ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রানের ফোয়ারায় স্বস্তির পরশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ১৭ মে ২০২২   আপডেট: ১৯:০৪, ১৭ মে ২০২২
রানের ফোয়ারায় স্বস্তির পরশ

সবশেষ দুই টেস্টে ৫৩ ও ৮০ রানে অলআউটের ক্ষত এখনও শুকায়নি বাংলাদেশের। তবে ওই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা চলল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদে। পূবের সূর্য যখন পশ্চিমে অস্ত যাচ্ছিল, তখন বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে বইছে হিমেল হাওয়া। 

শ্রীলঙ্কার করা ৩৯৭ রানের জবাবে তৃতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৩১৮। তামিমের সেঞ্চুরি, লিটন ও মুফিকের হাফ সেঞ্চুরি নিয়ে এলো স্বস্তির পরশ। তিনজনই এখনও অপরাজিত। মুশফিক ৫৩ ও লিটন ৫৪ রানে দিন শেষ করেছেন। তামিম ১৩৩ রানে রিটায়ার্ড হার্ট। তাদের রানের ফোয়ারা বাংলাদেশকে ভাসাচ্ছে অনাবিল আনন্দে। এর আগে জয়ের ব্যাট থেকে এলো আরেকটি হাফ সেঞ্চুরি। যা টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যাটিংয়ের দৃঢ়তার চিত্র আঁকে। 

প্রভাতের সূর্য বলে দেয় পুরো দিনের পূর্বাভাস। উদয় হওয়া সূর্য আজ ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল। সকালের সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। তাইতো অস্তগামী সূর্যের আলোয় বাংলাদেশ ছিল আরো আলোকিত। শেষ সেশনেও স্বাগতিকদের রাজত্ব। মাঝের সেশনে শ্রীলঙ্কা লড়াই করে ৩ উইকেট তুলে নিলেও সেই চাপ সামলে উঠতে ব্যাটসম্যানরা সময় নেননি। 

আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান তামিম ও জয় যেখানে শেষ করেছিলেন, আজ সেখান থেকেই শুরু করেন। অতিথি বোলারদের কোনো সুযোগ না দিয়ে রানের ফুলঝুরি ছুটিয়ে যান। তামিম পেয়ে যান ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি। দেশের মাটিতে সেঞ্চুরি পেতে ছয় বছর অপেক্ষা করতে হয় দেশসেরা ওপেনারকে। সেঞ্চুরির মাইলফলক ছোঁয়া তামিমকে তখন ডাক দিচ্ছিল আরেকটি রেকর্ড। দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫ হাজার টেস্ট রানের পথে ছিলেন তামিম। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে ক্র্যাম্প করায় তিনি উঠে যান ১৩৩ রানে। ১৯ রান করলেই তামিম পৌঁছে যাবেন এ মাইলফলকে। 

তবে তার থেকেও এগিয়ে মুশফিকুর রহিম। ৫ হাজার থেকে ৬৮ রান দূরে থেকে মুশফিক মাঠে নেমেছিলেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে অপরাজিত আছেন ৫৩ রানে। আর ১৫ রান করলেই মুশফিক এই রেকর্ড নিজের করে নেবেন। 

দ্বিতীয় সেশনে শ্রীলঙ্কা সাফল্য পায় জয়কে ফিরিয়ে। বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে জয় উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৫৮ রানে। তাতে ভাঙে তামিম ও জয়ের ১৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটি। ৫ বছর ও ৬১ ইনিংস পর বাংলাদেশ উদ্বোধনী জুটিতে পেল একশর বেশি রান। এ সময়ে চার ওপেনারের অভিষেক হয়েছে, ১৫ ওপেনিং জুটি খেলেছে। কিন্তু কেউই পারেননি তিন ঘরে পৌঁছাতে। 

জয় ফেরার পর ১৬ রানের ব্যবধানে শান্ত ও মুমিনুল সাজঘরের পথ ধরেন। বিশ্ব ফার্নান্দোর পরিবর্তে কনকাশন সাব হয়ে নামা কাসুন রাজিথা শান্তকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করান এবং মুমিনুলকে ভেতরে ঢোকানো বলে বোল্ড করেন। দ্রুত ৩ ‍উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশ উদ্ধার হয় তামিম ও মুশফিকের ব্যাটে।

দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি পাওয়া তামিম স্বাচ্ছন্দ্যে খেললেও অতিরিক্ত গরমে ক্র্যাম্প করে তার শরীর। তাতে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছিল। কোনো মতে দ্বিতীয় সেশন পাড় করলেও শেষ সেশনে নামেননি।  ২১৭ বলে ১৫ চারে ১৩৩ রানের ইনিংসটি খেলে রিটায়ার্ড হার্ট হন দেশসেরা ওপেনার। 

মুশফিক ও লিটনের ব্যাটে শেষ সেশনটা হয় অতি সুন্দর। ৩৫ ওভারে ৯৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বাংলাদেশকে কোনো বিপদে পড়তে দেননি দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। লিটন ঝুঁকি না নিয়ে দারুণ সব শটে তরতর করে এগিয়েছেন। মুশফিক ছিলেন স্থির। বাড়তি মনোযোগে ইনিংস মেরামত করেছেন। দুজনের ব্যাটিংয়ে ছিল যথেষ্ট দায়িত্ব। আলগা কোনো শট খেলেননি, বাজে অ্যাপ্রোচও ছিল না। তাতে দিনটা হয় আরো মধুর। 

১৩৪ বলে ৫৩ রানের ইনিংসটি খেলতে মুশফিক ২ চার মেরেছেন। লিটন ১১৩ বলে ৫৪ রান করতে হাঁকিয়েছেন ৮ চার। শ্রীলঙ্কার থেকে ৭৯ রানে পিছিয়ে স্বাগতিকরা। হাতে ৭ উইকেট রেখে এ রান মামুলি হওয়ার কথা। তবুও ক্রিকেট বলে কথা… যেখানে সব কিছুই অনিশ্চিত। অতীত রেকর্ডও ভয়ংকর। এক সেশন, এক ঘণ্টা বা কোনো বোলারের এক স্পেলেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে নামে ধস। 

এবার তেমন কিছু না হোক এমনটাই প্রত্যাশা ক্রিকেটপ্রেমীদের। রান ফোয়ারায় বাংলাদেশ ভেসে যাক অজুত-নিযুত আনন্দে।

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়