অব্যক্ত কথাগুলো আক্ষেপ হয়ে ঝরলো ডমিঙ্গোর কণ্ঠে
চট্টগ্রাম থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
সিনিয়র মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম শেষ দুইটি-তিনটি প্রশ্ন নিতেন। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন সেখানেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু রাসেল ডমিঙ্গো নিজ থেকে বললেন, ‘আমি অনেক দিন গণমাধ্যমে কথা বলি না…আরেকটু সময় নেই। কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।’
বাংলাদেশের কোচ ডমিঙ্গোর এমন কথায় বোঝা যাচ্ছিল, নিজের ভেতরে যা চলছে তা প্রকাশ করতে চান। অব্যক্ত কথাগুলো বলতে চান। বলার অপেক্ষা রাখে না, টানা ব্যর্থতায় দল যখন বিপর্যস্ত তখন কোচ প্রবল সমালোচনায় বিদ্ধ। তার চাকরি নিয়েও চলছে টানাটানি! গুঞ্জন আছে, নতুন বছরেই চুক্তি বাতিল করে এই দক্ষিণ আফ্রিকানকে ছেড়ে দিতে পারে বিসিবি।
দল যতই ব্যর্থ হোক, খেলোয়াড় যতই অফফর্মে থাকুক, গণমাধ্যমে কখনোই নিজের শিষ্যদের উপর দোষ চাপাতে পছন্দ করেন না ডমিঙ্গো। ক্ষোভও প্রকাশ করেন না। তবে আজ এমন কিছুই শুনিয়েছেন যা তার পুরোপুরি বিপরীত। কণ্ঠে প্রবল হতাশা, না পাওয়ার হাহাকার।
শুরুতে এক প্রশ্নের উত্তরে টেস্টের সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বললেন,‘ ‘আসলে আমি শুধুমাত্র এই টেস্ট পারফরম্যান্সের জন্য হতাশ নই। আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি টেস্টই জেতা উচিত ছিল। ৪০০ রান তাড়া করতে গিয়ে ৭০ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আবার আমরা ২২০ রান তাড়া করতে গিয়ে ৭০ রান তুলেছিলাম কোনো উইকেট না হারিয়ে। কিন্তু দুটি ম্যাচেই আমরা হেরেছি। আমরা ম্যাচের কাছাকাছি গিয়েছিলাম। কিন্তু জিততে পারিনি। আমি ব্যাপক উন্নতি দেখছি। কিন্তু আমরা দীর্ঘ সময়ের জন্য এই উন্নতি ধরে রাখতে পারছি না। হয়তো ঘরোয়া ক্রিকেটে সেই প্রতিযোগিতা ও আতিশয্য নেই। টেকসই চাপ শোষণের একটি ঘাটতি অবশ্যই।’
এখানেই ডমিঙ্গো থেমে থাকেননি। বাংলাদেশের কোচ আরও বলেছেন, ‘আমরা নিজেদের প্রায়ই সেরা অবস্থানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে শেষ কাজটা করতে পারছি না। আমি নিশ্চিত খেলোয়াড়রা নিজেরাও এজন্য আরও হতাশ। আমরা এ ফরম্যাটে উন্নতি করছি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা শিশুতোষ ভুল করছি যা আমাদের সাফল্যর পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হয় একটা ক্যাচ ছাড়ছি নয়তো আলগা শটে উইকেট হারাচ্ছি বা একটা বাজে স্পেল বোলিং করছি। আমরা আমাদের সাফল্য, পারফরম্যান্স দীর্ঘ সময়ের জন্য ধরে রাখতে পারি না। এটাই খুব বিরক্তিকর।’
এজন্য টেস্ট সংস্কৃতি উন্নতির আহ্বান জানালেন ডমিঙ্গো, ‘আমি এখানে কাজ করে উপভোগ করেছি। বলার অপেক্ষা রাখে না ব্যাপক কিছু উন্নতি হয়েছে। আমি দক্ষিণ আফ্রিকার কোচিং প্যানেলে যুক্ত ছিলাম যারা অনেকগুলো টেস্ট জিতেছে। এটা সত্যিই খুব হতাশার যে আমরা জানছি না, কিভাবে টেস্ট জিততে হয়। টেস্ট সংস্কৃতির উন্নতির প্রয়োজন। আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি, আপনি যদি টেস্টে উন্নতি করেন তাহলে আপনার সাদা বলের ক্রিকেটেও উন্নতি হবে। হয়তো বাংলাদেশের টেস্টের চেয়ে সাদা বলের ক্রিকেট বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। উদ্দীপ্ত কিছু খেলোয়াড় আসছে। যাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাটসম্যান ও বোলার হতে। যত বেশি ঘরোয়া ক্রিকেট, ‘এ’ দলের সফর হবে তত বেশি জাতীয় দলের উন্নতি হবে। এই মুহূর্তে, ঘরোয়া থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া একটি বিশাল পদক্ষেপ। এটা নিয়ে বিসিবির উচিত হবে নজর দেওয়া এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন খেলায় এর প্রভাব পড়ে।’
শেষটায় যোগ করেছেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের বুঝতে শেখা উচিত যখন আমাদের হাতে মুঠোয় সুযোগ আসে তখন কিভাবে লুফে নিতে হবে। কঠিন পরিস্থিতিতে কাউকে না কাউকে দাঁড়িয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। কারো জন্য অপেক্ষা করে থাকা উচিত হবে না মোটেও। কারণ, আমরা টেস্ট ইতিহাসে অনেকগুলো ম্যাচ হেরেছি। সেজন্য আমাদের সেই বিশ্বাস, আত্মবিশ্বাস জোগাতে হবে। নিজেদের কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে পথ চলতে হবে।’
ইয়াসিন/আমিনুল
আরো পড়ুন