ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ি

ইমানুল সোহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১৬ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ি

কুষ্টিয়া শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে কুমারখালি উপজেলার অন্তর্গত গ্রাম শিলাইদহ। এই গ্রামেই অবস্থিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ি। রবীন্দ্রনাথ জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন। সেই সুবাদে তাঁর শিলাইদহে আসার সুযোগ হয়। পদ্মানদী আর সবুজে ভরা গ্রামে এসে রবীন্দ্রনাথ জমিদারির পাশাপাশি সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। প্রথমদিকে বাড়িটি তৎকালীন নীলকর সাহেবদের কুঠিবাড়ি ছিল। ১৮০৭ সালে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর এ অঞ্চলের জমিদারি পান। তিনি বাড়িটি পুনরায় নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৮৮৯ সালে জমিদারি দেখাশোনার জন্য রবীন্দ্রনাথ এ অঞ্চলে আসেন। তখন থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত কবিগুরু এই অঞ্চলে জমিদারি পরিচালনা করেন।

কুঠিবাড়িতে বসেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন। এছাড়াও তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনার অনেকগুলো এই বাড়িতে বসেই লেখা। এর মধ্যে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ ‘সোনার তরী’, ‘চিত্রা’, ‘চৈতালী’ ইত্যাদি। উপন্যাস ‘চোখের বালি’, ‘গোরা’, ‘চতুরঙ্গ’ ও ‘ঘরে বাইরে’। নাটক- ‘চিরকুমার সভা’, ‘গোড়ায় গলদ’ ও ‘অচলায়তন’। প্রবন্ধ- ‘পঞ্চভূত’, ‘ইউরোপের ডায়েরি’, ‘ভানু ঠাকুরের পত্রাবলী’। ‘পোস্টমাস্টার’ গল্পটিও এই শিলাইদহে বসেই কবিগুরু লিখেছেন। রবিঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ি সবসময় দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে।

৩৩ বিঘা জমি নিয়ে বিস্তৃত কুঠিবাড়ি তিন তলাবিশিষ্ট। এখানে পুকুর, ফুল ও ফলের বাগান রয়েছে। বাড়িতে রয়েছে ১৭টি কক্ষ। এসব কক্ষে রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখা পাণ্ডুলিপি, চিত্রকর্ম, ব্যবহৃত খাট, আলমারি, লোহার সিন্দুক, নৌকা, পারিবারিক দুর্লভ ছবি, ঘাসকাটা যন্ত্র, লেখার টেবিল, ব্যবহৃত তলোয়ার ও বিভিন্ন বয়সের ছবি প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়াও মিউজিয়াম থেকে পুকুরঘাটে যাওয়ার পথে চোখে পড়বে কবির ব্যবহৃত (স্মারক) পাতকুয়া ও চৌবাচ্চা। এছাড়াও মিউজিয়ামটির চারপাশে কবির লাগানো বিভিন্ন গাছ রয়েছে।

কুঠিবাড়ি দেখতে আসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আদনান বলেন, ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প, নাটক  ছোটবেলায় পড়েছি, এখনও পড়ছি। তার সাহিত্যকর্ম পাঠক-মন আকৃষ্ট করে। এই বাড়িটি দেখলেই শিল্পী, গল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক রবীন্দ্রনাথকে অনুভব করা যায়।’

১৯৫৮ সাল থেকে রবিঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণ করে আসছে। এখানে ‘ঠাকুর স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাড়িটিতে প্রবেশমূল্য ২০ টাকা।

কীভাবে যাবেন: দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাসযোগে কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মোড়ে আসা যাবে। যারা ঢাকা-খুলনা ট্রেনে আসতে চান তাদের কুষ্টিয়ার পোড়াদহ স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চৌড়হাস মোড়ে এসে নামতে হবে। দুটি লোকাল ট্রেন অবশ্য পোড়াদহ স্টেশন থেকে কুষ্টিয়া আসে। চৌড়হাস মোড় থেকে কুঠিবাড়ি যাওয়ার অটোরিকশা রয়েছে। ভাড়া প্রতিজন ৬০ টাকা।


ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়