ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অন্ধকার ঘরে আলোর অপেক্ষায় শহীদুল 

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ২ অক্টোবর ২০২২  
অন্ধকার ঘরে আলোর অপেক্ষায় শহীদুল 

ছোট এক ভুলে ডেকে এনেছেন নিজের সর্বনাশ। তাতে অন্ধকার হয়ে গেছে চারপাশ। উন্মুক্ত দুয়ারগুলোও হয়ে গেছে বন্ধ। এখন আফসোস, অনুশোচনায় পুড়ছেন প্রতিক্ষণ। সতীর্থরা যখন বিশ্বমঞ্চে লড়াইয়ের অপেক্ষায়, শহীদুল ইসলাম তখন নিষেধাজ্ঞার খড়গে মাঠের বাইরে। তাই তো কণ্ঠে একরাশ হতাশা, ‘কিছু তো করার নেই। ঝামেলায় পরে গেছি নিজের বোকামির জন্য। একটু খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক না।’ 

বাংলাদেশ ডেথ ওভারে ধারাবাহিকভাবে ভুগছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্যুতি ছড়িয়ে ডেথ ওভারের সমাধান নিয়ে জাতীয় দলে হাজির হয়েছিলেন শহীদুল। কিন্তু আফসোস, ডোপিং আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ১০ মাস নিষিদ্ধ ২৭ বছর বয়সী এ পেসার। যে শাস্তি শেষ হবে আগামী বছরের ২৮ মার্চ। ভাগ্যই যে তাকে এমন পরীক্ষায় ফেলেছে, সেটা বলতে দ্বিধা নেই। 

আফগানিস্তান সিরিজে তিন ক্রিকেটারের ডোপ টেস্ট করা হবে বলে লটারি হয়। সেখানে উঠে তার নাম। কিন্তু ডোপ পরীক্ষার আগে টিবি ফর্মে (থেরাপেটিক ইউস) শহীদুল জানিয়ে দেন, শারীরিক অসুস্থতার জন্য কী কী ওষুধ তিনি গ্রহণ করছেন। কিন্তু চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে অসুস্থতার কারণে যে ওষুধ সেবন করেন সেটিতে ছিল ক্লোমিফিন। তাতেই বেঁধে যায় বিপত্তি। আইসিসির চোখে তা বিরাট অপরাধ। এজন্য ১০ মাস নিষিদ্ধ করা হয়। 

আইসিসি অবশ্য পুরো ব্যাপারটিতে শহীদুলের দিক থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও ‘অবহেলা বা দোষ’ খুঁজে পায়নি । নিজের পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য তিনি এমন করেননি, এ ব্যাপারেও আইসিসিকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন শহীদুল। 
তার মুখ থেকেই জানা গেল পুরো ঘটনা, ‘আমার চিকিৎসা যে চলছে সেটা জানতো সবাই। দেবাশীষ স্যারের (বিসিবির চিকিৎসক) সঙ্গে কথাও হয়েছে। একটা ওষুধ আগে খেয়েছি, সেটা স্যারকে দেখিয়েছিলাম। উনি বলেছিলেন সমস্যা নেই। এরপর আমার ডাক্তার (ব্যক্তিগত) আমাকে ওষুধ পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। আমি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘‘আমাদের ডোপ টেস্ট হয়। নতুন ওষুধের কারণে ঝামেলা হবে নাকি।’’ উনি বলছিলেন, কোনও ঝামেলা হবে না। আমি ওষুধ কয়েকটা খেয়েছি। কিন্তু আমার একটু সন্দেহ লাগছিল নিজের কাছে। বিসিবির এক ফিজিওকে ওষুধগুলো পাঠাই। উনি আমাকে পরে ওধুষ খেতে মানা করেন। আমি আর পরে খাইনি।’ 

খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনায় কম্পিউটার প্রকৌশলী শহীদুল। তাকে দিয়ে এমন ভুল হবে তা মানতে পারেননি অনেকেই। পুরো ঘটনাকে ‘মিস কমিউনিকেশন’ বলছেন শহীদুল, ‘আমাদের ক্লাসগুলোতে সব সময় বলা হয়, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র থাকলে যে কোনও ওষুধ খেতে পারবো। উনারা আসলে বলেন যে, বিসিবির ডাক্তার। কিন্তু আমি বুঝেছিলাম, যে কোনও ডাক্তার। এই মিস কমিউনিকেশনেই আসলে ঝামেলা হয়ে গেছে। আমি ডোপ টেস্টের ফর্মে আমার ওধুষের নাম লিখে দিয়েছিলাম। ওরা কাগজপত্রও দেখেছিল। সবকিছুই ঠিক ছিল আমার পক্ষ থেকে। কিন্তু ওই ওষুধটাই ঠিক ছিল না।’

কিন্তু ভুল যখন করেছেন, শাস্তি তো পেতেই হবে। সে কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিষিদ্ধ ডানহাতি পেসার। জাতীয় লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ খেলার কোনও সুযোগ নেই তার। খেলার সুযোগ হতে পারে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। প্রথম বিভাগ থেকে উঠে আসা অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি পাকাপাকিও করে ফেলেছেন। 

হাতে লম্বা সময় থাকলেও নিজের ফিটনেস এবং বোলিংয়ে ধার যেন না কমে এজন্য নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন শহীদুল, ‘নিয়মিত জিম, অনুশীলন, রানিং করে সময় কাটছে। বিসিবির কোনও সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবো না। নারায়াণগঞ্জে একাই চলছে নিজের লড়াই। কী হারিয়েছি সেগুলো আসলে ভুল থাকতে চাই। এগুলো নিয়ে চিন্তা করলে মন খারাপ ছাড়া আর কিছু হয় না। ব্যস্ত থাকলে ভুলে যাই। অনুশীলনে থাকলে তেমন কিছু মনে পড়ে না। কিন্তু একা থাকলে, খেলার খবরগুলো দেখলে আসলে মনে খারাপ হয়।’ 

শহীদুল নিজের অন্ধকার ঘরে আলো ফোটাতে বিসিবির কাছে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরার আবেদন করবেন। জানেন, শাস্তি কমানোর এখতিয়ার বিসিবির নেই। তবুও আবেদন করবেন তিনি, ‘অন্তত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারি কি না সেজন্য আবেদন করার পরিকল্পনা করছি। বিসিবি আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে যদি শাস্তি কিছুটা হলেও কমাতে পারে… এমনিতে আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। এক বছর তাদের তত্ত্বাবধানেই থাকতে হবে।’

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়