ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘বড় ফোন নাই যে ইতি মনিরে এক নজর দেখব’

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২  
‘বড় ফোন নাই যে ইতি মনিরে এক নজর দেখব’

ইতি রাণীর বাবা-মা

‘ভ্যানে দুইজন প্যাসেঞ্জার নিয়ে আসতেছি। চার-পাঁচজন থামায়ে আমারে ঘিরে ধরল। আমি তো প্রথমে ভয় পাইছি। পরে কইলো— খবর শুনিছ? নেপালে ইতিগের বাংলাদেশ দল জিতে গেছে। সারা দেশে নাম ছাড়ায় গেছে। তোমারই তো কপাল। পরে সন্ধের সুমায় বাড়ি আসলি আরও লোকজন খবর নিয়ে বাড়ির পর আসল। চারদিক হৈ চৈ পড়ে গেছে।’

কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছিলেন সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্য মাগুরার মেয়ে ইতি রাণী মণ্ডলের বাবা মনোজিৎ কুমার মণ্ডল। পেশায় তিনি ভ্যান চালক।

মনোজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘কপাল পুড়া আমাগের একটা বড় ফোন (স্মার্টফোন) নাই। ইতি মনিরে এক নজর দেখতিও পারিনে। কথাও কতি পারি নেই। কবে বাড়ি আসপি তারপর তার মুখখান দেখতি পারব।’

মাগুরা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম গোয়ালদহ। শ্রীপুর উপজেলার এই গ্রামের ইতি রাণী মণ্ডলের (১৬) বাড়ি। দলে গোলকিপার হিসেবে স্থান পাওয়া ইতির খেলা শুরুর দিকে মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে লোকজন নেতিবাচক কথা বললেও এখন সবাই তার পরিবারের প্রশংসা করছে।

মনোজিৎ কুমার মণ্ডল ভ্যান চালানোর পাশাপাশি ডেকোরেটরের দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ২০ শতক জমিতে ছোট দুটি টিনের ঘর আছে তার। মাঠে জমি নেই। ভ্যান চালিয়ে ও দিনমজুরের কাজ করে চার মেয়ের তিনজনের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে ইতি বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়।

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গোয়ালদহ গ্রামে ইতির বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, গৃহস্থালির কাজ করছেন তার মা উন্নতি রাণী মণ্ডল। বাংলাদেশ জেতায় তিনি ভীষণ খুশি। ফাইনাল খেলার দিন সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) না খেয়ে উপোসব্রত পালন করেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এক দিন পরেও মেয়ের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি তার।

উন্নতি রাণী মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের চার মেয়ে। ছেলে নেই। তাতে এখন আর দুঃখ নেই। অনেক সময় টাকা ধার করে ইতিকে দিয়েছি। এখন এতটাই আনন্দ হচ্ছে যে কান্না চলে আসছে।’

মনোজিৎ কুমার বলেন, গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের নিয়ে নানারকম দুশ্চিন্তায় ভুগতে হয় বাবা–মায়ের। বিয়ে দিতে না চাইলেও মানুষজন নানাভাবে চাপ দেয়। তবে ইতির মতো হতে পারলে তাকে নিয়ে মা–বাবার চিন্তা থাকে না।

তিনি আরও বলেন, ইতির কারণে গ্রামের সুনাম বেড়েছে। এখন এলাকার অনেক মেয়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

শাহীন/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়