বাংলাদেশের ভাবনায় কেবল নিজেদের ব্যাটিং উন্নতি
খালেদ মাহমুদ সুজন গতকালই নিজের উদ্বেগের কথা বলেছিলেন এভাবে, ‘আমরা এখনও আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারিনি। যদিও দুটি ম্যাচ আমরা জিতেছি। তবে টপ অর্ডার থেকে আরও বেশি আশা করি, আরও ভালো ব্যাটিং।’
ফিলিং কোচ শেন ম্যাকডারমট নিজেদের ব্যাটিংকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘আমাদের টপ অর্ডারের ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়মিত উদ্বেগের বিষয়।’
খালেদ মাহমুদ দলের টিম ডিরেক্টর, ম্যাকডারমট ফিল্ডিং কোচ। দুজনের উদ্বেগ, শঙ্কা মিলিয়ে যায় এক বিন্দুতে, একই স্রোতে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যর্থতার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে নিয়মিত বিরতিতে।
চলতি বছর ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটিং শুরু হয়েছিল চরম ব্যর্থতায়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২১৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৫ রানে বাংলাদেশ হারায় ৬ উইকেট। সেখান থেকে মিরাজ ও আফিফের বীরত্বগাথা ১৭৪ রানের জুটিতে জয় পায় বাংলাদেশ।
টপ অর্ডারের এই ব্যর্থতা মিরাজ আফিফের সৌজন্যে আড়াল হলেও বাংলাদেশের পরবর্তীতে ম্যাচগুলোতে তা প্রস্ফুটিত হতে থাকে। ভারতের বিপক্ষে খেলা শেষ ওয়ানডেতেও ৬৯ রান তুলতে হারায় ৬ উইকেট। প্রথম ওয়ানডেতে ৯৫ রানে ৪ উইকেট, দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৯৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর ঘটনা ঘটেছে।
আরেকটি পরিসংখ্যান দিলে এই দলের ১-৭ পর্যন্ত ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতা পরিস্কার হবে। এ বছর ১২ ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি এসেছে কেবল একটি। সেটাও লিটনের ব্যাটে চট্টগ্রামে। এছাড়া আট ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি আছে ১৯টি। যেখানে ৫৫.৭১ ব্যাটিং গড় নিয়ে সবার উপরে মাহমুদউল্লাহ। তার স্ট্রাইক রেট অবশ্য ৬৮.৯০। ৫৪৮ রান নিয়ে সবার উপরে লিটন। তার ব্যাটিং গড় ৫৪.৮০, স্ট্রাইক রেট ৮২.০৩।
ব্যাটিংয়ের নিদারুণ এই পরিসংখ্যান বলে দেয়, নিজেদের সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাটে ব্যাটিংয়ে কতটা ধুকছে বাংলাদেশ। এখান থেকে বের হওয়ার পথ নিজেদেরকেই বের করতে হবে বলে জানালেন ম্যাকডারমট।
সঙ্গে দলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দায়িত্ব গ্রহণ করার তাগিদও দিলেন দিলেন, ‘আমাদের টপ অর্ডারের ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়মিত উদ্বেগের বিষয়। তবে এখানের (চট্টগ্রামের) উইকেট দারুণ হয়। যেখানে শট খেলার আনন্দ পাওয়া যায়। এখানে ধারাবাহিক বাউন্স পাওয়া যায়। টপ অর্ডারের পাঁচজনকে নিয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা, তাদের একজনকে অন্তত ৪০ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করতে হবে। যেন খেলাটাকে গভীরে নিয়ে যেতে পারে। ছেলেরা শুরুর ২০ বলে কঠিন সময় পার করে। ওই সময়টাই ব্যাটিং করা কঠিন। সেটা কাটিয়ে উঠতে পারলে পরের ২০ বল কিভাবে খেলবে সেটা নিয়ে কাজ করে। এরপর ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে ৫০ থেকে ১০০ বল খেলা যায়। এক সময় ম্যাচ বের করা ইনিংসও পাওয়া যায়। তাদের পাঁচজনের একজনকে এই দায়িত্বটা নিতে হবে।’
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ বলা হয় মুশফিকুর রহিমকে। ইনিংসের মধ্যভাগে কার্যকরী ইনিংস খেলায় তার রয়েছে সুনাম। কিন্তু এ বছর নিজের ছায়া হয়ে আছেন। ১১ ম্যাচে ১০ ইনিংসে করেছেন কেবল ২২৩। ব্যাটিং গড় ২৪.৭৭। তবে রান খরায় থাকা মুশফিককে নিয়ে তেমন চিন্তিত নন বাংলাদেশের কোচ, ‘মুশফিকের ক্যারিয়ার বেশ লম্বা এবং সে আমাদের জন্য সম্পদ। তার কাজ ইনিংসের গভীরতা বাড়ানো। সে যতক্ষণ ক্রিজে থেকে সময় কাটাবে প্রতিপক্ষের ওপর আমরা ততটা চাপ প্রয়োগ করতে পারব। মুশফিক বহুমুখী প্রতিভার খেলোয়াড় এবং একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের থেকে আমরা সব সময়ই রান প্রত্যাশা করি। তার নিবেদনে কোনো ঘাটতি নেই। প্রস্তুতিতে সে যথেষ্ট শ্রম দিচ্ছে।’
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে জিতেছে শেষ উইকেটে। মিরাজ ও মোস্তাফিজের ৪১ বলে ৫১ রানের জুটিতে চড়ে জয় পায় স্বাগতিকরা। শেষ দিকে বাংলাদেশের মান বাঁচানো এরকম জুটি আছে কমই। তবে দলের এখন সবাইকে ব্যাটিংয়ে পারদর্শী করে তোলা হচ্ছে বলে জানালেন ম্যাকডারমট, ‘শুরুর পাঁচ-ছয় জনের দায়িত্ব দলের স্কোরকে বড় করা। কিন্তু দলের প্রত্যেকেই ব্যাটসম্যান। এই মুহূর্তে আমাদের ৮ নম্বর ব্যাটসম্যানকে দেখুন। সে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছে। আমাদের এমন সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে যেখানে ৮ থেকে ১১ পর্যন্ত সবাই ব্যাটিং করে দলকে জেতাতে পারে।’
ইয়াসিন/আমিনুল
আরো পড়ুন