ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘যাযাবর’ উইজ নামিবিয়ার রূপকথার নায়ক

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ২২ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ২১:৫৭, ২২ অক্টোবর ২০২১
‘যাযাবর’ উইজ নামিবিয়ার রূপকথার নায়ক

অ্যালবি মর্কেল ও ডেভিড উইজ দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলেন। অনেকক্ষণ জড়িয়ে রাখলেন। দুজনের চোখে মুখে আনন্দ, উচ্ছ্বাস, বড় কিছু পাওয়ার গর্ব। লম্বা চুলের উইজ নিশ্চয়ই এক সময়কার সতীর্থ ও বর্তমানে কোচ অ্যালবি মর্কেলকে বলেছেন, ‘মিশন সাকসেসফুল।’ 

সত্যিই কি তাই নয়! এইতো ৫ অক্টোবর নাবিমিয়ার জার্সিতে অভিষেক হয় ৩৬ বছর বয়সী উইজের। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৬ ওয়ানডে ও ২০ টি-টোয়েন্টির মতো খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুই দেশের হয়ে খেলার নজীর আগেও আছে। উইজ সেই তালিকার নব সংযোজন। আর নতুন জার্সি গায়ে জড়িয়ে দেশটির রূপকথার নায়ক হয়েছেন এই পেস অলরাউন্ডার। 

রূপকথার নায়ক কেমন হয়? আসবেন, দেখবেন, জয় করবেন. . .এই তো! উইজ তেমনই কিছু করলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে। বুধবার নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে নামিবিয়া বৈশ্বিক ক্রিকেটের মঞ্চে প্রথম জয়ের স্বাদ পায়। জয়ের নায়ক উইজ। যেমন ব্যাটিং তেমন বোলিং। ব্যাট হাতে ৬৬ রান, বল হাতে ১ উইকেট। শুক্রবার মঞ্চটা আরো বড়। তার পারফরম্যান্সের গভীরতা আরো বিশাল। ব্যাটিংয়ে ২৮ রান, বোলিংয়ে ২ উইকেট। দুই ম্যাচেই নায়ক তিনি। আর শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তুলে উইজ নামিবিয়াকে নিয়ে গেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্ব বা সুপার টুয়েলভে। 

শারজাহতে উইজ যখন জয়সূচক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে তুলেছেন সুপার টুয়েলভে তখন নামিবিয়াতে মধ্য দুপুর। তাতে কি, উৎসব কি আর দিন রাত মানে। অধিনায়ক জেরার্ড এরাসমাস ভরা মঞ্চে বলে দিয়েছেন,‘আমি নিশ্চিত নামিবিয়ার সকলে আজ আমাদের নিয়ে গর্ব করবে। আমাদের উপর আস্থা রাখার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।’  

সেই গর্বের কারিগর উইজ। অথচ তার নামিবিয়ার জার্সি গায়ে জড়ানো হতো কি না তা ছয় মাস আগেও কেউ বলতে পারত না। উইজ ক্রিকেটের যাযাবর। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ফেরি করে বেড়ান। এদেশ ওদেশ ফ্রাঞ্জাইজি ক্রিকেট খেলে বেড়ান। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ২০১৩ সালে অভিষেকের পর ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলেছেন। 

এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কলপ্যাক চুক্তিতে কাউন্টিতে খেলতে গিয়েছিলেন অলরাউন্ডার। তিনি কাউন্টি দল সাসেক্সের হয়ে তিন বছর খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। এই কারণে প্রোটিয়া জাতীয় দলের হয়ে নির্বাচনের বিবেচনার বাইরে রাখা হয় তাকে। 

সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ব্রেক্সিট তার সাসেক্সে খেলা কঠিন করে দেয়। আন্তর্জাতিক দুয়ার খুলে দেয়। সাসেক্সে স্থানীয় ক্রিকেটার হিসেবে খেলে বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নিয়মিত খেলেছেন উইজ। এদেশ ওদেশ ঘুরে আইপিএল, পিএসএল, বিপিএল, সিপিএল ও টি-১০ মাতিয়েছে তিনি। কিন্তু ব্রেক্সিটের পর কলপ্যাক চুক্তি তাৎপর্য হারায়। তাদের খেলতে হতো বিদেশী ক্রিকেটার হিসেবে। সেখানেও সমস্যা নেই। কিন্তু ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে ঝুঁকি থাকত। 

এরপর জাতীয় দলে খেলার দুয়ার উন্মোচন হয়। নামিবিয়ার কোচিং স্টাফের সদস্য অ্যালবি মরকেল তাকে নামিবিয়ার জার্সিতে খেলার প্রস্তুাব দেয়। উইজের বাবা ছিল নামিবিয়ার। উইজ যদি নামিবিয়ার হয়ে খেলতে চান তাহলে নাগরিকত্বও লাগবে না। ব্যাস, বাবার দেশের হয়ে খেলতে রাজী হয়ে যান উইজ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। 

নামিবিয়া ২০০৩ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল। ছয় ম্যাচের ছয়টিই হেরেছিল। এরপর আর বৈশ্বিক ক্রিকেটের মঞ্চে দেখা যায়নি আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত দেশটিকে।  ২০১৮ সালে টি টোয়েন্টি স্ট্যাটাস লাভ করে দলটি।সেই দলটি এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে। এ যেন এক রূপকথা। আর তাদের রূপকথার নায়ক ‘যাযাবর’ উইজ। নায়ক হবার গল্প কতভাবে লিখা যায় তা উইজই ভালো বলতে পারবেন।

ঢাকা/ইয়াসিন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়