সাকিব ভাইয়ের চাওয়া আমি পূরণ করবো: হাসান
১৯ মাসের ছোট্ট ক্যারিয়ারে মাত্র ৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হাসান মাহমুদ মাঠের থেকে বাইরের লড়াইয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন। যে লড়াইয়ে ডানহাতি পেসারকে বারবার পুনর্বাসনে যেতে হয়েছে।
তবে সুস্থ হয়ে ২২ গজে ফিরে যখনই বল ছুড়েছেন, ততবারই সাফল্যে উদ্ভাসিত হয়েছেন। সেই সাফল্যধারা বিশ্বমঞ্চে ধরে রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এ পেসার। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দুশ্চিন্তা যেখানে, সেখানে হাসান হতে চান ভরসা। সাকিবও পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন অসীম সাহস।
প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়া হাসান মাহমুদ রাইজিংবিডির মুখোমুখি হয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন-
আগে বলেন তো, বাইক কেন এত ঘষামাজা করছেন? এমনিতেই তো চকচক করছে। ৩ হাজার কিলো ব্যবহার করা বাইক!
হাসান মাহমুদ: বিক্রি করবো। অনলাইনে ছবি পোস্ট দেবো। তাই ঘষামাজা।
কিন্তু বিক্রি করবেন কেন? শখ পূরণ করা শেষ?
হাসান মাহমুদ: নাহ, শখ পূরণ শেষ না! বাইক চালালে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। কোমড় ব্যথা, পিঠে প্রভাব পড়ছে। পা অনেকক্ষণ বাঁকা করে রাখতে হচ্ছে। পেসার তো তাই নিজ থেকে একটু সচেতন হচ্ছি।
প্রশংসা করা উচিত। বিশেষ করে বাংলাদেশের বাস্তবতায় আপনার বয়সে এমন ভাবনা অনেকেরই আসে না। তবে এই ভাবনাটা এলো কীভাবে?
হাসান মাহমুদ: প্রায় দুই বছরের ক্যারিয়ারে অর্ধেকটাই বাইরে। মাঠে খেলেই বাইরে চলে যাচ্ছি! ইনজুরি, চোট, এটা-ওটা। তাই বাইরের উটকো ঝামেলাগুলো আসলে এড়িয়ে চলতে চাচ্ছি। এগুলো মেইন্টেইন করা কঠিন।
শুনে ভালো লাগলো। এবার তাহলে একটু ক্রিকেটে ফিরি। শুরুতেই জানতে চাইবো, বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ১৫ জনের আপনি একজন। এটা ভাবতেও কেমন লাগে?
হাসান মাহমুদ: এটা একটা স্বপ্ন। এর চেয়ে বড় স্বপ্ন কোনও ক্রিকেটারের হতে পারে না। নিজের দেশকে বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করা এটা খুব গর্বের বিষয়। আমার জন্য বড় অর্জন।
আর জাতীয় দলে ফেরার আনন্দ?
হাসান মাহমুদ: ব্যাক ইনজুরি কাটিয়ে প্রায় দুই বছর পর জাতীয় দলে ফেরার পথটা সহজ ছিল না। ভালোমতো ফিরে এসেছিলাম জিম্বাবুয়ে সিরিজে। নিজের বোলিং নিয়ে তৃপ্তি পাচ্ছিলাম। কিন্তু এশিয়া কাপের আগে আবার চোট পেলাম। দুর্ভাগ্যজনকই বলবো। এখন সুস্থ আছি। বিশ্বকাপ দলে আছি।
সুস্থ থাকলেও আপনি তো এখনও বল হাতে নেননি। জায়গা পাবেন কি পাবেন না, এনিয়ে দোলাচলে ছিলেন?
হাসান মাহমুদ: আত্মবিশ্বাসী ছিলাম সুযোগ পাবো। সেভাবেই কথা চলছিল। বল হাতে নিলে পুরোনো ছন্দ পাবো এমন বিশ্বাস সবার ভেতরে আছে। ফিজিও আমাকে যেভাবে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছিলেন, সেভাবেই কাজ করছি। এখনও বল হাতে নেইনি। ১৯ ও ২১ তারিখ বল করবো। এখন বেসিক যে কাজগুলো করছি সেগুলো বোলিংয়ে সাহায্য করবে।
দলে আছেন কার কাছ থেকে শুনেছিলেন?
হাসান মাহমুদ: নির্বাচকরা যখন দল ঘোষণা করছিলেন তখন ফেসবুকে চোখ রাখছিলাম। নিজের নাম শুনে খুব আনন্দ লাগছিল তখন।
২০১৮ সালে যুব বিশ্বকাপ, ২০২২ সালে বড়দের প্রথম বিশ্বকাপ। চার বছরের সফরটাকে কীভাবে নিজে মূল্যায়ন করবেন?
হাসান মাহমুদ: আমার তো ইনজুরিই সব শেষ করে দিয়েছে। মাঝে আবার কোভিডও ছিল। লম্বা সময় খেলা বন্ধ ছিল। কিছু করারও ছিল না। আমি বলতে চাচ্ছি, আমি লম্বা সময়টাই মাঠের চেয়ে বেশি বাইরেই ছিলাম। হয় ইনজুরি, নয় পুর্নবাসন। ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলেছি কিন্তু জাতীয় দলে সেভাবে খেলা হয়নি।
আর প্রতিটি পেসারের জীবনে ইনজুরি থাকবে। পারফরম্যান্সে ওঠানামা থাকবে। এটা আসলে মাথায় রাখা যাবে না। মনোযোগ সব সময় ক্রিকেটে থাকতে হবে। ধৈর্য বাড়াতে হবে।
বোলিংয়ে আপনি সব সময় বলে এসেছেন, গতি আপনার মূল অস্ত্র। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় এই গতি দিয়ে তেমন একটা কাজ হয় না। বৈচিত্র্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। নিজেকে সেরকম পরিস্থিতিতে কীভাবে মানিয়ে নেন?
হাসান মাহমুদ: বৈচিত্র্য বলতে, ইয়র্কারে খুব মনোযোগ দিয়েছি। ডেথ ওভারে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে আরও উন্নত করছি। আরও ধার বাড়াচ্ছি। যেমন ব্যাক অব দ্য হ্যান্ড স্লোয়ার।
সাকিব কিছুদিন আগে বললেন, জাতীয় দলের পেসারদের ডেথ ওভারে আরও ভালো বোলিং করতে হবে। একদমই সোজাসাপ্টা প্রশ্ন, আপনিই কি সেই পেসার, যে সাকিবের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন?
হাসান মাহমুদ: সত্যি বলতে, আমি ডেথ ওভারে বোলিং করতে উপভোগ করি। আমার ভালো লাগে। চ্যালেঞ্জ নিতে ভালো লাগে। ওই হিসেব থেকে বলবো, সাকিব ভাই অনেক আত্মবিশ্বাসী আমার ওপর। তিনি বিশ্বাস করেন, আমি ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারবো বা আমাকে দিয়ে ডেথ ওভালে বোলিং সম্ভব।
এগুলো নিয়ে সাকিবের সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে? যেহেতু এটা একটা উদ্বেগের জায়গা।
হাসান মাহমুদ: এগুলো নিয়ে কথা হয়েছে।
একটু বলবেন অন্যদের থেকে কেন আপনি নিজেকে ডেথ ওভারে এগিয়ে রাখবেন?
হাসান মাহমুদ: যেটা হয় সব বোলারদের, যখন কঠিন পরিস্থিতি আসে তখন আমরা আতঙ্কিত হয়ে যাই। কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। হতাশ হয়ে যাই। ওই সময়টায় নিজের স্কিলটা যদি অনুসরণ করি তাহলে ভালো করা সম্ভব। আমি আমার স্কিলের বাইরে গিয়ে কিছু করার চেষ্টা করি না। যেটা আমি পারি সেটাই। তাতে ফল আমার পক্ষে আসার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। অবশ্যই জয়-পরাজয়ের সম্ভাবনা তো সমান সমান। মাথা ঠাণ্ডা রেখে, খোলা মনে, দর্শকের চাপ সামলে নিয়ে যে ডেলিভারি দিতে পারবো তার সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। এভাবেই আসলে আমি চিন্তা করি।
ডেথ ওভারে বোলিং যতটা উপভোগ করেন বলে মনে হচ্ছে নতুন বলে কি সেই আনন্দ পান না?
হাসান মাহমুদ: না, না! ওরকম না। নতুন বলেই তো বোলিং করে আনন্দ। জিম্বাবুয়েতে দেখেছেন, নতুন বলে যখন আমাকে বোলিং দিয়েছে খুব আনন্দিত ছিলাম। ভালো বোলিংও করেছিলাম।
সবারই তো একটা কমফোর্ট জোন থাকে। হয়তো দলের জন্য ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী সেই কমফোর্ট জোন ভালোভাবে মেইনন্টেইন করা সম্ভব হয় না। আপনার কমফোর্ট জোনটা কী রকম?
হাসান মাহমুদ: একেবারে শুরুতে কয়েক ওভার। এরপর মাঝে কয়েকটা। সবার শেষে আবার। তাতে আমি ম্যাচের তিন পরিস্থিতিতে নিজের বোলিংটা ডেলিভারি করতে পারবো।
কিন্তু এটা তো ওয়ানডের কথা বললেন বলে মনে হচ্ছে। টি-টোয়েন্টিতে কি সম্ভব?
হাসান মাহমুদ: টি-টোয়েন্টি তো আসলে চার ওভারের খেলা। এখানে হয় শুরুতে শুরু হয়, নয়তো মিডলে। এই তো। এখানে আসলে তেমন সময় পাওয়াও যায় না। তাই যখন যেভাবে চাইবে সেভাবেই ডেলিভারি করতে হবে।
অস্ট্রেলিয়াতে বিশ্বকাপ খেলবেন। মোটামুটি সবারই জানা যে, অস্ট্রেলিয়ার উইকেট কেমন। কন্ডিশন কেমন। কোচরা গাইড তো অবশ্যই করবেন। তবুও নিজের পড়াশোনার একটা বিষয় থাকে। নিজের জানা জিনিসের একটা আলাদা মূল্যায়ন থাকে। সেই আগ্রহ কি নিজ থেকে হয়েছে?
হাসান মাহমুদ: এখন আমাদের দুবাই নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এ ধরনের (ব্যাটিং বান্ধব) উইকেট তো থাকবে। সেখানে ভালো করলে আমার মনে হয় একটা ভালো আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাবে। আমার অস্ট্রেলিয়াতে খেলা হয়নি কখনও। নিউ জিল্যান্ডে যুব দলে খেলেছি। একটা বিষয় আমি জানি, সেখানে যদি আপনি লাইন ও লেন্থ ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার ভালো বোলিং হবে। পেস থাকবে। সুইং থাকবে। আপনাকে লাইন ও লেন্থ মানতে হবে।
ধরে নিন, বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করলো। প্রতিপক্ষ ভারত বা পাকিস্তান। কত রান স্কোরবোর্ডে থাকলে আপনারা বোলাররা বেশ আত্মবিশ্বাসী থাকবেন যে ওই রান ডিফেন্ড করতে পারবেন?
হাসান মাহমুদ: টি-টোয়েন্টির ক্ষেত্রে ১৮০.. ১৭০-১৮০ করতেই হবে।
স্কোয়াডে চারজন পেসার আছে। স্ট্যান্ডবাই আছে আরও একজন। আপনাদের নিজেদের ভেতরে প্রতিযোগিতা কতটা উপভোগ করেন?
হাসান মাহমুদ: প্রতিযোগিতা তো থাকবেই। তবে আমার নিজের ওপর নিজের বিশ্বাস যদি থাকে তাহলে দুশ্চিন্তা হবে না যে, আমাকে দলে রাখবে কি রাখবে না। আমি অনুশীলন হোক বা ম্যাচে নিজের সেরাটা দিতে চেষ্টা করি।
এই প্রতিযোগিতায় আপনি নিজেকে তাসকিন, মোস্তাফিজ বা ইবাদতের থেকে কেন এগিয়ে রাখবেন?
হাসান মাহমুদ: আমার যে বোলিং অস্ত্র আছে সেগুলোতে আমি কোনো আপস করবো না। সেটা আমার গতি ও বৈচিত্র্য। এদিক থেকে আমি নিজেকে এগিয়ে রাখবো।
এক কথায় বিশ্বকাপে হাসান মাহমুদের চাওয়া কী?
হাসান মাহমুদ: ভালো করা।
সেই ভালো করা কতটুকু?
হাসান মাহমুদ: দলের জন্য যেন আমার অবদান থাকে। আমার পারফরম্যান্সে যদি কোনও ম্যাচ বাংলাদেশ জিতে যায়, এর চেয়ে বেশি কিছু পাওয়া আর হবে না।
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের পর বাংলাদেশ মূল পর্বে কোনও ম্যাচ জেতেনি। এবার পারবে?
হাসান মাহমুদ: ইনশাআল্লাহ পারবে।
ঢাকা/ফাহিম
আরো পড়ুন