ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

টোকিওর কাকড়া রেস্তোরাঁ || পর্ব-৮

শাকুর মজিদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৯, ১৭ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টোকিওর কাকড়া রেস্তোরাঁ || পর্ব-৮

চীনাদের আমার জাপানের খালাতো ভাই মনে হতো। অনেক কিছুতেই তাদের মিল। চীনাদের খাবারের সঙ্গেও দেখি মিল আছে জাপানিদের। দেশে যে চীনা খাবার খেয়ে আহ্লাদের ঢেকুর তুলেছি, চীনে গিয়ে সেই খাবার মুখে তুলতে না পেরে একই রকম বিষাদ লেগেছে। চীনের প্রথম রাতে পাঁচতারার বড় হোটেলে জাপানি খাবার খাইয়েছিল আমাদের চীনা আপ্যায়ক। সে রাতে হোটেলে ফিরে ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া চিড়া টি-পটে ভিজিয়ে ব্রাউন-সুগার মিশিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। জাপানে যাতে একই অবস্থায় না পড়তে হয়, এবার সাথে বেশি চিড়া আর চিনি নিয়ে এসেছি। জানি-জাপানি খাবারও আমার মুখে রুচবে না। মুখটা জাপানে নিয়ে এলেও জিহ্বাটাতো আমার দেশি রয়েই গিয়েছে।

ঢাকার গুলশানের এক জাপানি রেস্তোরাঁয় বারকয়েক শুশি খেয়ে তৃপ্ত হয়েছি, জানি মূল জাপানি শুশি এমন হবে না। সেখানে আসল কাঁচা মাছটিই থাকবে, পারলে মাছের সাথে রক্ত লাগিয়ে রেখে দেখাবে এটা আসল কাঁচা মাছ। সুতরাং আমি জাপানি খাবারে নাই, এটা ধরেই নিয়েছি আর সেকারণেই কিনা জানি না, এই যে আমাদের বাসভর্তি ঢাকাইয়া স্থপতিকূলকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে গাইড নানা রকমের মজার মজার কথা আর অঙ্গভঙ্গি করছে তাতেও আমার এখন আগ্রহ কম। আমার কান যদিও গাইডের দিকে, আমার চোখ আমার হাতে ধরে রাখা ওজমো প্লাস-এ, চোখ আমার সেলফোনের ভিউফাইন্ডারে। বাসের স্পিকারগুলো যেখানে আছে সগুলোর কাছেই লাগিয়ে রেখেছি আমার একটা ভয়েস রেকর্ডার। সুতরাং আমার কোন চিন্তা নাই। মন দিয়ে এখন সব কথা না শুনলেও হবে- দেশে গিয়ে শুনে নেব আবার, লেখার আগে।

আমাদের গাইড বলে দিচ্ছে, আমাদের নিয়ে যাওয়া হবে একটা কাকড়া রেস্টুরেন্টে। বুঝে নিলাম- শুধুমাত্র কাকড়া দিয়ে নানা জাতের খাবার নিশ্চয়ই সেখানে খাওয়াবে আমাদের। এর মধ্যে জাপানি খাবারের ধারণা আমার অনেকটুকু হয়ে গেছে। প্রথম ভোরে টোকিওর সবচেয়ে বড় হোটেলের সবচেয়ে বড় ডাইনিং স্পেসে খেতে গিয়ে শতাধিক পদের খাবার বেছে শেষমেশ ব্রেড-বাটার-জেলি আর ফলফলাদির মধ্যে শেষ করেছি।

আমাদের রসিক গাইড ডানদিকের একটা বিল্ডিং দেখিয়ে বলল, এখানে একটা বাজার  আছে। সকালবেলা মাছের নিলাম হয়। সমুদ্র থেকে আসা মাছ সারা রাত ধরে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখে দেয়া হয়। সকালে, সূর্য ওঠার সাথে সাথে শতশত লোক এসে এই মাছ বাজারে ভিড় করে, তারা নিলামে মাছে কেনে। শুধু তাই না, মাছের এই বাহারি আয়োজন, এবং মাছের নিলাম প্রক্রিয়া দেখার জন্যও প্রচুর লোক এখানে আসে, তারা প্রধানত ট্যুরিস্ট। এরপর শোনায় জাপানের গল্প। জাপানের এই টোকিও শহরটি মাত্র হাজার বছর আগেও একটা নিখাদ জেলে পাড়া ছিলো। জেলেরাই এই নগরীর প্রথম বাসিন্দা। তখন এই গ্রামের নাম ছিলো এদো।

হিসাব করে দেখি, আমাদের ঢাকায় যখন লালকেল্লা বানানো হয়েছে তারও পরে তোকুগাওয়া শোগুনাতে শাসনামলে এদো গ্রামটি শহরে পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শোগুনদের রাজধানী হয়ে যায়। তবে জাপান সম্রাটের পরিবার তখনও কিঔতো শহরেই বাস করতেন। ১৮৬৮ সালে মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার সময় কিয়োটো শহর থেকে দেশ শাসনকারী তোকুগাওয়া রাজবংশ ক্ষমতাচ্যুত হয়, শোগুনাতের পতন ঘটে এবং সাম্রাজ্যের রাজধানীকে এদোতে সরিয়ে নেওয়া হয়। ঐ বছরেই শহরটির আদি নাম ‘এদো’ থেকে বদলে টোকিও রাখা হয়।

‘টোকিও’ শব্দের অর্থ ‘পূর্বদিকের রাজধানী’। টোকিওতে নাম বদল হবার আগেই ১৭শ শতক থেকেই এদো জাপানের বৃহত্তম শহর ছিল। ১৯শ শতকের শেষে এসে শহরটির জনসংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। ১৯৪৩ সালে প্রাক্তন তৌকিঔ-ফু অর্থাৎ টোকিও জেলা এবং তৌকিঔ-শি অর্থাৎ টোকিও শহর- এই দুটিকে একত্রিত করে তৌকিঔ-তো অর্থাৎ টোকিও মহানগরী গঠন করা হয়। টোকিও তাই শহর ও জেলার মাঝামাঝি একটি বিশেষ প্রশাসনিক বিভাগ। টোকিও মহানগর সরকার মূল টোকিও শহরের ২৩টি বিশেষ এলাকা, এদের পশ্চিমে অবস্থিত ৩০টি পৌরসভা এবং টোকিও উপসাগরে অবস্থিত ২টি দ্বীপপুঞ্জকে পরিচালনা করে। আর এখানেই তৈরি হয়ে আছে নানা রকমের রন্ধনশৈলী।

জাপানি খাবার টেবিলে

জাপানের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনপ্রণালী চালের উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়। যেহেতু আদিকাল থেকেই এটা সমুদ্রঘেরা একটি দেশ, তাই নানা জাতের সামুদ্রিক মাছ তাঁদের আহারে প্রধান উপাচার হয়েই আছে। তার সাথে আছে শাকসবজির আচার এবং পাতলা ঝোলের শাকসবজির তরকারী। কাল আকিহারাবার বাজারে ফুড কোর্টে গিয়ে রসগোল্লার মতো গোলগোল একটা খাবার খেয়ে তৃপ্তি পেলাম। অনেকটা আমাদের দেশি হান্দেশের মতো। এর নাম তেমপুরা। পাতলা গোলায় সামুদ্রিক খাবার এবং শাকসবজি মিশিয়ে তেলের কড়ায় ভাজা হয়। জেনেছি, এঁদের সামুদ্রিক খাবার প্রায়ই ভাজা হয় আবার অনেক ক্ষেত্রে সাশিমি হিসেবে কাঁচা বা সুশীতে পরিবেশিত হয়। ভাত ছাড়াও নুডলস যেমন সোবা ও উডন ইত্যাদি প্রধান খাবার হিসেবে পরিবেশিত হয়। তবে বিপদে পড়ে গেলাম লাভলু ভাইয়ের সাথে খেতে বসে। আমি যখন ছবি তোলায় ব্যস্ত, লাভলু ভাই বসেছেন খাবারের মেন্যু নিয়ে এবং তার হাঁটুর কাছে এসে বসেছে রেস্টুরেন্টের তরুণী ওয়েটার। তারা দুজনে শলাপরামর্শ করে খাবারের অর্ডার দিয়েছেন। লাভলু ভাইয়ের পছন্দের উপর আমার অনেক আস্থা। আমি ছবি তোলা শেষ করে তার কাছে গিয়ে বসি। দেখি দুইবাটি স্যুপ এসেছে। সাথে নানা জাতের উদ্ভিজ্জ জিনিসপত্র। বললেন, সী ফুডের অর্ডার দিলাম- খা, খুব টেস্টি!

আমি খাওয়া শুরু করি। একটি তেতো স্বাদের জলীয় খাবার, আর নরম গোছের কিছু সমুদ্রের তলায় পড়ে থাকা ঘাষ-লতা-পাতা। বুঝলাম, টেলিভিশনের ডিসকভারি চ্যানেলে আন্ডারওয়াটার লাইফে যেসকল লতাপাতা দেখেছি, এটা তারই অংশ। অনেকটুকু খাওয়ার পর নিচ থেকে কিছু ভারি গোলাকার জিনিস চামচে উঠতে লাগলো।

লাভলু ভাইকে বলি, এগুলো কী?
নিজে এগুলোর একটি কামড়াতে কামড়াতে বললেন- খা, খুব টেস্টি!
আমি আবার বলি, খেলাম তো একটা, টেস্ট বুঝতেছি না, জিনিসটা কী?
সরল ভাষায় জবাব দেন- এগুলো শামুকের কচি কচি বাচ্চা।
আমি বলি, এগুলোকে আমরা বলি গুগইল। ছোটবেলা খালের পাড় থেকে খলুই ভরে ভরে নিয়ে আসতাম, হাঁসকে খাওয়ানোর জন্য। হাঁসের খাবার খাওয়ার জন্য কি জাপানে এসেছি, আপনি খান, আমি নাই।

জাপানি খাবার যেগুলো আমাদের পছন্দ

আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। চিন্তা নাই আমার। রুমে চিড়া আছে, চিনি আছে। হোটেলের পাশের সেভেন ইলেভেন থেকে দুধের প্যাকেট আর কলা নিয়ে যাব। কলা অবশ্য বেশ এক্সপেন্সিভ। মাঝারি সাইজের একটা কলার দাম বাংলাদেশি টাকায় আশি টাকা। সমস্যা নাই। আমি খাওয়া বন্ধ করে আবার ছবি তুলতে বেরোই। দেখি সব রেস্টুরেন্টের সামনে কাঁচের সেলফের ভেতর হরেক রকমের খাবার সাজিয়ে রাখা। আছে ভাত, নুডুলস, ডিম, মাছ, লতাপাতার মিশেলে নানা পদের সবজির বাহার। প্রতিটার পাশে দাম দেখা। আমার ইচ্ছা হলো টাকা দিয়ে সেখান থেকে একটা প্লেট উঠিয়ে নেই। চেষ্টা করতে গিয়েই লজ্জা পেলাম। প্রথমেই বলা হলো, এখান থেকে নেবার কোনো সিস্টেম নাই। এখানকার কোড নাম্বার দিয়ে ক্যাশে টাকা জমা দিতে হবে। টাকা পাওয়ার পর তারা একটা টোকেন দেবে। এই টোকেন নিয়ে ভেতরে গিয়ে বসে থাকা যাবে এবং এক সময় টোকেনে দেয়া যে সিরিয়াল নাম্বার লেখা থাকবে সেই সিরিয়ালের নাম্বার ডিজিট্যাল বোর্ডে ভেসে উঠলে আমি কাউন্টার থেকে খাবার নিতে পারবো, বা আমাকে সে টেবিলে দিয়ে দেয়া হবে।

এখানে কথা বলাবলির সুযোগ নাই বললেই চলে, সব কিছু মেশিন আর কার্ডের মামলা, নগদে কাউরেই লেনদেন করতে দেখি না। আমার ক্রেডিট কার্ডেও কোন পাসওয়ার্ড যাচাই বাছাইয়ের বিষয় নাই। ধারণা করছি, জাপানে কেউই বোধহয় ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে না, সেকারণে ফস করে কার্ড বেরিয়ে আসে, সাথে স্লিপ। খাবারের ছবি তুলতে তুলতে আমি আবিষ্কার করে ফেলি, এই যে বাটি বাটি খাবার সাজিয়ে রাখা আছে এখানে তার সবই প্লাস্টিকের খাবার। কিন্তু ডিম, ডিমের পোচওয়ালা ছবি বা কুসুমের ছবি যেভাবে প্লাস্টিক দিয়ে বানিয়েছে, কাঁচের টেবিল না হলে হয়তো আমি নিয়ে খেতেই বসে যেতাম।

আমি লাভলু ভাইয়ের কাছে ফেরত আসি। বলি, এরা খালি শামুক-টামুকই খায় না তো, আরো অনেক কিছু আছে, দেখে এলাম। তিনি একটা বড় মেন্যু বুক উল্টাতে উল্টাতে বলেন, জাপানের মজাদার খাবার হচ্ছে মাছের ঝোল ওডেন এবং সুকিয়াকি আর নিকুঞ্জাগায় গোমাংস। এখানে চীনা খাবার যেমন চাওমেন, ফ্রাইং ডাম্পলিংস এবং গয়জা জাপানি হয়েছে। উপাদান এক হলেও স্বাদ আলাদা।  জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশের আগে থেকেই মাংস খাওয়া একেবারের পছন্দের তালিকায় ছিলো না। ১৮৮০ সালের দিকে জাপানে টোংকাটসুর মতো মাংসের পদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আমি লাভলু ভাইকে বলি, বাদ দেন এসব, আমাকে শুশি খাওয়াইয়েন একবার, ঢাকায় খেয়েছি, এখানে খেতে চাই।

তুই খেতে পারবি না।
এটা পিওর কাঁচা মাছ দিয়ে বানায়, ঢাকারটা হালকা সেদ্ধ মাছের।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। আর এর স্পেশালিটি হচ্ছে, কাঁচা মাছের সাথে একটু রক্ত লাগিয়ে রাখবে, বোঝানোর জন্য যে তা পিওর কাঁচা মাছের।
তাইলে থাক। চলেন যাই আজ, রুমে গিয়ে চিখাই।
কাল আমি উঠে গিয়েছিলাম খাবার ছেড়ে, কিন্তু আজ তো ওঠার সুযোগ নাই। আজ যাচ্ছি ক্রাব রেস্টুরেন্টে। পিওর কাকড়া কেমন করে খায় সবাই তা দেখবো ।

আমি গাইডের কাছাকাছি চলে আসি। গাইডের কথা সবচেয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হচ্ছে রফিক আজম ভাইকে। তিনি সুবোধ বালকের মতো বসেছেন সামনের সিটে তার তরুণী স্ত্রীকে নিয়ে। এবং এ কারণে তাকে যতোটা তরুণ হতে হয়েছে তার স্ত্রী হয়েছেন আরো গম্ভীর। স্ত্রীর বয়েসী তরুণী স্থপতিরা যেরকম চিল্লাচিল্লি চেঁচামেচিতে থাকেন তার এই স্ত্রী একেবারে তাদের বয়েসীদের মতো নন।

গাইড নিজেই যখন ওয়েট্রেসের ভূমিকায় 

আমি পাশের এক খালি সিটে বসে গাইডকে জিজ্ঞেস করি, আচ্ছা- এই যে তোমাদের বয়স বোঝা যায় না, সবাই কেমন যেন তন্বী-তরুণীর মতো, এর সিক্রেট কী?
গাইড হাসে। তার সেই চোখ-মুখ-নাক-নিয়ে হাসাহাসি। হাসতে হাসতে বলে, ফুদ হেবিত।
মানে তাদের খাদ্যাভ্যাস। আমি বলি, সারা দিন তোমরা কী খাও? রুটিন বলো?
সে বলে, আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবারের সময় হলো সকালের নাস্তা। সকালে মিশো সুপ, একটি মান্দারিন আর এককাপ গ্রিন টি বেশিরভাগ জাপানিরা খায়। মিশো সুপে চর্বি কম। এরসঙ্গে তিনটি লাল আটার রুটি শাক সবজি দিয়েও খাওয়া হয়।

জাপানি লোকেরা দুপুরে এক বাটি সুসি সয়া সস দিয়ে খায়। এটা একেবারেই কাঁচা মাছ দিয়ে বানানো। সাথে মাশরুম দিয়ে এক বাটি নুডুলস ও একটি আপচ। আর সকালের মতই এককাপ গ্রিন টি। জাপানিদের রাতের খাবার তালিকায় থাকে এক বাটি ভাত, একটি কমলা ও সসিমি যা বিভিন্ন মাছের সমন্বয়ে তৈরি একটি ঐতিহ্যবাহী জাপানি খাবার। আর প্রতিবেলা খাবারের পর তারা এককাপ গ্রিন টি পান করতে পছন্দ করে।

খাবারের গল্প শোনা শেষ, এবার খেতে যাওয়ার পালা।
আমাদের গাড়ি এসে নামে সেই বিখ্যাত কাকড়া রেস্তোরাঁয়। রেস্টুরেন্টের সামনে নানা জাতের কাকড়ার বড়বড় ছবি। সাথে জাপানি ভাষায় অনেক লেখা। ইংরেজির চল কোথাও নাই। খাবারের দামের তালিকায়ও জাপানি হরফ। ঠিক বুঝতে পারছি না, কতো টাকার খাবার আমরা খাবো। বুঝে লাভও নাই। বিলতো আমাদের দিতে হচ্ছে না। বিল দেবে সেই জাপানি কোম্পানি যাদের টাইলস ও স্যানিটারি ফ্যাক্টরির শোরুম আমরা দেখে এসেছি। আমার কাজ খাওয়া, দেখা আর ছবি তোলা।

টেকিও ফুড

ভেতরে ঢুকতে হলে বাইরে জুতা রেখে ঢুকতে হবে। জাপানিরা তাদের ঘরে বাইরের জুতা পায়ে নিয়ে ঢুকে না। বাইরে থেকে আসা লোকদের জন্য জুতা রাখার সুন্দর ব্যবস্থা আছে। না, জুতা চোর নাই সেখানে। এ কারণে কোনো তালা মারার ব্যবস্থাও নাই। তাকের উপর জুতা রাখতে হয়। যিনি তাকে না রেখে সামনের দোরগোরায় রেখে গেলেন তার জুতাটি পরিপাটি করে এক কর্মী এসে নীরবে সাজিয়ে রেখে চলে যাচ্ছে কাজে। এবং কাজটা করছে খুব দ্রুত।

ভেতরে ঢুকতেই দেখা মিললো জাপানি খাবার টেবিলের। তারা প্রায় মাটিতে বসে খায়। জানু পেতে বসার পর যতটুকু উচ্চতার টুল লাগে, সে পরিমান টুল সামনে সাজানো। আমাদের বসা মাত্রই একে একে সাজানো খাবারগুলো চলে আসতে লাগলো। তিন কোর্সের খাবার। প্রথমে ভাজাপোড়ার মতো কিছু, পরে ৭ আইটেমের থালি যার মাঝাখানে বিশাল একটা কাকড়ার মাংস আর দুই ঠ্যাং রোস্ট করা, আর শেষে মিষ্টান্ন জাতীয় আরো কয়েক পদ। একবাটি ভাত আছে, আছে নানা জাতের আচার, সবজি। খাবারের সাথে আলাদা পানি নাই, পানি জাতীয় স্যুপ। আমি সবার খাবার ছবি তুলি। এতো সুন্দর করে প্লেট সাজিয়েছে যে খেতেই ইচ্ছা হচ্ছে না, মনে হলো খেতে শুরু করলেই তো আর সাজানোটা নষ্ট করে ফেলবো।

দেখি আমাদের সেই গাইড এখানে এসে রেস্টুরেন্টের ওয়েটারের সাথে কাজে লেগে গেছে। খাবার প্লেট এনে দিচ্ছে। দ্বিতীয় যে বিষয়টি দেখলাম, তা হচ্ছে এই রেস্টুরেন্টের কোন ওয়েট্রেস (এরা শতভাগ মহিলা) হাঁটে না, সবাই দৌড়ায়। দৌড়াতে দৌড়াতে খাবার সার্ভ করে, করার আগে কাস্টমারের হাঁটুর কাছে বসে তারপর আনত ভঙ্গিতে হাসি মুখে খাবার সার্ভ করতে থাকে। কারো অতিরিক্ত কাঁচামরিচ বা লবণের দরকার হলে এনে দেবার জন্য তাদের মহা ব্যস্ত হতে দেখি। এবং এক সময় খাবারের ছবি তোলা শেষ করে আবার বাসে উঠি। আমরা আজ বিকালে টোকিও টাওয়ারে উঠে অনেক উপর থেকে টোকিও দেখবো। আর সন্ধ্যাটা নিজের। নিজের মতোই কাটাব। এই ফাঁকে আরো দুটো কথা বলে রাখি।
এক বাসে উঠে গাইডকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমাদের এই সেট মেন্যুতে পার হেড কতো পড়েছিল। সে সেলফোনের ক্যাল্কুলেটর টিপে বলেছিল- পার হেদ এইতি দলার।
দুই আমি তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে চিড়া ভিজাতে শুরু করি।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ আগস্ট ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়