতিপক্ষ দলে। জাতীয় দলে তখনও অভিষেক হয়নি। এক ম্যাচে সে ৮৮ রানের মতো করেছিল এবং দশম ওভারে আউট হয়েছিল। ৩৫০ রানের মতো হয়েছিল সেদিন। আমিও সেই ম্যাচে রান পেয়েছিলাম। কল্পনা করুণ ওই বয়সে একটি ছেলে এভাবে মারতে পারে! তার বিশেষ গুণ যে ছিল বোঝাই গিয়েছিল।

আমার মুশফিকের কথা বেশি মনে আছে। ষোলো বছরের কিশোর একটা ছেলে। আমি একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিলাম তার বিপক্ষে। আমি তাকে মাঠে জিজ্ঞাসা করি, তোমার বয়স কত? ও জানায়, ১৬। একদমই বাচ্চা ছিল! (হাসি)। আমি তারপর তাকে অভয় দিয়ে বলি, তুমি ভালো করছ। তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কঠোর পরিশ্রম করবে।

তাদের বর্তমান অবস্থায় দেখে ভালো লাগে। তাদের সঙ্গে দেখা হলে নিশ্চয়ই এগুলো বলব। সঙ্গে বলতে চাই একটা কথা, সহজাত প্রতিভা সবারই আছে। তবে সেটাকে বড় মঞ্চের জন্য তৈরি করতে হয়।

আর মোহাম্মদ আশরাফুল তখনই সুপারস্টার ছিল। কিন্তু ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে ২০১২ সালের পর আর ক্যারিয়ার বড় করতে পারল না। তাকে নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

টাটেন্ডা টাইবু: আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম যখন এগুলো হলো। আশরাফুল আমার খুবই ভালো বন্ধু। হয় না! দুই বন্ধুর মধ্যে পেছনের কথা নিয়ে কেউ কথা বলে না। আমারও তার সঙ্গে এই ইস্যুতে কোনো কথা হয়নি। এটা এমন একটা ঘটনা যেগুলো নিয়ে কথা বলার প্রয়োজনও হয় না। আমরা এখনও ভালো বন্ধু। দুইজন একসঙ্গে অনেক ম্যাচ খেলেছি।  

আপনার কাজ বিকেএসপির তরুণ ক্রিকেটারদের বড় মঞ্চের জন্য প্রস্তুত করা। সেই কাজ করার ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ কী দেখছেন। ছেলে-মেয়েদের কী বার্তা দিচ্ছেন?

টাটেন্ডা টাইবু: আমি যে বার্তা ওদেরকে ছড়িয়ে দিচ্ছি তা হলো, কঠোর পরিশ্রম করলে তুমি কোনোদিনও পিছিয়ে থাকবে না। আমি চাচ্ছি ওরা যেন নিজের মতো করে সব কিছু শিখতে পারে। আমি তাদের গাইড করব, তৈরি করব। তবে তাদের বিশ্বাস নিজ থেকে তৈরি হতে হবে। তবে আমার পরিচালনা পরিষদ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জন্য বার্তা রয়েছে, তারা যেন ক্রিকেটারদের দিকে আরেকটু মনোযোগী হয়। কারণ তারা ক্রিকেটারদের তৈরি করতে বড় ভূমিকা রাখে। এজন্য ক্রিকেট কর্তারা যদি ক্রিকেটারদের নিয়ে বাড়তি আগ্রহ, উদ্দীপনা দেয় তাহলে উন্নতিগুলো আরো চোখে পড়বে। 

আপনি বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছেন। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছে টেস্টে সেভাবে পারিনি। এখনও তলানিতেই আছে। দেশে কয়েকটি টেস্ট জিতলেও বিদেশে নাকানি চুবানি খাচ্ছে। কী মনে হয়, টেস্টে উন্নতির জন্য কোথায় বেশি জোর দেওয়ার প্রয়োজন?

টাটেন্ডা টাইবু: আমি মনে করি, উইকেট বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ফাহিম (নাজমুল আবেদীন) ও আমি কিছুদিন ধরেই এটা নিয়ে আলোচনা করছি। আমি মনে করি, বিসিবির যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ রয়েছে যা দিয়ে তারা দুটি স্টেডিয়ামের উইকেট একেবারে বাউন্সি উইকেটে বানাতে পারে। তাহলে খেলোয়াড়রা সেসব উইকেটে খেলে অভ্যস্ত হবে। শুধুমাত্র একই কাজটা করলে আমি মনে করি বিদেশের মাটিতে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে না। তবে এরকম নিচু উইকেটে খেললে বিদেশের মাটিতে আপনাকে ভুগতেই হবে। বাউন্সি উইকেটে কিন্তু আপনি শুধু ব্যাটসম্যানই পাবেন না, ভালোমানের পেস বোলারও পাবেন। ফলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে যাবে।  

টেস্ট ক্রিকেট কি শুধুই টেম্পারমেন্ট নাকি বেসিক ক্রিকেটও? শেবাগ তো কোনোদিনও টেম্পারমেন্ট দেখাননি। বেসিক ক্রিকেট খেলে সফল হয়েছেন। আবার আপনার কথাই ধরুন, টেম্পারমেন্টকে আপনি আপনার নামের সমার্থক শব্দ বানিয়ে ফেলেছিলেন। জানতে চাচ্ছি, সাদা পোশাকের ক্রিকেট কীভাবে খেলা উচিত বলে মনে করেন?

টাটেন্ডা টাইবু: আমি আসলে আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই, ধৈর্য জিনিসটা কী? দেখেন কোচরা যে ভুলটা করে, প্রত্যেককে একই দাঁড়িপাল্লায় মেপে সবাইকে এক টোটকা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এখানে যাদেরকে আমি পেয়েছি তাদের কথাই বলছি, কেউ কেউ তারা আগ্রাসী মনোভাবে ব্যাটিং করে, কেউ কেউ রক্ষণাত্মক। আমি তাদেরকে সেভাবেই গড়ে তুলছি।

এবার আসছি প্রশ্নের উত্তরে, দেখুন প্রত্যেককে তার স্বাভাবিক খেলার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। আপনি যখন আক্রমণে যাবেন তখন আপনাকে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে আক্রমণ করতে হবে। সেটা টেস্ট ক্রিকেটে হোক বা সাদা বলের ক্রিকেটে হোক। আপনার ইতিবাচক মানসিকতা আপনাকে এগিয়ে নেবে।

টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করতে পারে এমন ব্যাটসম্যান তৈরি করার কাজটা কি করছেন?

টাটেন্ডা টাইবু: আপনি যখন একটি বাইসাইকেল নিয়ে ভ্রমণে বের হবেন তখন আপনাকে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন উপদেশ দেবে। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে বাইসাইকেল কীভাবে চালাতে হবে। সেটা বাইসাইকেল চালিয়েই বুঝতে হবে। ক্রিকেটাররাও ক্রিকেট খেলেই অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। এখন একটাই কাজ, অনুশীলন। সঙ্গে আমি প্রচুর তিনদিনের ম্যাচ খেলাচ্ছি যেটা দিয়ে তারা বড়দের ক্রিকেটের অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। খেলার ও অনুশীলনের বিকল্প নেই।

আধুনিক ক্রিকেটে এখন অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। পাওয়ার হিটিং ছাড়া সাফল্য মিলে না। ব্যাটিংয়ে শক্তির পাশাপাশি শারীরিক শক্তিরও প্রয়োজন হয়। সেদিকে কি মনোযোগ দিচ্ছেন?

টাটেন্ডা টাইবু: ব্যাটিংয়ে আমি চারটি দিকে মনোযোগ দিচ্ছি; এক, টেকনিক্যাল। দুই, ট্যাকটিক্যাল। তিন, ফিজিক্যাল। চার, মেন্টাল। কোচদের সম্মান দিয়েই বলছি, অনেকেই মূল তিনটি কাজ করে টেকনিক্যাল, ট্যাকটিক্যাল এবং ফিজিকাল। কারণ আপনি যে কোনো ক্রিকেটারকে খালি চোখে মূল্যায়ন করছেন। মনে হয়, এই খেলোয়াড়কে শক্তিশালী হতে হবে। আবার কাউকে দেখে মনে হয়, তার ওজন কমানোর প্রয়োজন, ফিট হওয়া প্রয়োজন। কারণটা হচ্ছে, আপনি তাকে খালি চোখে মূল্যায়ন করছেন। আবার ব্যাটিংয়ে তার টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল বিষয়গুলো আপনি খালি চোখেই দেখছেন। তার শট দেখে মনে হচ্ছে এটা এভাবে না ওভাবে খেলা উচিত ছিল। কিন্তু অনেকেই একটা জিনিস মিস করে তা হলো, মেন্টাল ফিটনেস। আমি আমার দলগত বৈঠকে এটা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছি। আমরা সবগুলো উপদান কাভার করার চেষ্টা করি। এই চারটি উপাদান একসঙ্গে পাওয়া গেলে ব্যাটিংয়ে আপনি সব শক্তিই পেয়ে যাবেন।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়