ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শত বছরের পুরনো দুর্গাবাড়ি

সুমন্ত গুপ্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ৫ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শত বছরের পুরনো দুর্গাবাড়ি

বাঙালি হিন্দু সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। এ সময় দুর্গাপূজাকে ‘অকালবোধন’ বলা হয়। কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ অনুসারে, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দেবী দুর্গার পূজা করা হয়েছিল। অসময়ে পূজা বলেই এই পূজার এমন নামকরণ। কৃত্তিবাস ওঝা রামায়ণে লিখেছেন, রাম স্বয়ং দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন। এই শরতেও হচ্ছে দেবীর পূজা। 

সেই ছোটবেলা বাবার মুখে শুনেছি দুর্গাবাড়ির কথা। অনেক দিন ধরে পরিকল্পনা করছিলাম সিলেটের শত বছরের পুরনো দুর্গাবাড়িতে ঘুরতে যাবো। কিন্তু নানা কারণে যাওয়া হয়ে উঠছিল না। পাপি মানুষ সে কারণেই হয়তো দেবী দর্শন হচ্ছিল না। আর দেবী দর্শন করা ভাগ্যের ব্যাপার! তবে দেবী প্রসন্ন হলেন সেবার। সুতরাং পরিকল্পনা করে ফেললাম। সে অনুযায়ী আমার সব সময়ের ভ্রমণসঙ্গী মাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম দেবী দর্শনে। শুক্রবার নির্ধারিত সময়ে ঘড়ি শুরু করলো ডাকাডাকি। বুঝতে বাকি রইলো না, এবার ঘুম থেকে উঠতে হবে। সপ্তাহের বাকি দিনগুলো অফিসের কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকি শুক্রবার যে বিশ্রাম নেব সে উপায় নেই। সেদিন বাসার কাজ জমে থাকে। তাই দ্রুত হাতের কাজ শেষ করতে হলো। সিলেট শহর থেকে জায়গাটা খুব দূরে নয়, ফলে দুপুরের পরেও বের হলে চলবে। সেভাবেই বলে রেখেছিলাম। নির্ধারিত সময়েই আমরা বের হলাম গন্তব্যপানে।

সূর্যদেবের প্রখর তেজদীপ্ত রূপ মহাসড়ক ঝলসে দিচ্ছে। বন্দরবাজার, মিরাবাজার, টিলাগড় পেড়িয়ে এগিয়ে চলছি আমরা। কিছু সময় পর চলতি পথে দোকানগুলোর সাইন বোর্ডে দেখতে পেলাম দুর্গাবাড়ি রোড। বুঝতে পারলাম কাছেই চলে এসেছি। ভাবতে ভাবতেই গাড়ি এসে থামল শতবর্ষ পুরনো দুর্গাবাড়ির প্রবেশদ্বারে। এই বাড়ির জন্যই এলাকার নাম দুর্গাবাড়ি রোড। আমরা চার চাকার যান থেকে নামলাম। মূল সড়ক থেকে কিছুটা পথ পদব্রজে এগিয়ে পৌঁছাতে হয় মূল মন্দিরে। শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ। নেই কোন কোলাহল। শুধু সবুজ আর সবুজ!

 

 

আমরা এগিয়ে চললাম। দূর থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম সিঁড়ি। মনে হলো অর্ধশত সিঁড়ির ধাপ হয়তো উঠতে হবে আমাদের। জুতো খুলে সিঁড়িতে পা রাখলাম। ছবি তুলছি আর এক পা করে এগিয়ে চলছি। মা এক এক করে সিঁড়ি গুণছেন আর পা বাড়াচ্ছেন। বললেন এখানে পঁয়ত্রিশটা ধাপ আছে। আমরা সেই ধাপ পেরিয়ে পৌঁছলাম মূল মন্দিরে। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য বসার স্থান আছে। আমরা এগিয়ে চললাম মাতৃ দর্শনের জন্য। চারপাশে ধূপের ঘ্রাণ এক অন্য রকম পরিবেশ তৈরি করেছে। শেষ পর্যন্ত মাতৃদর্শন হলো আমার। মনটা ভরে গেলো। পৃথিবীর মঙ্গল কামনায় কিছু সময় বসে প্রার্থনায় অংশ নিলাম। পরে এগিয়ে চললাম পাশের শিব মন্দির দেখতে। অসাধারণ কারুকাজ! দেখলাম আমাদের মতো অনেকেই এসেছেন দেবী দর্শনে। কেউ কেউ মনের বাসনা পূরণের নিমিত্তে মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালিয়ে দিচ্ছেন।

কথা হচ্ছিল দুর্গাবাড়িরই একজন রাজেশ চক্রবর্তীর সাথে। তিনি বললেন, শোনা যায় কলকাতার পাথরঘাটার জমিদার এই দুর্গাবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী সম্পাদিত ‘স্মৃতি প্রতিতী’ বইয়ে এর উল্লেখ আছে। ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ছিলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। স্বদেশী আন্দোলনে অনেক বীর এখানে এসে মায়ের পায়ে নিজের রক্ত দিয়ে প্রতিজ্ঞা করতেন- কখনও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবেন না।   তাঁরা; সেই বীরেরা কথা রেখেছিলেন। স্বদেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করেছিলেন। এ থেকেই অনুমেয় হয় এই মন্দিরে দুর্গাদেবী শতবর্ষ ধরে পূজিত হয়ে আসছেন।

 

 

যাবেন যেভাবে: দুর্গাবাড়ি মন্দির যেতে হলে আপনাকে বাস অথবা ট্রেনে সিলেট শহরে আসতে হবে। প্রতিদিন ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে বাস, ট্রেন ছাড়ে। ভাড়া ৩২০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। সিলেট শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকে দুর্গাবাড়ি যাবো বললেই সিএনজি রিকশা আপনাকে নিয়ে যাবে। ভাড়া নেবে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা।



ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়