ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইরাক, পাকিস্তানের পর ‘তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে’ ভারতের সর্বনাশ

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ১৬ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৫:২৩, ১৬ আগস্ট ২০২২
ইরাক, পাকিস্তানের পর ‘তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে’ ভারতের সর্বনাশ

তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কারণে সবশেষ ফিফার কাছে নিষিদ্ধ হলো ভারত। বিশ্ব ফুটবল সংস্থার নিয়ম লংঘনের দায়ে এই শাস্তি পেতে হলো সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে (এআইএফএফ)। এ কারণে আপাতত কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না ভারতীয় দল কিংবা ভারতের কোনও দল।

তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কারণে নিষিদ্ধ হওয়া প্রথম দেশ ভারত নয়। এর আগেও একাধিক দেশ একই কারণে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিল। কোন কোন দেশকে ফিফা নিষিদ্ধ করেছিল এবং তার কারণ দেখে নেওয়া যাক-

ইরাক, ২০০৮

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১০ সালের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচের আগে ফিফা নিষিদ্ধ করেছিল ইরাক ফুটবলকে। কারণ ইরাকি সরকার তাদের জাতীয় অলিম্পিক কমিটি ও জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো ভেঙে দিয়েছিল।

ইরাক সরকার অবশ্য জানিয়েছিল ওই সিদ্ধান্তের প্রভাব ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ওপর পড়বে না। কয়েক দিনের মধ্যে বাগদাদের কাছ থেকে লিখিত চিঠি পায় ফিফা, যেখানে ইরাকি সরকার বলেছিল, এই বিলুপ্তি ডিক্রির আওতামুক্ত ইরাকি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। তাই শর্তশাপেক্ষে ২০০৮ সালের মে মাসে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ফিফা।

ইরাক, ২০০৯

পরের বছর ইরাক অলিম্পিক কমিটি দেশের ফুটবল ফেডারেশন ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ফিফা সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অবশ্য জর্ডানে অনুষ্ঠিত সপ্তাহব্যাপী ফুটবল উৎসবে তাদের মেয়েদের অংশগ্রহণে আপত্তি করেনি ফিফা।

ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের বহিষ্কৃত সদস্যরা দায়িত্ব ফিরে পেলে ২০১০ সালের মার্চে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ফিফা।

বসনিয়া, ২০১১

২০১১ সালে অল্প সময়ের জন্য বসনিয়ার ফুটবল ফেডারেশনকে নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা। ফিফা জানিয়েছিল, বসনিয়া ফেডারেশনের যে কমিটি আছে, তা বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সনদ মোতাবেক হয়নি।

নাইজেরিয়া, ২০১৪ 

২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের পর নাইজেরিয়ান ফুটবল ফেডারেশন নির্বাহী কমিটিকে বরখাস্ত করে। একটি নাইজেরিয়ান আদালত সংস্থাটি চালানোর জন্য একজন সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশ দেন। ওই বছর ৯ জুলাই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে এনএফএফকে নিষিদ্ধ করে।  পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশ প্রত্যাহার করায় ৯ দিনের মাথায় নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়।

কুয়েত, ২০১৫

আঞ্চলিক, মহাদেশীয় ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে কুয়েতকে ফিফা নিষিদ্ধ করে ২০১৫ সালের অক্টোবরে। তারা জানায়, দেশটির সকার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাজে হস্তক্ষেপ করছে।

কুয়েতি সরকার একটি আইন পাশ করেছিল, যেটা ক্লাবগুলো ও কুয়েত ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধাগ্রস্ত করে, এই বিষয়টিকে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বিবেচনা করেছিল ফিফা।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কুয়েতের ফুটবল থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

ইন্দোনেশিয়া, ২০১৫

ফুটবলীয় বিষয়গুলোর দায়িত্ব সরকার নেওয়ার কারণে ফিফা নিষিদ্ধ করে ইন্দোনেশিয়াকে। 

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অংশ ইন্দোনেশিয়ান পেশাদার ক্রীড়া সংগঠন দেশটির ফুটবল ফেডারেশনকে স্বীকৃতি না দিয়ে একটি কমিটি গঠন করে। এ কারণে ফিফা তাদের নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যার পরিণতিতে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ও ২০১৯ সালের এশিয়া কাপের বাছাইয়ে খেলতে পারেনি ইন্দোনেশিয়া। দুই বছর পর এই শাস্তি তুলে নেয় ফিফা।

গুয়াতেমালা, ২০১৬

সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে ২০১৬ সালের অক্টোবরে গুয়াতেমালাকে নিষিদ্ধ করে ফিফা। দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে ফুটবল ফেডারেশনের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনার জন্য গুয়াতেমালায় একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিল ফিফা। কিন্তু তাতে স্বীকৃতি দিতে নারাজি জানায় গুয়াতেমালার প্রশাসন। ২০১৮ সালের জুনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

পাকিস্তান, ২০১৭

তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কারণে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে ২০১৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানকে নিষিদ্ধ করে ফিফা।

ফেডারেশনের দপ্তর ও অ্যাকাউন্ট আদালত নিযুক্ত প্রশাসকের অধীনে চলে যাওয়ায় ফিফা এই শাস্তি দেয় তাদের। ২০১৮ সালের মার্চে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

পাকিস্তান, ২০২১

গত বছর পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশনকে আবার নির্বাসিত করে ফিফা। তাদের নিয়োগ করা কমিটির ক্ষমতা দখল করে নিয়েছিলেন একদল ফুটবল কর্তা। প্রাথমিকভাবে সতর্ক করেছিল ফিফা। তাতে কাজ না হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেয় তারা, গত জুলাইয়ে যা তুলে নেওয়া হয়।

কেনিয়া, ২০২২

কেনিয়ান ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তাদের ফুটবল ফেডারেশন চালাতে একটি ভারপ্রাপ্ত কমিটি নিয়োগ দেয়। এ কারণে গত ফেব্রুয়ারিতে নিষিদ্ধ করা হয় তাদের।

দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রীকে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে ফিফা। আগের প্রশাসকদের ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু করতে বলেছে তারা। কথা কানে নেয়নি ক্রীড়ামন্ত্রী, তাই নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়