পেস ব্রিগেডের আনন্দযাত্রা
এমন কিছু হবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। বিশ্বাস ছিল। মনের ভেতরে জেদ ছিল। ছিল ভালো করার তীব্র ক্ষুধা। কিন্তু পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে পাকিস্তানকেই পরপর দুই টেস্টে হারানো রীতিমত পূর্ণিমার চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। যে সাফল্যের পেছনে বড় কারিগর হয়ে ছিলেন বাংলাদেশের পেস চতুষ্টয়। যারা একটা ব্রিগেড হয়ে স্রেফ এলোমেলো করেছেন পাকিস্তানে ব্যাটিং আক্রমণ। তাদের একেকটি ‘গোলা-বারুদে’ স্রেফ লণ্ডভণ্ড বাবর আজমদের মতো ব্যাটিং স্তম্ভ।
নতুন বলে ঝাঁঝালো আক্রমণ, পুরোনো বলে নিয়ন্ত্রণ, গতির সঙ্গে সুইং। সব কিছু মিলিয়ে শরিফুল, হাসান, নাহিদ ও তাসকিনরা ছিলেন ধ্রুপদী, দুর্দান্ত। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তারা দলকে এনে দিয়েছেন বিরাট সাফল্য। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দুই টেস্টে ২১ উইকেট পেয়েছেন পেসাররা। যা পেসারদের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ সাফল্য। দুই টেস্ট খেলা হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা পেয়েছেন যথাক্রমে ৮ ও ৬ উইকেট। একটি করে ম্যাচ খেলা তাসকিন ও শরিফুল পেয়েছেন যথাক্রমে ৪ ও ৩ উইকেট।
বেশ কয়েক বছর ধরেই সাফল্যের পতাকা উড়াচ্ছেন দ্রুত গতির বোলাররা। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট যার বিরাট প্রমাণ। তাসকিন, ইবাদত, শরিফুল; এই পেস ত্রয়ী দায়িত্বটা ভালোভাবে সামলাচ্ছিলেন। সেই আক্রমণে ধার বাড়িয়েছেন হাসান ও নাহিদ। হাসান সীমিত পরিসরে নিয়মিত হলে এখন সাদা পোশাকেও পায়ের নিচের জমিন শক্তিশালী করে তুলেছেন। এই চার পেসারের আনন্দযাত্রায় ছিল রোমাঞ্চ, উত্তেজনা। তাদের কথা শুনেছে রাইজিংবিডি।
হাসান মাহমুদ: বিশ্বাস থেকেই এতো কিছু
‘বাংলাদেশ দলে আমি যখন থেকে খেলা শুরু করেছি, তখনই দেখেছি ড্রেসিংরুমে সবাই যখন বিশ্বাস করে আমরা জিতবো তখন সত্যিই আমরা অন্যরকম পারফরম্যান্স করে ম্যাচ জিতেছি। এবারও তেমন কিছুই হয়েছে। সিরিজ শুরুর আগের থেকেই সবাই বলাবলি করতে শুরু করে আমাদের এবার সুযোগ রয়েছে টেস্ট ম্যাচ জেতার। আমাদের যেই পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল, যে রণকৌশল সাজানো হয়েছিল তাতে সবার মধ্যে আরো বিশ্বাস জন্মায় এবার আমরা জিতবো। আমি বলবো ওই বিশ্বাসটা ছড়িয়ে দেওয়া ছিল চ্যালেঞ্জিং। বাকিটা সবাই মাঠে পারফর্ম করে জিতেছি।’
‘নিজের বোলিং সত্যি বলতে আমি খুব উপভোগ করেছি। টেস্ট ক্রিকেট এমনিতেও আমি ভালোবাসি। মনে হয় এই ফরম্যাটটা আমার জন্যই। সময় পাওয়া যায়। নিজের মতো করে আক্রমণ করা যায়। আমার যেই শক্তির জায়গায় বল সুইং সেটা নিয়ে আমি কাজ করতে পারি। এজন্য আমি উপভোগ করি টেস্ট ক্রিকেট। আশা করছি এই ধারাবাহিকতা সামনেও থাকবে।’
শরিফুল ইসলাম: পুরো পেশাদার পারফরম্যান্স
‘চোটের কারণে দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলতে পারিনি। খেলার খুব ইচ্ছা ছিল।এরকম ম্যাচ মিস করতে আসলে ভালো লাগে না। প্রথম টেস্ট ম্যাচ জিতে আমরা আপারহ্যান্ডে ছিলাম। আমরা জানতাম পাকিস্তান দ্বিতীয় ম্যাচে আরো চড়াও হয়ে খেলবে। কিন্তু আমরা নিজেদের স্নায়ু স্থির রেখে পুরো পেশাদারিত্ব দেখিয়েছি। এটা বলবো জয়ের অর্ধেক কাজ করে দিয়েছে। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে এটা। প্রত্যেকে যার যার জায়গা থেকে কাজ করেছে।’
নাহিদ রানা: এখনও ঘোরের মধ্যে আছি
‘প্রথম টেস্টে বাবরের উইকেট নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত ছিলাম। পরে দ্বিতীয় টেস্টেও ওর উইকেট পেয়ে গেলাম। এরপর রিজওয়ানের। খুব ভালো লেগেছিল ওদের উইকেট পেয়ে। আমার বোলিংয়ে দল জিতেছে, আমি বড় বড় ব্যাটসম্যানদের আউট করেছি এটা কম কিসের। নিজেকে বেশ ভাগ্যবান বলবো এই দলের সঙ্গে থাকতে পেরে। আমিও অবদান রাখতে পেরেছি।’
‘পাকিস্তানে গিয়ে পরপর দুই টেস্টে জয় অনেক বড় অর্জন। আমি ক্যারিয়ারের শুরুতেই এমন কিছুর সাক্ষী হলাম। এখনও ঘোরের মধ্যেই আছি। সবাই আমার বোলিংয়ের প্রশংসা করেছে। আমার গতি নিয়ে বিশেষ করে সবাই কথা বলেছে। গতি আর বাউন্স আমার শক্তির জায়গা। তবে এখনও অনেক কাজ করার আছে। কোচরা কথা বলেছেন। আশা করছি বোলিংয়ে সামনে আরো ভালো হবে।’
তাসকিন আহমেদ: আমরা পারি আবার প্রমাণ করেছি
‘আমি লম্বা সময় পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে এতো বড় সাফল্যের সঙ্গী হবো ভাবতেই পারিনি। প্রথম টেস্ট শেষে ড্রেসিংরুমে ছিলাম। জয় উদযাপন করেছি। মনে হলো দ্বিতীয় টেস্টে যদি সুযোগ পাই তাহলে এমন কিছু করতে হবে যেন সিরিজ জয়ের আনন্দটাও করতে পারি। সেটাই হয়েছে। আমরা এখন সব দলকে হারাতে পারি। আমরা জিততে পারি সেটা আবার প্রমাণ করেছি। এটা অনেক বড় প্রাপ্তি। সবাই যেমন বলছে না, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। আমিও তা মানি। এর আগেও আমরা ভালো খেলে টেস্ট জিতেছি। কিন্তু এতো ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে আমার চোখে এটাই সেরা।’
‘টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে ভালো লাগছে। ওই সময়ে আমার ব্রেকটা দরকার ছিল। এখন আবার ফেরাটাও দরকার ছিল। আমি আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। পাঁচদিন টেস্ট ম্যাচে মাঠে ছিলাম। নিজেকে সেভাবেই তৈরি করেছিলাম যেন দলকে জেতাতে পারি।’
ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়