ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অফুরন্ত সময়ের টুকরো গল্প

ইয়াসিন হাসান, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৩, ৩০ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৭:০২, ৩০ নভেম্বর ২০২১
অফুরন্ত সময়ের টুকরো গল্প

সূর্য তখন মধ্যগগনে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা একে অপরের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। পাকিস্তান বাংলাদেশকে হারিয়ে অতি সহজেই নিশ্চিত করলো চট্টগ্রাম টেস্ট। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তাদের আরেকটি জয়। বাংলাদেশ এ প্রতিযোগিতা শুরু করল পরাজয় দিয়ে। আগেভাগে খেলা শেষ হওয়ায় অফুরন্ত সময়ে ঘটে গেল অনেক ঘটনা। রাইজিংবিডি’র প্রতিবেদকের চোখে ধরা পড়েছে সেসব-

দুই মেরুতে দুই দল

পঞ্চম দিনে ৯৩ রান তুলতে ১১৬ মিনিট সময় নিলো পাকিস্তান। ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১১.৩৫ মিনিট। লাঞ্চ সার্ভ না করায় মাঠেই থাকতে হলো দুই দলকে। দুই দল ভিন্ন কাজে ব্যস্ত। বাংলাদেশ ভলিবল নিয়ে মেতে উঠল। দল হারার পর এমন কিছু করতে পারে কেউ ধারণা করতে পারেনি! সাদমানকে নিয়ে অবশ্য থ্রো ডাউন করেছেন ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স। স্পিন কোচ সোহেল ইসলাম ব্যস্ত ছিলেন নাঈম হাসানকে নিয়ে। মুমিনুল হক সামলেছেন গণমাধ্যম। পাকিস্তানের একাদশে না থাকা নাসিম শাহ, মোহাম্মদ আব্বাসকে সেন্টার উইকেটে এনে বোলিং করিয়েছেন সাকলায়েন মুশতাক। সঙ্গে স্পিনাররাও ছিলেন। আর সরফরাজ, ইমামরা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন নেটে। সময়ের সঠিক প্রয়োগ কিভাবে করতে হয় তা পাকিস্তানের কাছেও শেখা উচিত নয় কি?

মাইকেল গফের ফিটনেস টেস্ট

ইংলিশ আম্পায়ার মাইকেল গফ বেশ ফিটনেসপ্রেমী। শরীরে একটু মেদ জমতে দেননি। সময় পেলেই দৌড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম টেস্টে দায়িত্ব পালন শেষে তার হাতে অফুরন্ত সময়। মধ্যাহ্ন ভোজ হতে তখন বাকি প্রায় ২৫ মিনিট। সবুজ গালিচায় শর্টস পরে নেমে গেলেন ৪১ বছর বয়সী এ আম্পায়ার। পুরো মাঠ সাত-আটবার চক্কর কাটেন। এরপর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আম্পায়ার রিপোর্টের প্রস্তুতি। সতীর্থ শরিফউল্লাহ ইবনে সৈকত পুরোটা সময় রুমে কাটিয়ে দিলেন।

আবিদ আলীর শাস্তি!

২২৪ রান করে ম্যাচ সেরা। তাতে কী? একটি সেঞ্চুরি হলেও আরেকটি তো হাতছাড়া? ম্যাচসেরা আবিদ আলীকে সেই শাস্তিই কি দিলেন সাকলায়েন মুশতাক! নয় তো পাঁচদিন মাঠে থাকার পরও কিভাবে দৌড়ানো শুরু করলেন ডানহাতি ওপেনার। গুনে গুনে পাঁচ চক্কর দেওয়ার পর ফিটনেস ট্রেনিংয়ে ব্যস্ত হলেন চট্টগ্রাম টেস্টের নায়ক। মাঠের মিডিয়া বক্স প্রান্তে শুয়ে একা একাই চলল তার ট্রেনিং। শরীরের জড়তা কাটাতে বেশ কিছু ব্যয়াম করলেন। ঢাকা টেস্টে সেঞ্চুরির থেকেও বড় কিছুর প্রস্তুতি নিশ্চয়ই চট্টগ্রাম থেকে শুরু করলেন এ ব্যাটসম্যান। 

রাতের কাজ দিনে!

সাগর পারের স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ম্যাচটা যদি পড়ন্ত বিকেলে শেষ হতো, তাহলে সব কাজই হতো সন্ধ্যার পর। যা শেষ হতে হতে গভীর রাত। কিন্তু পাকিস্তানের দারুণ পারফরম্যান্সে খেলা শেষ মধ্য দুপুরেই। তাতে অনেকেই যেন ফুরসত পেলেন। সব কাজই যেন এগিয়ে গেল। বিশেষ করে মাঠ কর্মী ও প্রোডাকশনে জড়িত কর্মী ও কর্মকর্তারা বেজায় খুশি। রাতের কাজ দিনের আলোয় শেষ হওয়ার আনন্দ যেন ছুঁয়ে যাচ্ছিল তাদের। জাতীয় দলের খেলা যারা সম্প্রচার করেন তাদের নির্দিষ্ট মাঠের জন্য আলাদা আলাদা সেটআপ নেই। এক মাঠের খেলা শেষ হলে অন্য মাঠে সেট আপ নিয়ে ‘দৌড়াদৌড়ি’ করতে হয়। দুপুরে খেলা শেষ হওয়ায় বিকেলের মধ্যে ঢাকার পথ ধরেছে প্রোডাকশনের গাড়ি।

হতাশার সাগরে ‘হাবুডুবু’

মুমিনুল হকের ক্যারিয়ারের ১১ টেস্ট শতকের সাতটিই চট্টগ্রামের মাটিতে। অথচ এবার দুই ইনিংসে রান ৬, ০। নিজের পারফরম্যান্স সঙ্গে হেরেছে দলও। এমন পরিস্থিতিতে অধিনায়ক হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসা আরো কঠিন কাজ। জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকায় মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ নেই। ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। বিষন্নতায় তার মুখ ভার। মুখে হাসি নেই, মনে জোর নেই। প্রশ্নের উত্তরগুলো সাদামাটা। মন ভালো করতেই এরপর বুঝি ছুটে গেলেন নেটে। ব্যাট আর গ্লাভস নিয়ে হালকা নকিং করলেন।

চট্টগ্রাম/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়