ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে এক দিনের ট্যুর

ইকরামুল হাসান শাকিল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ১৫ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদের ছুটিতে এক দিনের ট্যুর

|| ইকরামুল হাসান শাকিল ||

‘জাহাজ যেমন ডাকে সেইভাবে ডাক দিও তুমি
তোমার ছাড়ার আগে একবার হর্নখানি দিও
সকল বন্ধন ছিঁড়ে তোমার বন্ধন তুলে নেবো,
একটি সামান্য ব্যাগ কিংবা তাও ফেলে দিতে পারি’

 

কবি মহাদেব সাহা হয়তো তার প্রিয়ার ডাকে সামান্য ব্যাগ ফেলে দিতে পারেন। তবে সেই সামান্য ব্যাগটাই কাঁধে তুলে নিয়ে ঘর ছাড়ার পাগলও কম নেই। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘর ছেড়ে প্রকৃতির প্রেমে সুযোগ পেলেই আমরা বেরিয়ে পরেছি অনেকদিন, হারিয়ে গেছি নিজেদের মতো। আপনিও স্বজনদের নিয়ে এই ঈদের ছুটিতে বেরিয়ে পরতে পারেন। একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন পদ্মার উত্তাল ঢেউ আর স্যর জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়ি দেখে।

 

আমরা ১৪ জনের একটি দল। যে যার মতো সুবিধাজনক জায়গা থেকে চলে এলাম আল রাজ্জাক হোটেলের সামনে। এমনটাই কথা ছিল। সেখানে সবাই সকালের নাস্তা করলাম। দলনেতা মুহিত ভাই আমাদের আগেই হোটেলে এসে পৌঁছেছেন। খাবার শেষে সকাল ৮টার দিকে আমরা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। ঢাকা মাওয়া হাইওয়ে। গাড়ি চলছে।  যদিও গান ধরেছি ‘গাড়ি চলে না... চলে না... চলে না রে...’।

পথে চা পানের বিরতি। কে কোন চা খাবে, কার চিনি কম বা বেশি, এসব নিয়ে বেশ কিছু সময় কেটে গেলো। চা পান শেষে আবার গাড়ি চলতে শুরু করেছে। চলছি সমতল রাস্তায়, গান শুনছি অঞ্জন দত্তের ‘দার্জিলিং এর রাস্তায়’। সাড়ে ন’টার মধ্যেই আমরা শ্রীনগর রাঢ়ীখাল স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়ি চলে এলাম। তাঁকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। এখানে একটি জাদুঘর রয়েছে। যেখানে বেশ কিছু নথিপত্র সংরক্ষণ করা আছে। কমপ্লেক্সের পাশেই ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুল ও ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামেই ‘স্যর জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন ও কলেজ’।

ঘণ্টাখানেক থাকার পর আমরা ভাগ্যকুল বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ঢাকার কাছেই এত সুন্দর গ্রামীণ পরিবেশে ভালো লাগল খুব। আঁকাবাঁকা পথ আর সবুজের সমারোহ। রোদ আর ছায়ার মিশেল দিনটাই যেনো ঘুরে বেড়ানোর। আধ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম ভাগ্যকুল বাজারে। এই বাজারে আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম ক্ষেত থেকে তুলে আনা টাটকা সবজি আর নদী থেকে ধরে আনা তাজা মাছ। এখানে কমদামে সবজি পেয়ে আমাদের অনেকেই লাউ, আালু, শাক ইত্যাদি কিনে নিলো। রুপক ভাই তো প্রায় আমার সাইজের একটা লাউ কিনলেন। কেনাকাটা শেষে আমরা গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভান্ডারে মুন্সিগঞ্জের বিখ্যাত মাঠা খেলাম। মাঠা অবশ্য শামীম ভাই বেশি খেয়েছে। আমিও খেয়েছি দুই গ্লাস। 

 

সাড়ে বারোটার দিকে আমরা দোহার মৈনটঘাট পৌঁছাই। বিশাল পদ্মার পাড়ে চিকচিক বালুময় ঘাট থেকে ইঞ্জিন  চালিত নৌকা নিয়ে চলেছি দূর বালুচরে। দু'চোখ যতদূর যায় শুধু পানি আর পানি। আকাশ আর পানি এক জায়গায় মিলিত হয়েছে  বহুদূরে। শীতল বাতাস আর পানির ঢেউ দেখতে দেখতে একসময় বালুময় পদ্মার এক ছোট চরে এলাম। এর আগে কখনো আমি চরে আসিনি। তাই আমার আনন্দটাও অনেক বেশি। এখানে আমাদের দৌড় প্রতিযোগিতা হলো। ছেলেদের মধ্যে আমি ও মেয়েদের মধ্যে রত্না আপু প্রথম হলাম।

কত রঙে ঢঙে আমরা ছবি তুললাম তার হিসাব নেই। কেউ বসে, কেউ বালু উড়িয়ে আবার কেউ লাফিয়ে শূন্যে ভেসে।  মৈনটঘাট থেকে আমরা চলে এলাম বান্দুরা বাজারে। এখানে দুপুরের খাবার খেয়ে বড় গির্জা দেখতে গেলাম। হাসনাবাদের পবিত্র জপমালা রানীর গির্জা। এটি ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানেই মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ‘একাত্তরের যিশু’ সিনেমার শুটিং হয়েছিল। দিনের ক্লান্ত বিকেলে যখন সূর্যটা পশ্চিম আকাশে তখন আমরা আবার ঢাকার পথ ধরলাম। এবার বাড়ি ফেরার পালা। আরো একটি আনন্দঘন দিনের সমাপ্তি হলো।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ আগস্ট ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়