ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মেঘের উপরে মেঘ! নেপাল

শেখ সোহেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২৫ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেঘের উপরে মেঘ! নেপাল

শেখ সোহেল, নেপাল (কাঠমান্ডু, পোখারা) থেকে ফিরে : হঠাৎ করেই প্রোডাক্ট সেলস্‌ ম্যানেজার শুভ ভাই জানালেন- আমাকে নেপাল যেতে হবে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৬ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে। তারা সবাই ওয়ালটনের সাব-ডিলার। টেলিভিশন বিক্রিতে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন। দেশব্যাপী ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন-ফোর এর আওতায় এই সাফল্যের কারণে নেপাল ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছেন ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক জনাব রাইসা সিগমা হিমা।

আমি যাচ্ছি কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে। তাই স্বাভাবিকভাবেই একটু বাড়তি উত্তেজনা ছিলো। সারাদেশ থেকে সাব-ডিলাররা আসবে। পাসপোর্ট, ছবি সংগ্রহ শেষ করে ১৮ জুলাই ২০১৯ সকাল আটটার মধ্যে সকালে এয়ারপোর্ট থাকব এমনটাই ঠিক হলো। আমার বাসার কাছেই এয়ারপোর্ট। প্লেন ছাড়বে সকাল ১০:৩০ মিনিটে। আমি এয়ারপোর্টে গিয়ে দেখি তখনও অনেকে আসেননি। তালিকা ধরে ফোন দিতে লাগলাম। আমি সবাইকে চিনি না। আমাকেও অনেকে চেনেন না। ফোনে সবাইকে পেলাম। তারা কাছে-পিঠেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন। ৪-৫ জন পথে আছেন। সবাইকে নিয়ে ৫নং গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। বাইরে প্রচণ্ড গরম। আমরা যার যার বোডিং কার্ড নিয়ে ফটোসেশন শেষ করে ইমিগ্রেশন লাইনে দাঁড়ালাম। বিশাল লাইন। খুবই আস্তে আস্তে সামনে এগুচ্ছে। সামনে দেখলাম ৬-৭ জনের একটি পরিবার আমাদের পরে এসে আগে চলে গেলেন। কী আর করা! আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। ইমিগ্রেশনে আমিও সামনে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম। সেইসঙ্গে যারা লাইন না মেনে আগে চলে গেলেন সেটাও অভিযোগ করলাম। আমি নাছোড়বান্দা। তাই বিশেষ সুবিধা আমিও নিলাম। আমার কাছে কোম্পানির ২৩ জনের ছাড়পত্র ছিলো। আমি ছাড়পত্র দেখিয়ে মাত্র ১০ মিনিটেই সবাইকে ভেতরে ঢুকালাম। এর আগেও দেশের বাইরে গিয়েছি। কিন্তু নিরাপত্তার এতো কড়াকড়ি ছিলো না। বিমানে ওঠার আগে বেল্ট, ঘড়ি, জুতা, মানিব্যাগ, ল্যাপটপ সব ট্রেতে দিয়ে চেক করা হলো।

যাইহোক নির্ধারিত সময়ে বিমান ছাড়লো। আমি জানালার পাশে সিট পেয়েছি। আমার ছোটবেলা থেকেই চালকের পিছনের সিট ভালো লাগে। যেন পুরো রাস্তা দেখে দেখে যেতে পারি। জানালার পাশে সিট তাই কোনো ছাড় নাই। ঢাকা শহরটাকে যতটুকু পারা যায় উপর থেকে দেখে নিবো। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। বেশিদূর দেখা গেলো না। আকাশ মেঘে ঢাকা। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা কাঠমান্ডুর আকাশে পৌঁছে গেলাম। মাত্র ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট লাগলো। কাঠমান্ডুর আকাশ ঝকঝকে চকচকে। ছোট ছোট সাদা মেঘের উপর সূর্যের আলো পরে মেঘগুলো আরও উজ্জ্বল লাগছে। মেঘের মধ্যে পাহাড় ভেদ করে নেমে এলাম সমতল ভূমিতে। চারিদিকে বিশাল পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। আমি সব সময় প্রচুর ছবি তুলি। কিন্তু আজ কেন জানি ছবি তুলতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছিলো যতো পারি চোখের দেখা দেখে নিই। ছবি তো এখন গুগল, ইউটিউবে পাওয়া যায়।

আমরা আগে থেকে ভিসা নিই নাই। শুনেছি নেপাল এলেই ভিজিট ভিসা পাওয়া যায়। আমরা ভিসার জন্য লাইনে দাঁড়ালাম। আমার পাসপোর্ট স্ক্যান করে নাম, মোবাইল নাম্বার আর পাসপোর্ট নাম্বার ডিজিটাল মেশিনে টাইপ করে টোকেন দিলো। আমি আবারও লম্বা লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম ইমিগ্রেশনের জন্য। পেছন থেকে দু’জন মেয়ে হ্যাফ পান্ট আর টি শার্ট পরা লাইনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। সামনের বাঙালি ভদ্রলোক তাদের জায়গা করে দিলেন। আমি ভাবলাম আমি আর লাইনে দাঁড়িয়ে কি করবো? আমিও সামনে গিয়ে পুলিশকে পরিচয় দিতেই তিনি আমার পাসপোর্ট নিয়ে আমাকে ভিসা দিয়ে দিলেন। আমি ভিসা নিয়ে সোজা নিচে নেমে সবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

আমাদের গাইড নেপালি। ওর নাম মোহন। সে বোধহয় এখনো আসেনি। প্রায় ১ ঘণ্টা অপেক্ষার পর একে একে সবাই আসতে লাগলেন। মোহনকেও এক সময় খুঁজে পেলাম। আসলে তাকে আমি আগেই দেখেছিলাম। কিন্তু তার হাতে কোনো নাম বা পরিচয় কার্ড না থাকায় বুঝতে পারিনি। এরপর তাকে আমি একটি সাদা কাগজে বড় করে লিখে দিলাম- ওয়ালটন। বললাম এটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে সবাই তোমাকে খুঁজে পাবে। সে হাত উঁচিয়ে ওয়ালটন বলতেই সবাই চলে এলো। আমরা এয়াপোর্ট থেকে নেমে পাহাড়ি ঢালের নিচে থেকে গাড়িতে উঠলাম। টুরিস্ট এসি বাস। বেশ ভালোই মনে হলো। মোহন সবাইকে নেপালি একটি উত্তরীয় গলায় পরিয়ে অভ্যর্থনা জানালো। আমরা হোটেলে এসে পৌঁছালাম। ফ্রেস হয়ে ১ ঘণ্টার বিরতি দিয়ে আমরা আবার সবাই বাসে উঠলাম। মোহন বললো, ৫দিনই এই বাস আমাদের সেবা দেবে। মোহন খুবই হাসি খুশি এবং আন্তরিক ছেলে। অসম্ভব বিনয়ী। নেপালে আমাদের প্রথম দর্শন শুরু হলো কাঠমান্ডু হনুমান দোকা দরবার স্কয়ার পাহাড়ের উপরে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৪০০ মিটার। আমরা গাড়ি নিয়েই উপরে উঠলাম। তারপর সামান্য সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে ওঠা। এখানে মন্দিরের চেয়ে বেশি যে জিনিস আমাকে ছুঁয়েছে সেটা হলো এখান থেকে পুরো শহরটা দেখা যায়। পাহাড়ের উপর থেকে শহরটাকে বেশ লাগছে। পরির মতো সুন্দর মেয়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট প্যান্ট আর টি-শার্ট পরে।

হনুমান দরবার থেকে আবার চলে এলাম হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার শেষ করে আমি আর সঙ্গে ইমরান ভাই বের হলাম কাঠমান্ডু শহর দেখতে। হোটেলের গার্ড আমাদের বললো, বাইরে না যাওয়াই ভালো। আমি অবশ্য এসব মোটেও তোয়াক্কা করি না। ঘুরতে এসে হোটেলে বসে সময় কাটানোর কোনো মানে হয় না। প্রায় ২টা পর্যন্ত আমরা ঘুরে হোটেলে ফিরে এলাম। আসলে কোনো নতুন শহরকে জানতে হলে রাতে ঘুরতে হবে। তা না হলে সেই শহর সম্পর্কে জানা যায় না। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ আমরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। অবশ্য আমদের দু’জনের কনফিডেন্ট লেবেল ছিল খুবই উচ্চমানের। আর কনফিডেন্ট থাকলে কোনো সমস্যাই সমস্যা না।

সকালে উঠে আমরা রওনা হলাম পোখারার উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে মোহনের কাছে পোখারার সৌন্দর্যের কথা শুনলাম।  মোহনের বাড়ি পোখারায়। স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে থাকে। পোখারা যাওয়ার সময় দেখলাম মোহনের সঙ্গে তার স্ত্রীও আছে। তিনিও বেশ হাসিখুশি এবং মিশুক ছিলেন। যেতে যেতে আমাদের সঙ্গে পরিচয় হলো। তারা দু’জন নেপালের স্থানীয় একটি গান শোনালেন। গান শুনে মনে হলো, ও আমার দেশের মাটি/ তোমার পড়ে ঠেকাই মাথা... ধরনের গান। গানটি ছিলো.. মোসো মোসো...রেশম রেশম...।

পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আঁকাবাঁকা পথ। অসাধারণ ছিলো সেই ভ্রমণ। মাটির যে কত বিচিত্র রূপ তা বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট। পানির ফিল্টারের জন্য আমরা যে পাথরের ফিল্টার ব্যবহার করি মাটির স্তরগুলো এমন বিভিন্ন ধরনের। নানান রঙের। মাটির যে এতো বিচিত্র রূপ তা আগে বিভিন্ন বইতে পড়েছি। কিন্তু দেখিনি। বেলেমাটির মধ্যে বিশাল বিশাল পাথর দিয়ে সাজানো পাহাড়।  আবার কোথাও কঠিন শিলা। কোথাও বেলে ভঙ্গুর মাটি। কোথাও সাদা চুনের মতো। আবার কোথাও লাল বর্ণের এঁটেল মাটি। আমার কাছে অবাক লেগেছে অনেকটা বালিমাটির সাথে পাথরের সমন্বয়ে যে পাহাড়। একটি ছাড়া কাঠমান্ডু থেকে পোখারা কোথাও পাহাড়ের গায়ে কোনো বিলবোর্ড দেখলাম না। মনে মনে ভাবলাম পাহাড়ের গায়ে দূরে হলিউডের মতো করে ওয়ালটন লেখা থাকলে মন্দ হতো না। পোখারা ঢুকতেই আমাদের যে জিনিসটা মুগ্ধ করলো তা হলো  বাড়িঘর। শৈল্পিকভাবে সাজানো প্রতিটি বাড়ি। পাথরের টালির বাড়ি। দেখে মনে হচ্ছে সস্তা ধরনের বাড়ি। কিন্তু শিল্পের ছোয়ায় পরিপূর্ণ। রঙ বেরঙের দেয়াল আর সুন্দর বারান্দা। বারান্দায় নাই কোনো ঝুলানো কাপড়। বুঝলাম মোহন ঠিক বলেছে। পোখারা আর মোহন যেন একে অন্যের।

পোখারা শহর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতায়। কাঠমান্ডু থেকে পোখারার দূরত্ব প্রায় ২১৫ কি.মি.। রাস্তা প্রায় ফাঁকা ছিলো। কিন্তু পাহাড়ি রাস্তার কারণে সময় লেগেছে প্রায় ৮ ঘণ্টা। দুইবার যাত্রাবিরতি ছিলো। প্রসঙ্গত বলে রাখি যাত্রাপথে আমরা যে দু’তিন স্থানে থামি, সেখানে আমিসহ বেশ কয়েকজন একটা বিষয় লক্ষ্য করি। তা হচ্ছে বাথরুম ব্যবহার করে আমরা সবাই দরজা খোলা রেখে চলে আসছি। কিন্তু মোহনের স্ত্রী ছুটে গিয়ে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে আসছে। ব্যাপারটা খুবই সামান্য। কিন্তু কাজটা অসামান্য। বাথরুমের দরজা যখন খোলা থাকে, তখন রাস্তা থেকে দেখতে খুবই বাজে লাগে। কিন্তু বন্ধ দরজায় পরিবেশটা সুন্দর লাগে। বিশ্রামের স্থানে ছোট ছোট টেবিল চেয়ার সাজানো। পাহাড়ি পাতার ছাউনি। কোথাও কোনো চিপস্-এর প্যাকেট নেই। নেই প্লাস্টিকের বোতলের ছড়াছড়ি। এতোটুকুতেই সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। আসলে টাকা পয়সা দিয়ে সৌন্দর্য হয় না। সৌন্দর্যের জন্য লাগে সুন্দর মন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।

পোখারায় ক্রিস্টাল হোটেলে আমরা উঠলাম। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আবার বের হলাম। এবারের গন্তব্য ওয়ার্ল্ড পিস প্যাগোডা এবং ফেওয়া লেক। ওয়ার্ল্ড পিস প্যাগোডা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪০০ মিটার উচ্চতায়। প্রায় ১০০০ মিটার ওঠার পরে বাস আর গেলো না। হালকা বৃষ্টিতে এতো বড় বাস নিয়ে যাওয়া বিপজ্জনক মনে হওয়ায় আমার বাস ঘুরিয়ে নিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম পরের দিন ছোট কোনো গাড়ি নিয়ে যাওয়ার। খাড়া পাহাড় সত্যি ভয়াবহ ব্যাপার ছিল। যাইহোক বাস আমাদের ফেওয়া লেকে নামিয়ে দিলো।

আমরা পড়ন্ত বিকেলে ফেওয়া লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। বিশাল এক লেক, লেকের মাঝে একটি দ্বীপ বানিয়েছে। আবার সেখানে মন্দির আছে। মন্দিরের পাশে কবুতর। ১০০ রুপি দিয়ে কবুতরের খাবার কিনে অনেকে খাওয়াচ্ছেন। ৫০ মিটার জায়গা নৌকায় যেতে আসতে ১৫০ রুপি লাগে। বিশাল লেকের চারপাশে মনোরম পরিবেশ। এমন স্থানে প্রেমিকার হাত ধরে নৌকা ভ্রমণের মজাই আলাদা। বেশ কিছু জুটিকে দেখা যাচ্ছে। তবে তারা স্থানীয় বলে মনে হচ্ছে না। আমরা পাড়ে চলে এলাম। আজকের মতো এখানেই শেষ। রাতে ৮:৩০ মিনিটে লেকের পাড়ে স্থানীয় নৃত্য ও সংগীত সন্ধ্যার আয়োজন আছে। তাই হোটেলে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। রাতের খাবার সাথে পাহাড়ি কোমল নৃত্য মনকে আবারও চাঙ্গা করে তুললো। পাহাড়ি মেয়ের বাহারি নাচ সত্যি অসাধারণ ছিল। খাওয়া শেষে আমরাও ওদের নাচে সঙ্গ দিলাম। তাতে ওরাও বেশ উপভোগ করলো বলে মনে হয়। সিটি বাজিয়ে ওদের উৎসাহ দিলাম। যে মেয়েগুলি নাচলো তাদের মধ্যে একজনের নাম চিঙ্গি কস্তু। বয়স খুব বেশি হলে ১৫-১৬ হবে। সে পোখারা নৃত্যকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পী। সকলের চেয়ে চিঙ্গি অসাধারণ নাচে।

খাওয়া শেষ করে আমি এবং ইমরান ভাই বের হলাম। ইমরান ভাই ন্যানোবেস-এর পক্ষ থেকে আমাদের গাইড করছেন। তার সেবা এবং আন্তরিকতার অভাব ছিলো না। তার স্বভাব স্বচ্ছ পানির মতো। যে পাত্রে রাখবেন সেই পাত্রের আকার এবং রঙ ধারণ করে পাত্রের সাথে মিশে যাবে। সত্যি অসাধারণ। কাঠমান্ডুর চেয়ে পোখারার পরিবেশ অনেক সুন্দর। চারিদিকে ঝকঝকে চকচকে। অসংখ্য বার আর নাইট ক্লাব। রাতের পরিবেশটা এখানে খুব ভালো ছিলো। নাচ, গান আর উল্লাস। প্রচুর বিদেশি পর্যটক। বেশিরভাগ চাইনিজ, জাপানিও অনেক আছে। ভোর ৪টায় উঠতে হবে হিমালয় দেখতে। তাই হোটেলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে মাইক্রোবাসে উঠলাম হিমালয় দেখার উদ্দেশ্যে। হালকা অন্ধকার ভেদ করে আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে উঁচু পাহাড়ে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ মিটার উচ্চতায় সারাংকোট পর্বত। পর্বতের চূড়ায় একটি তিনতলা ওয়াচ টাওয়ার এর মতো। তিন দিকে খোলা এই দালানটি হিমালয় দর্শনের জন্য। উপরে উঠে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। চারিদিকে মেঘলা আকাশ, টিপটিপ বৃষ্টি। সাথে হিমালয় থেকে আসা ঠান্ডা বাতাস ফ্রি। অনেক পর্যটক। সবাই ক্যামেরা আর মোবাইল হাতে নিয়ে আছে হিমালয় দেখবে বলে। কিন্তু হিমালয়ের তো দেখা নাই। হিমালয় মহাশয় মেঘের চাদর মুরে ঘুমিয়ে আছেন। ততক্ষণে সকাল হয়ে গেছে। পোখারা শহরটা আস্তে আস্তে মেলে ধরছে তার সৌন্দর্য। সৌন্দর্যের ডানা মেলে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আকাশে মেঘের অনেক স্তর। আমরা যখন রওয়ানা হই, তখন চারিদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিলো। এখন আমরা মেঘেরও উপরে আরেক মেঘের সাথে ধাক্কা খাচ্ছি। সে এক অন্য রকম অনুভূতি। দূর আকাশে একটু একটু করে হিমালয় দেখা যাচ্ছে। ততক্ষণ সবাই নিচে নেমে গেছে। ঘড়িতে আটটা বাজে। মেঘ ভেদ করে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। দূরে পাহাড়ের পাদদেশে নবনির্মিত এয়ারপোর্ট। পাহাড়ের আরেক চূড়ায় ক্যাবল কার দিয়ে উঠছে পাঁচ তারা হোটেলে। মেঘগুলো আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে দূর আকাশে সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গ। আহা! কী অপরুপ রুপ! কি বিশালতা! সত্যি এ যেন এক অন্য রকম অনুভূতি। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে আমি এবং আমরা সমস্বরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম- হ্যালো ওয়ালটন। ধন্যবাদ ওয়ালটন।

ওয়ালটনের সৌজন্যে আজ হিমালয়ের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে। তাই কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ সেখানেই। হিমালয় দেখার পরে আমার অন্য কিছু দেখার ক্ষুধা কিছুটা কমে গেলো। পাহাড়ের চূড়া থেকে নামতে নামতে বিদায় জানালাম হিমালয়কে। বিদায় জানালাম নেপালের স্বর্গ পোখারাকে। মেঘের উপর থেকে নেমে এলাম মাটিতে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ আগস্ট ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়