ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিরতির সিদ্ধান্তে সতীর্থদের প্রতি তামিমের চ্যালেঞ্জ

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১২, ২৭ জানুয়ারি ২০২২  
বিরতির সিদ্ধান্তে সতীর্থদের প্রতি তামিমের চ্যালেঞ্জ

সাগরিকার পাড় দিয়ে ধীরে ধীরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আড়ালে চলে যাচ্ছে সূর্য। গ্যালারির পাশে গ্রিল ধরে তামিম ইকবালের জন্য অপেক্ষা করছেন এক ঝাঁক সাংবাদিক। উপলক্ষ ততক্ষণে সবারই জানা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা নিয়ে কথা বলবেন তামিম। জ্যাকেটের দুই পকেটে হাত রেখে তামিম ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন নির্দিষ্ট স্থানে। গণমাধ্যমে কথা বলতে থাকা মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে পেছন থেকে খুনসুটিতে মেতে উঠলেন। কিন্তু মোসাদ্দেকের বিদায়ের পরই তামিমের অন্য রূপ! খুব সিরিয়াস!  

কথা শুরুর পর তামিম হঠাৎ থেমে সাংবাদিকদের বললেন, ‘সবার আলাপ-আলোচনা বন্ধ হলেই কথা বলবো।’ পিনপতন নিরাবতা মাঠের এক প্রান্তে। এরপর এক নাগাড়ে বলে গেলেন নিজের কথা। বলা যেতে পারে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি। যার সারমর্ম, ৬ মাসের জন্য আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে বিরতি নিচ্ছেন। তার প্রত্যাশা এর মধ্যেই তার জায়গায় যারা খেলবেন তারা অত্যন্ত ভালো করবেন। আর যদি ভালো না করেন, ক্রিকেট বোর্ড যদি চায়, নিজে প্রস্তুত থাকেন, টিম ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন অনুভব করলে তিনি ফিরবেন।

‘তামিম দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলতে চায় না’- বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের এমন বক্তব্যের পর এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা ক্রিকেটাঙ্গনে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) খেলা ঢাকার পর এবার গড়াবে চট্টগ্রামে। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) তামিম মিনিস্টার ঢাকার মিডিয়া ম্যানেজার মারফত খবর জানিয়ে দেন, তিনি বিশেষ ঘোষণা দেবেন। মুহূর্তেই জল্পনা-কল্পনা ডানা মেলে, তামিম অবসরের দিকে যাচ্ছেন হয়তো! কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। 

সর্বশেষ তামিম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২০ মার্চ ২০২০ সালে। করোনা কালীন সময় পার করে পাকিস্তান সিরিজ পর্যন্ত বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি খেলে ২৮টি। সবগুলো ম্যাচেই তামিম নানা কারণে ছিলেন অনুপস্থিত। সেটির অপেক্ষা আরও বাড়লও। 

তামিমের প্রত্যাশা, তরুণদের আরও সুযোগ দিয়ে তাদের থেকে সেরা ক্রিকেট বের করে আনতে হবে। কিন্তু সেসব কী আদৌ এই ৬ মাসে সম্ভব? যা এতদিনে হয়নি। পরিসংখ্যান তো সেসবই বলছে।
তামিমের অনুপস্থিতিতে ২৮ টি-টোয়েন্টিতে ৭টি ভিন্ন উদ্বোধনী জুটি দেখেছে বাংলাদেশ। ১টিতে ছাড়া ২৭ ম্যাচে মোহাম্মদ নাঈম ছিলেন নির্দিষ্ট। সর্বোচ্চ ১৪ ম্যাচে নাঈমের সঙ্গী ছিলেন লিটন, ৮ ম্যাচে নাঈম-সৌম্য সরকার, ২ ম্যাচে নাঈমের সঙ্গী ছিলেন সাইফ হাসান। আর ১টি করে ম্যাচে ওপেনিংয়ের দায়িত্ব সামলেছেন মেহেদী হাসান- নাঈম, নাঈম-সাকিব আল হাসান, লিটন-সৌম্য ও নাঈম-নাজমুল হোসেন শান্ত।

বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে ভারসাম্য পাচ্ছিল না ঠিকঠাক। নাঈম বাদে কেউই থিতু হতে পারেননি। বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও মেলেনি সাফল্য। লিটন-সৌম্য বিশ্বকাপের পর বাদই পড়েছেন। সৌম্য বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের পর ওপেনিংয়ে আর সুযোগ পাননি। লিটন-নাঈমের ওপেনিং জুটি থেকে গড়ে রান এসেছে ২২.৫০ করে! আর নাঈম-সৌম্যর জুটি থেকে আসে সামান্য বেশি ২৪.৭৫ রান করে। মেহেদীর সঙ্গে ১ ম্যাচে আসে ৪২ রান। এ ছাড়া একটিতে ২১ আর বাকি গুলোতে ১০-এর নিচে! 

টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে লিটন ৩৫ ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে ১৮.৮৫ গড়ে করেছেন ৬৬০ রান। আর নাঈম ৩২ ম্যাচে ২৫.৬১ গড়ে ৭৯৪ রান করেছেন । সৌম্যর ১৯.১৬ গড়ে ৩৬ ম্যাচে রান ৬৯০। অন্যদিকে তামিম ৭৮ ম্যাচে ২৪.০৮ গড়ে করেছেন ১৭৫৮ রান। 

পরিসংখ্যানে বোঝা যায়, তামিম-নাঈম অবস্থান করছেন প্রায় কাছাকাছি জায়গায়। যা মন্দের ভালো। দুজনের খেলার ধরণ নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে তাদের স্ট্রাইক রেট নিয়ে বিরাট প্রশ্ন থেকে যায়। দলের চাহিদা পূর্ণ করতে পারছেন কি না সেটাই বিরাট প্রশ্ন। কিন্তু এতোদিনের ক্যারিয়ারে তামিমের জায়গা নিতে পারেননি সৌম্য-লিটন। দুজন দ্রুত রান তোলায় পটু হলেও তারা অধারাবাহিক। এক ম্যাচে ভালো তো পাঁচ ম্যাচে খারাপ। 

তামিম বলেছেন,   ‘শেষ সিরিজেও তরুণদের সুযোগ দিয়েছি। ওদেরও যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া দরকার। এক দুই সিরিজে আস্থা হারালে সেটা ভুল। ছয় মাসে আমি ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত আমার আর দরকার হবে না। তারপরও বললাম বিশ্বকাপের আগে বোর্ড বা আমি মনে করলে ফিরব। তবে এই মুহূর্তে এটা নিয়ে ভাবছি না।’

দীর্ঘ সময়ে তরুণদের কেউ তামিমকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। বিকল্প হতে পারেননি। এই ৬ মাসেই কীভাবে হয়ে যাবে? তামিমের উত্তর, ‘আমাদের যারা টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করছে, তাদের সব ধরনের সামর্থ্য আছে। তারা ভালো করবে। আমার আর দরকার পড়বে না।’

কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, নাঈম-লিটন-সৌম্যরা যদি এভাবে খেলতে থাকেন তাহলে তামিমকে আবারও টি-টোয়েন্টি দলে দেখা যাওয়া সময়ের ব্যাপার। তামিম সামনে যেই ৬ মাস টি-টোয়েন্টি খেলবেন না এই সময়ে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলবে মাত্র ৫টি। আফগানিস্তানের সঙ্গে মার্চে ঘরের মাঠে ২টি এবং জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ৩টি। ২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন বাঁহাতি ওপেনার। সময়ের হিসেবে ২২ মাস তিনি টি-টোয়েন্টি দলে নেই। সামনে আরও ৬ মাসসহ মোট ২৮ মাস দলটির সঙ্গে খেলবেন না। ২৮ মাস পর ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে ফেরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় কিনা সেটাই দেখার। 

বিপিএলে ফিরেও দুটি হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার। মন্থর ব্যাটিংয়ে দুটি হাফ সেঞ্চুরিই যায় বিফলে। এ নিয়ে আলোচনাও কম হয়নি। তবে মাঠের বাইরে আলোচনায় তিনি মাথা ঘামান সামান্যই, ‘সত্যি কথা মাঠের বাইরে কী আলোচনা হচ্ছে, এটা নিয়ে ভাবলে খেলাটা কঠিন হয়ে যাবে। আমি কী করেছি, কী করি নাই এটা নতুন কিছু না। আমি এত কিছু ভাবি না।’

৬ মাসের বিরতিতে সতীর্থদের চ্যালেঞ্জ-ই দিয়েছেন তামিম। লিটন, সৌম্য, নাঈম কিংবা নতুন কেউ কি সেই চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেন?

ঢাকা/ইয়াসিন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়