ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ের পর নির্বিষ বোলিংয়ে হতাশার দিন

ইয়াসিন হাসান, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৩, ২৭ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৮:২৬, ২৭ নভেম্বর ২০২১
তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ের পর নির্বিষ বোলিংয়ে হতাশার দিন

হতাশায় মোড়ানো একটি দিন কাটানোর পর ক্রিকেটীয় সৌন্দর্য্যের কথা মনে থাকার কথা না মুশফিকুর রহিমের। বিশেষ করে সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা একজনকে অভিনন্দন জানানো তার জন্য তো কষ্টকর, যেখানে তিনি নিজেই সেঞ্চুরি মিস করেছেন ৯ রানের জন্য!

তবু ক্রিকেট যেহেতু ভদ্রলোকের খেলা, ভদ্রতা দেখানো শ্রেয়। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান আবিদ আলীকে ডেকে অভিনন্দন জানিয়ে দু’কথা বললেন। আবিদ আলী আজ যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে, গতকাল মুশফিক সেখানেই ছিলেন। সেঞ্চুরি থেকে পিছিয়ে ছিলেন ১৮ রানে। আবিদ ৭ রানের অপেক্ষায় থেকে শেষ করেছেন দিনের খেলা। মুশফিক সেঞ্চুরির সমীকরণ মেলাতে পারেননি। আবিদ আলী পারবেন তো? পারার-ই কথা।

মুশফিকের সামনে ছিলেন আফ্রিদি, হাসান ও ফাহিমের মতো দ্রুতগতির বোলার। যাদের আছে গতি, বৈচিত্র্য এবং বিরুদ্ধ কন্ডিশনে লড়াইয়ের সামর্থ্য। অন্যদিকে আবিদের সামনে রাহী, ইবাদত, তাইজুল ও মিরাজের আক্রমণ। যাদের বোলিং আক্রমণ নির্বিষ, নিষ্প্রাণ ও ম্যাড়ম্যাড়ে। কোনো বৈচিত্র্য নেই। নেই কোনো ছন্দ। ঘরের কন্ডিশন কাজে লাগানোর সামর্থ্যও নেই।

ফলাফল বাংলাদেশের বিপক্ষে উড়ছে পাকিস্তান। বাংলাদেশকে ৩৩০ রানে আটকে দিয়ে পাকিস্তান বিনা উইকেটে ১৪৫ রান তুলে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে। ১৮৫ রানে পিছিয়ে আছে তারা।

দ্বিতীয় দিন পুরোটাই ছিল অতিথিদের। যেমন বোলিং, তেমন ব্যাটিং। স্বাগতিকদের বিপক্ষে স্রেফ দাপট দেখালো তারা। দিনের প্রথম ঘণ্টায় উইকেটের শিশির সুবিধা আদায় করে আগুনে বোলিং করেছেন পাকিস্তানের তিন পেসার আফ্রিদি, হাসান ও ফাহিম।

৪ উইকেটে ২৬৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশ আজ ৬৭ রানেই শেষ ৬ উইকেট হারায়। বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ৩৩০ রানে। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান লিটন ও মুশফিক বড় কিছুর আশা দেখালেও পারেননি। লিটন ১ রান যোগ করে ফেরেন হাসান আলীর বোলিংয়ে। মুশফিক সেঞ্চুরির আগে থেমে যান ৯১ রানে।

এর আগে নব্বইয়ের ঘরে তিনবার আউট হয়েছেন। এবার নিয়ে চারবার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নার্ভাস নাইন্টিজের শিকার তিনি। সাকিব ও তামিমের আছে তিনবার করে। মুশফিককে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন আফ্রিদি ও হাসান। স্ট্যাম্পের ওপর বারবার আক্রমণ করে তাকে রীতিমতো রান নেওয়া থেকে আটকে রাখেন।

মুশফিক অপেক্ষায় ছিলেন দুটি অর্জনের। নিজের অষ্টম টেস্ট শতক ও তামিমকে ছাড়িয়ে দেশের সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোরার। ৯১ রানে আউট হওয়ায় কিছুই হয়নি। আফ্রিদি ও হাসান আলীকে সামলে নেওয়ার পর তাকে সাজঘরের পথ দেখান ফাহিম। অফস্টাম্পের বাইরের বল খেলবেন কি খেলবেন না— সেই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন।

মুশফিকের আগে সাজঘরে ফেরেন অভিষিক্ত ইয়াসির আলী রাব্বি। দারুণ এক কভার ড্রাইভে চার হাঁকালেও হাসান আলীর ইনসুইং ডেলিভারিতে বোকা হয়ে যান। ডানহাতি এ পেসারই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের লেজ গুঁড়িয়ে দেন। তাইজুল, রাহী, ইবাদতরা অসহায় আত্মসমর্পণ করেন। ৫১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে হাসান আলী রাঙান চট্টগ্রামের ২২ গজ। তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ের মাঝে দারুণ ব্যাটিং করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

যে উইকেটে আফ্রিদি, হাসানরা আগুনে বোলিং করে, সিমে হিট করে বাড়তি গতি, সুইং পেয়েছেন; সেখানে বাংলাদেশের বোলাররা কিছুই করতে পারেননি। যা হবার তাই হয়েছে। অতি সহজেই পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবিদ আলী ও আব্দুল্লাহ শফিক ব্যাটিং করে গেছেন। দুজনের ব্যাটেই খুব সহজে রান এসেছে। বলে কোনো ধার ছিল না। এজন্য টিকে থাকাই ছিল একমাত্র লড়াই। সেই লড়াইয়ে আবিদ কিছুটা আগ্রাসন দেখিয়েছেন। অভিষিক্ত শফিক ছিলেন ধীরস্থির।

১৮০ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৯৩ রানে অপরাজিত আছেন আবিদ। শফিক ১৬২ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় করেছেন ৫২ রান। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে, সাবলীল ব্যাটিংয়ে অনায়াসে রান পেয়েছেন তারা। তাতে তরতর করে এগিয়েছে পাকিস্তানের স্কোরবোর্ড। ওভারপ্রতি রান রেট প্রায় ৩ করে (২.৫৪)।

নির্বিষ বোলিংয়ে দিনে হাতের মুঠোয় আসা একমাত্র সুযোগটিও বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারেননি। ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে তাইজুল ফেরাতে পারতেন শফিককে। তার স্ট্যাম্পের উপরের শর্ট বল কাট করতে গিয়েছিলেন শফিক। বল তার প্যাড ও ব্যাটে প্রায় একসঙ্গে আঘাত করে। বাংলাদেশের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেননি। লিটন ও তাইজুল রিভিউয়ের জন্য আলোচনা করলেও পরে নেননি।

রিপ্লেতে দেখা যায়, বল তার ব্যাটে আঘাতের আগে প্যাডে আঘাত করে এবং বলের ইমপ্যাক্টও ঠিক ছিল এবং উইকেটে হিট করতো। ৫৭ ওভারের বোলিংয়ে পাকিস্তান বাংলাদেশকে ওই একটি সুযোগই দিয়েছিল। সেটাও কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।

দিন শেষে ওই এক আক্ষেপ করছে স্বাগতিকরা। অন্যদিকে অতিথি শিবিরে স্বস্তির পরশ।

ঢাকা/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়