ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ক্রিকেট গুরুর শেষযাত্রায় বৃষ্টি আর অশ্রু মিশে একাকার

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ২১:৩৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি থেকে স্ট্রেচারে শোয়ানো সাদা কাপড়ে মোড়ানো জালাল আহমেদ চৌধুরীর মৃতদেহ নামানো না হতেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঝরতে থাকে মৃদু বৃষ্টি। মাটিতে রাখা হবে কি হবে না এমন দ্বিধা আর সংশয়ের মধ্যে আকাশের কান্না থামল। মাটিতে নামানো হলো নিথর দেহ। মেঘের ফাঁক থেকে দেখা মিলল সূর্যের আলোর। স্বনামধন্য ক্রিকেট কোচ ও ক্রিকেট লেখক জালাল আহমেদের শেষ বিদায়ে শরতের বিষণ্ন বিকেলে বৃষ্টি আর চোখের পানি মিশে যেন একাকার।

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই ক্রিকেট গুরু। বিকালে সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজা। জানাজা শেষেই নিয়ে যাওয়া হয় আজিমপুরের উদ্দেশে, সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে।

জালাল আহমেদের প্রথম জানাজায় সাবেক ক্রিকেটার, কোচ হতে শুরু করে গণমাধ্যমকর্মীরা সমবেত হন। ক্রিকেট কোচের বাইরেও ক্রিকেট লেখক হিসেবে ছিল তার খ্যাতি। সেই সুবাদে দেশের সবকটি গণমাধ্যমের ক্রীড়া সাংবাদিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

এই ক্রিকেট গুরু কোচিং করিয়েছেন জাতীয় দলেরও। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জয়ী দলটি তৈরি করেছিলেন তিনি। তার অধীনেই শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। পরবর্তীতে দায়িত্ব পান গর্ডন গ্রিনিজ। কিন্তু তার জীবনের চিরকালীন আক্ষেপ ছিল, ১৯৯৭ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটির সংবর্ধনায় তার নামটা একবারও উচ্চারিত করেনি দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। 

আজ ছিল বোর্ডের ১২তম সভা। দুপুরে শুরু হওয়া সভা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকরা। জালাল আহমেদকে সম্মান জানাতে বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হাজির হননি। আসেননি খেলা চালিয়ে যাওয়া ক্রিকেটাররাও। তবে আজিমপুরে দ্বিতীয় জানাজায় অংশ নিয়েছেন বিসিবির পরিচালক আহমদ সাজ্জাদুল আলম ববি।

উপস্থিত ছিলেন সাবেক ক্রিকেটার গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, সাবেক কোচ ও জালাল আহমেদের বন্ধু ওসমান খান, দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠেনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। পরিবারের পক্ষ থেকে ছিলেন জালাল আহমেদের ভাই বাবু। মৃতদেহ সামনে রেখে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন লিপু-ওসমানরা।

গাজী আশরাফ বলেন, 'আসলে আমরা যারা আশির দশকের ক্রিকেটে ছিলাম, নব্বই ও এই একবিংশ শতাব্দির প্রথম দশকেও যারা ক্রিকেটে ছিল আমার বিশ্বাস তাদের খুব নাড়া দিবে (জালাল আহমেদের মৃত্যু)। আমার বিশ্বাস এখনকার ব্যাচেরও অনেকে জালাল ভাইয়ের অধীনে কোচিং করেছিল। আমাদের ক্রিকেটে আইসিসি ট্রফি জয়কে যদি সেরা সাফল্য ধরা হয় তবে জালাল ভাই, ওসমান ভাইদের মতো কোচরা নেপথ্যে ছিলেন।'

জালাল আহমেদকে অবহেলার অভিযোগ করে বিষাদ মাখা কণ্ঠে সাবেক এই ক্রিকেটার আরও বলেন, 'তিনি আমাদের কাছে পিতৃতুল্য, কখনও ভ্রাতৃতুল্য কোচ ছিলেন। এটা আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি, ক্ষেত্রবিশেষে তাকে আমরা আরও ভালোভাবে ব্যাবহার করতে পারতাম, তার মেধাকে কাজে লাগাতে পারতাম, আমরা সেই সুযোগের কিছুটা অপচয় করেছি এবং তাকে অবজ্ঞা বা অবহেলা করা হয়েছে। কিন্তু তার যে স্থান সেটা যারা তাকে চিনেন তাদের কাছে অম্লান থাকবে।'

কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাবেক কোচ ও জালাল আহমেদের বন্ধু ওসমান খান, 'জালাল ভাই বলতেন ওসমান আস ক্রিকেটের জন্য কিছু করি। পাতিয়ালায় আমরা দুইজন যখন কোচিং কোর্স করি, ওখান থেকে এসে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞাণে চেষ্টা করেছি সব শুধরানোর জন্য। আমরা কিন্তু টাকা পয়সার দিকে তাকাইনি। এখন কতটুকু করেছি তা আমরা বলতে পারব না, যারা দেখেছেন তারা বলবে। আমাদেরকে মূল্যায়নের ব্যাপারে যারা ছিলেন তারা হয়তো সেভাবে মূল্যায়ন করতে চাননি, কিন্তু তাতে আমাদের দুঃখ নেই। আমরা ক্রিকেট থেকে যা পেয়েছি তাতেই খুশি।'

জানাজা শুরুর আগে উপস্থিত সবার উদ্দেশে পরিবারের পক্ষ থেকে কথা বলেছেন জালাল আহমেদের ছোট ভাই বাবু। তিনি সবার কাছে তার আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া চেয়েছেন। কোনো ভুল ত্রুটি করে থাকলে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। জানাজা শেষে বিভিন্ন সংগঠন থেকে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপণ করা হয়।

এরপর জালাল আহমেদের নিথর দেহ বহনকারী ফ্রিজিং গাড়ি করুণ সুর বাজিয়ে ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় দাঁড়ানো জালাল আহমেদের ভাই-বন্ধু-সহকর্মী অশ্রুতে বিদায় জানান তাকে।

ঢাকা/রিয়াদ/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়