ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পাকিস্তান এখন বিশ্বকাপের হট ফেভারিট

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ২৭ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১৬:৪৭, ২৭ অক্টোবর ২০২১
পাকিস্তান এখন বিশ্বকাপের হট ফেভারিট

বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে আনপ্রেডিক্টেবল দল কোনটি? নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের নাম চলে আসবে। বলা হয়ে থাকে, পাকিস্তান এমন একটি দল যাদের নিয়ে কোনো অনুমানই করা যায় না। সহজ ম্যাচে যেমন জয় হাতছাড়া হয়, তেমনই কঠিন ম্যাচও তারা হতবাক করে দিয়ে জেতার সামর্থ্য রাখে। তবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের যে চেহারা দেখা যাচ্ছে, তাতে নিশ্চিত করে বলা যায় তারাই এখন হট ফেভারিট!

কী, বেশি বলা হয়ে গেল? যে পারফরম্যান্স প্রথম দুই ম্যাচেই দেখাল পাকিস্তান, তাতে তাদের হট ফেভারিট বলা মোটেও বাড়াবাড়ি নয়। অন্য সব সময়ের মতো এবারো আনপ্রেডিক্টেবল দল হিসেবেই তারা বিশ্বকাপে এসেছিল। দুই ম্যাচের চেহারা দেখে আর তা বলার উপায় নেই। আগে মনে করে দেখা যাক, কাদের এই টুর্নামেন্টে ফেভারিট বলা হচ্ছিল? সবার আগে এসেছে ভারতের নাম। যাদের ক্রিকেটাররা দীর্ঘদিন ধরে টি-টোয়েন্টি খেলে যাচ্ছেন। তাও আবার সংযুক্ত আরব আমিরাতেই। আইপিএলের বাঘা বাঘা ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া ভারত।

ফেভারিটদের তালিকায় বিরাট কোহলিদের পর ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের নাম এসেছে। পাকিস্তানকে তো খুঁজেই পাওয়া যায়নি। বলা হচ্ছিল, প্রতিপক্ষ যদি ভুল করে তবেই ম্যাচ জিততে পারবেন বাবর আজমরা।

অবশ্য বলা হচ্ছিল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কন্ডিশন নখদর্পণে থাকায় পাকিস্তান কিছু করলেও করতে পারে! যদিও বুক ফুলিয়ে এমন কথা কাউকে বলতে শোনা যায়নি। কী করে বলবেন, পাকিস্তানের তো বিশ্বকাপ প্রস্তুতিই হয়নি। সেই আগস্টের ৩ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টি খেলে তারা। তারপর দেশের মাটিতে নিউ জিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে আতিথেয়তা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আচমকা নিরাপত্তা শঙ্কা প্রকাশ করে সফর বাতিল করে দুটি দেশই।

নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচটি আর ইংল্যান্ডের সঙ্গে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানের। আকস্মিকভাবে সফর বাতিল হওয়ায় চোখে সর্ষেফুল দেখার কথা ছিল বাবরদের। কিন্তু তাদের ক্রিকেটাররা দমে যাননি। ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে ছয়-সাত ম্যাচ খেলে প্রস্তুতি নিয়ে আমিরাতে পা রাখে তারা।

এমনকি দেশ ছাড়ার আগেও সাবেক ক্রিকেটার আর বিশ্লেষকদের সমালোচনা শুনতে হয়েছিল পাকিস্তানকে। বিশেষ করে দল নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন শহীদ আফ্রিদির মতো লিজেন্ডও। বিশ্বকাপের দল ঘোষণার দিন প্রধান কোচ মিসবাহ উল হক ও বোলিং কোচ ওয়াকার ইউনুসের পদত্যাগে অভিভাবকশূন্য হওয়াও ছিল তাদের জন্য বড় ধাক্কা।

সব মিলিয়ে নানা প্রতিকূলতা নিয়ে আমিরাতে পা রাখে পাকিস্তান। কিন্তু তারা যে অদম্য আর দৃঢ় মানসিকতাকে সঙ্গী করে বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল, তা দৃশ্যমান হয়নি। উপেক্ষা আর প্রতিকূলতাকে শক্তিতে রূপান্তর করে প্রথমেই হারাল ভারতকে। শাহীন শাহ আফ্রিদির দুর্দান্ত বোলিং, তারপর বাবর আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটিং আধিপত্য শক্তিশালী আর ফেভারিট কোহলির দলকে উড়িয়ে দেয়। যে কোনো ফরম্যাটের বিশ্বকাপে তারা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রথমবার হারায়।

এখানেই শেষ নয়। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বদলা নেওয়ার যে মনোভাব পুষিয়ে রেখেছিল, তাতে যেন পুরে ছারখার নিউ জিল্যান্ড। হারিস রউফের (৪/২২) দুর্দান্ত বোলিংয়ে কিউইদের ১৩৪ রানে আটকে রাখার পর একটু ছন্দপতন হয়েছিল তাদের ব্যাটিং লাইনআপে। ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারায় তারা। তারপরও হতাশ হতে হয়নি তাদের। শেষ মুহূর্তে দলে জায়গা পাওয়া শোয়েব মালিক (২০ বলে ২৬ রান) আর আসিফ আলী (১২ বলে ২৭ রান) মিডল অর্ডারে হাল ধরেন। তারা যখন ক্রিজে একসঙ্গে হন, তখন ৩১ বলে দরকার ছিল ৪৮ রান। কঠিন নয়, কিন্তু চাপেই ছিল পাকিস্তান। সেখান থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মালিক ও আসিফ।

২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে পাকিস্তান। এখনো তাদের হাতে রয়েছে তিন ম্যাচ। এখনই কি বলে দেওয়া যায় তারা উঠছে সেমিফাইনালে? হ্যাঁ, সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ তাদের পরের তিন ম্যাচ আফগানিস্তান, নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। ভারত-নিউ জিল্যান্ডকে যেভাবে উড়িয়ে দিয়েছে তারা, বলা যায় বাকি তিন দল তো কিছুই নয়! অর্থাৎ এই বিশ্বকাপে এখন একমাত্র হট ফেভারিট পাকিস্তানই।

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়