ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রূপকথাকে হার মানানো শেষ ওভার!

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:৩৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১
রূপকথাকে হার মানানো শেষ ওভার!

কী বলবেন, ক্রিকেট এমনই! যার পরতে পরতে থাকে উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ। তবে দুবাইয়ে পাঞ্জাব কিংস ও রাজস্থান রয়্যালসের ম্যাচে যা হলো, তা তো হজম করাই কঠিন। রূপকথার গল্পও লেখা যেতে পারে এই ম্যাচের শেষ ওভার নিয়ে, যেমনটা লেখা হয়েছিল ডেভিড-গোলিয়াথের কাহিনী নিয়ে, যেখানে মহাপরাক্রমশালী গোলিয়াথকে হারিয়ে দেয় খুদে ডেভিড। মঙ্গলবারের ম্যাচে গোলিয়াথ ছিল পাঞ্জাব, আর ডেভিড রাজস্থান, না, কার্তিক ত্যাগী। প্রতিপক্ষের হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রাখা ম্যাচ বের করে এনে নায়ক তো এই তরুণ পেসারই।  

১৮৬ রানের লক্ষ্যে পাঞ্জাব ১৮ ওভারেই করে ফেলে ১৭৮ রান, যাতে লোকেশ রাহুল ও মায়াঙ্ক আগারওয়ালের শতাধিক রানের জুটির সবচেয়ে বড় অবদান। ১৯তম ওভারে অর্ধশতাধিক রানের অপরাজিত জুটিতে ক্রিজে নিকোলাস পুরান ও এইডেন মার্করাম। ১২ বলে পাঞ্জাব কিংসের দরকার ৮ রান। আগের ৩ ওভারে ২৮ রান দেওয়া মোস্তাফিজুর রহমান বল হাতে নিলেন শেষ ওভারের আগেরটিতে। একের পর এক ইয়র্কার আর বৈচিত্রপূর্ণ বোলিংয়ে প্রথম দুটি ডট দেওয়ার পর শেষ চার বলে চারটি সিঙ্গেল। পাঞ্জাবের প্রয়োজন শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান, হাতে ৮ উইকেট।

তিনটি ক্যাচ ড্রপে জীবন পেয়ে ৪৯ রান করা অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ড্রেসিংরুমে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সেরা পারফরম্যান্সে আইপিএলে ৩ হাজার রানের মাইফলক ছোঁয়া ওপেনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জয় উদযাপন করার। ডাগআউটে কোচ অনিল কুম্বলের মুখেও হাসি! এই পরিস্থিতিতে তো তা-ই হওয়ার কথা।

বল হাতে নিলেন আগের ৩ ওভারে ২৮ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকা কার্তিক ত্যাগী, যার ভারত পর্ব কেটেছে ইনজুরিতে মাঠের বাইরে থেকেই। যখন ফিরেছেন, এক ম্যাচ খেলার পরই করোনার থাবায় স্থগিত আইপিএল। একেবারে অনভিজ্ঞ একজনের হাতে বল উঠল। কিন্তু নিজেকে প্রমাণের সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি ২০ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার।

স্ট্রাইকে ২৫ রানে অপরাজিত থাকা মার্করাম, অন্য প্রান্তে ৩২ রানে দাঁড়িয়ে নিকোলাস পুরান। একটি চার মারলেই হিসাব-নিকাশ শেষ। কার্তিকের ফুল টসে ড্রাইভ করলেন মার্করাম, কিন্তু কভারে দাঁড়ানো ফিল্ডারকে অতিক্রম করতে পারেননি। দ্বিতীয় বলটিও ফুল ছিল, মিডউইকেট দিয়ে মার্করামের স্লগ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে ফিল্ডারের হাতে। মাত্র একটি সিঙ্গেল।

তখনো পাঞ্জাবের জানা ছিল না, এটিই তাদের শেষ রান। চার বলে লাগে ৩ রান। কার্তিকের ওভারপিচ বল আউটসাইড অফে, পুরান থার্ড ম্যানে শট খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল ব্যাটে খোঁচা দিয়ে সোজা উইকেটকিপার সাঞ্জু স্যামসনের গ্লাভসে। ৩ বলে প্রয়োজন ৩ রান। কার্তিক ফুল অ্যান্ড ওয়াইড বল করলেন অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে। দীপক হুদার ব্যাটে বল না লাগলেও আম্পায়ার ওয়াইড না দিয়ে বৈধ বল ঘোষণা করলেন। কারণ হুদা অফসাইডের দিকে সরে এসেছিলেন। আরেকবার একই বল, এবার হুদার ব্যাট ছুঁয়ে স্যামসনের হাতে। শেষ বলে স্ট্রাইকে ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, আবারও ফুল অ্যান্ড ওয়াইজ, ব্যাটে বলে সংযোগ হলো না। অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে ৫টি ডট দিয়ে ও দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হলেন অনূধ্র্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা এই টিনএজার।

রাহুল-কুম্বলেদের স্বস্তি কেড়ে নিয়ে বিজয়ের হাসি হাসে রাজস্থান। অথচ ২০০৯ সালে নিজেদের সাফল্যের কথা মনে রাখলে সতর্ক হতে পারত পাঞ্জাব। ওই বছর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে শেষ ওভারে ৪ রান ডিফেন্ড করে তাদের জেতান মুনাফ প্যাটেল।

পাঞ্জাব অধিনায়ক রাহুল ম্যাচ শেষে বললেন, ‘এটা হজম করা কঠিন। চাপ আরও ভালোভাবে সামাল কেমন করে দেওয়া যায়, আমাদের শিখতে হবে।’ অন্যদিকে কার্তিকের মনে সুখ আর ধরে না, ‘অনেক খুশি। আইপিএল ২০২১ এর ভারত লেগে আমি ইনজুরিতে ছিলাম এবং যখন সেরে উঠলাম তখন টুর্নামেন্ট স্থগিত হলো। আজ সুযোগ পেয়ে খুব খুশি। শেষ কয়েক ওভারে সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সবাই বলেছে খেলা যে কোনো সময় পাল্টে যেতে পারে। আমি জানতাম ডেথ ওভারে বল করার দক্ষতা আমার আছে।’  

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়