ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কলকাতার টলিগঞ্জ : ২৪৩ বছরের ঐতিহ্য

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০০, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কলকাতার টলিগঞ্জ : ২৪৩ বছরের ঐতিহ্য

কলকাতার টলিগঞ্জের সরকারি ফিল্ম স্টুডিও বিশ্ববাংলা টেকনিশিয়ান স্টুডিও

রেজাউল করিম, কলকাতা থেকে : টলিগঞ্জ। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরের একটি ছোট্ট এলাকার নাম। এই টলিগঞ্জ এলাকাটি বিখ্যাত পশ্চিম বঙ্গের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য। বিনোদন মাধ্যমে এর অপর নাম টলিউড।

বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এফডিসিকে ঘিরে যেমন ঢালিউউ। ঠিক একইভাবে কলকাতার সব ফিল্ম টলিগঞ্জে তৈরি হয় বলে এটি টলিউড নামে পরিচিতি পেয়েছে।  ‍মূলত প্রাশ্চাত্যের হলিউড নাম থেকেই ঢাকার ঢালিউড এবং কলকাতার টলিউড।

কলকাতার টলিগঞ্জ সরেজমিন ঘুরে এই শহরের নানা বৈচিত্রময় তথ্য পাওয়া গেছে। টলিগঞ্জের স্টুডিওগুলোতে এখন আগের মতো ফিল্ম তৈরি না হলেও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য বিখ্যাত টলিগঞ্জ। টলিগঞ্জের যে পাতাল রেল স্টেশন রয়েছে, এটি মহানায়ক উত্তম কুমারের নামেই নামকরণ করা।

মহানায়ক উত্তম কুমার স্টেশন মানেই টলিগঞ্জ। কলকাতা শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকে মাত্র ১০ থেকে ১৫ টাকা মেট্রো রেল ভাড়ায় টলিগঞ্জে পৌঁছানো যায়। যে সিনেমা কমপ্লেক্স ঘিরে টলিগঞ্জ, সে কমপ্লেক্সের নাম বিশ্ববাংলা টেকনিশিয়ান স্টুডিও। পশ্চিম বাংলা সরকারের পরিচালনাধীন টেকনিশিয়ান স্টুডিও টলিগঞ্জের মূল সড়কের পাশেই অবস্থিত।

২৪৩ বছর আগে যেভাবে নামকরণ টলিগঞ্জ :

সরেজমিন অনুসন্ধানে এবং টলিগঞ্জের স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৭৭৬ সালে মূলত টলিগঞ্জ এলাকার নামকরণ করা হয়। সে সময় মেজর উইলিয়াম টলি নামের একজন বৃটিশ সেনা কর্মকর্তা এই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ১৭৭৬ সালে তিনি কলকাতার সঙ্গে আসাম ও পূর্ববঙ্গের যোগসূত্র একটি বড় খাল খননের কাজ শুরু করেন। খালটি খনন হওয়ার পর এটি টলির নামেই নামকরণ করা হয়। এছাড়া খালটি খনন হওয়ার পর এটির দুই পাশে বাজার ও জনবসতি গড়ে উঠে। এরপর এলাকাটি টলিগঞ্জ হিসেবেই পরিচিতি পায়। এর আগে এই এলাকার নাম রসাপাগলা ছিল বলে স্থানীয়দের মধ্যে জনশ্রুতি আছে।

টলিগঞ্জের মূল সড়ক

 

টলিগঞ্জে বিশ্ববাংলার পাশের বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ তারাপদ চ্যাটার্জি রাইজিংবিডিকে জানান, ১৭৭৬ সালে গড়ে উঠা টলিগঞ্জে ১৯০০ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে এই এলাকাকে ঘিরে তৈরি হয় কলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। মহানায়ক উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত সব নায়ক-নায়িকারা সৃষ্টি হয়েছেন এই টলিগঞ্জ থেকেই।

তিনি আরো জানান, কলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখন সমৃদ্ধ এবং বিস্তৃত হয়েছে। এখন পুরো পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্নস্থানে ফিল্মের কাজ হয়। টলিগঞ্জে এখন আর ফিল্মের কাজ তেমন একটা হয় না। কিছু টেলিভিশন সিরিয়ালের কাজ হয় নিয়মিত। ফিল্মের কাজ না হলেও টলিগঞ্জ টলিউড নামেই তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কলকাতার টলিউড ইন্ডাস্ট্রি ভারতের অন্য রাজ্যের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মতো ততোটা বড় নয়। বিশেষ করে বলিউড, তেলেগু ও তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখন সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ ভারতে। সেই তুলনায় পিছিয়ে টলিউড। সরকারি পরিচালনাধীন বিশ্ববাংলা টেকনিশিয়ান স্টুডিও ছাড়াও এখানে বেসরকারি মালিকানাধীন এন্টি ওয়ানসহ বেশ কিছু ফিল্ম মেকিং স্টুডিও রয়েছে। এগুলোতে নিয়মিত টেলিভিশন সিরিয়ালের শুটিং হয়। তবে মাঝে মধ্যে ফিল্মেরও কিছু কাজ হয় বলে এখানকার কর্মকর্তারা জানান।


রাইজিংবিডি/কলকাতা/১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯/রেজাউল/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়