ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

দেখে এলাম রাঙামাটির ছাদ

খাদিজা খাতুন স্বপ্না || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেখে এলাম রাঙামাটির ছাদ

বেড়াতে ভালো লাগে ছোটবেলা থেকেই। বাবার সঙ্গে এখানে-ওখানে যেতাম। তখন থেকেই বেড়ানোর নেশা। যদিও একা একা খুব কম কোথাও গিয়েছি। একটু বড় হয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দল বেঁধে ঘুরেছি। তবে এবারের ভ্রমণ একেবারে আলাদা এবং নতুন অভিজ্ঞতা।

ঈদের ছুটি শেষ করে গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছি মাত্র। এক রাত যেতে না যেতেই ফেসবুকে একটা গ্রুপে ইভেন্ট দেখলাম- রাঙামাটি সাজেক যাবে। দেখে কেন জানি যেতে ইচ্ছে হলো। বন্ধুদের বললাম, ওরা যাবে না। সিদ্ধান্ত নিলাম একাই যাবো ওই গ্রুপের সঙ্গে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ট্যুর ম্যানেজমেন্ট-এ যিনি ছিলেন তাকে বললাম মনের কথা। তিনি খুশি হলেন। অবশেষে আমরা ১৫-১৬ জনের একটা দল তৈরি হয়ে গেলাম। 

সাজেক গিয়ে মনে হচ্ছিল, ঢাকায় আর না ফিরি, এখানেই থেকে যাই৷ এত সুন্দর রূপ বৈচিত্র্য! যে কারো ভালো লাগবে। মেঘ, পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। সাজেক গিয়ে যা দেখলাম কিছুক্ষণ খুব গরম, আবার কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি, বৃষ্টি শেষ হতেই মেঘেরা ছুঁয়ে দিয়ে যায়। এ এক অন্যরকম অনুভূতি!

যতদূর চোখ যায় ততদূর ছোট-বড় সবুজ পাহাড়। দৃষ্টি যেদিকে যায় সেদিকেই সবুজের সমুদ্র। উপর থেকে দেখলে মনে হয় সবুজ সমুদ্র ঢেউ খেলে যাচ্ছে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে দূর দিগন্তে। মাঝখানে আটকে আছে সাদা সাদা তুলোর মতো মেঘ। প্রতিনিয়ত ছুটে চলছে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত।

আমার দেশ বাংলাদেশ এতো অপরূপ না দেখলে বুঝবে না। চলুন জেনে নেই, মেঘ আর পাহাড়ের সৌন্দর্যে ঘেরা সাজেকের ইতিহাস।

রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক ইউনিয়ন (সাজেক ভ্যালি)। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত। সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন,  আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। এখানে সাজেক বিজিবি ক্যাম্প অবস্থিত। সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উঁচুতে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্প।

সাজেক রুইলুইপাড়া এবং কংলাক পাড়া- দুটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়ার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭২০ ফুট। আর ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কলাংক পাহাড়-এ কংলাক পাড়া অবস্থিত। সাজেকে মূলত লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসী বসবাস করে। সাজেকের কলা ও কমলা বিখ্যাত। রাঙামাটির অনেকটা অংশ দেখে যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। তাই সাজেক ভ্যালিকে বলা হয় ‘রাঙামাটির ছাদ’।

সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে ট্রেকিং করে কংলাক পাহাড়ে যাওয়া যায়। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবনযাপন, চারদিকে মেঘের আনাগোনা পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে হয় চান্দের গাড়ি অথবা সিএনজি অটো রিকশায়। যাওয়ার সময় উঁচু-নিচু পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ধরে খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প, বাঘাইহাট পুলিশ ক্যাম্প, বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প, কাসালং ব্রিজ, টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার পাড়ি দিলে প্রথম দেখা মিলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৭২০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া। যেন সবুজের রাজ্যে সাদা মেঘের রাজত্ব। রাস্তার পাশে এখানে স্থানীয়রা বাজার বসায় সকালে। তরিতরকারি বিক্রি করে।

সাজেক হেলিপ্যাড। অদ্ভুত, উঁচু একটা জায়গা যেখানে হেলিকপ্টার নামে, তাই নাম হেলিপ্যাড। সাজেকে দুটি হেলিপ্যাড দেখেছি। আরো আছে কিনা জানি না। কটেজ থেকে হেলিপ্যাড খুব বেশি দূরে না।

হেলিপ্যাড থেকে সূর্যাস্ত দেখা সব পর্যটকদের টার্গেট থাকে। হেলিপ্যাডে ওঠার পর চোখে পড়ে একজন নারী ব্যাম্বু-টি বিক্রি করছেন। ব্যাম্বু টি মানে বাঁশের চা, মূলত তেঁতুল দিয়ে তৈরি চা। যা ছোট বাঁশে পরিবেশন করা হয়। চা পান করতে করতে সূর্যাস্ত দেখা মূহূর্তগুলো এখনো চোখের সামনে ভাসে। একপাশে সূর্যাস্ত অন্য পাশে ভারতের সুউচ্চ পাহাড় আর ধীরে ধীরে জমতে শুরু করা মেঘ। হেলিপ্যাডে সবাই অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দেই। সকালে ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি মেঘে সব ঢেকে গেছে। মেঘের উপরে আমাদের কটেজ।

এবার কংলাক পাহাড়। কংলাকে যাওয়ার জন্য যত আগে আগে রওনা হওয়া যায় তত ভালো, তাতে পাহাড় ট্রেকিংয়ের কষ্ট কম হয়। কংলাক পাহাড় থেকে রাঙামাটির সব পাহাড় ছোট লাগে, মনে হয় সারা রাঙামাটি একনজরে দেখার জন্য এটাই পারফেক্ট জায়গা। ওই চূড়ায়ও স্থানীয় আদিবাসীদের দোকানের দেখা মেলে। চলে ভরপুর নাস্তা আর মনোরম সবুজ পাহাড় দেখার প্রতিযোগিতা। এছাড়াও সাজেক থেকে ফেরার সময় যেতে পারেন রিচাং ঝরনাসহ আলুটিলা গুহা, তারেং, ঝুলন্ত ব্রিজ- এসব স্থানে যেতে চাইলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি বের হতে হবে, অন্যথায় সবকিছু দেখে শেষ করতে পারবেন না।

যাবেন কীভাবে: ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির বাসে উঠতে হবে। খাগড়াছড়ি থেকে চাঁদের গাড়িতে সাজেক যেতে হবে। চাইলে সিএনজি অটো রিকশায়ও যেতে পারবেন। চাঁদের গাড়িতে একসঙ্গে ১২-১৪ জন যাওয়া যায়। চাঁদের গাড়ি চাইলে আগে থেকে রিজার্ভ করা যায়। দিন, রাত আর প্লেস হিসাবে গাড়ির রেট ফিক্সড করা। চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার, হেলপারের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ওদের নিজেদের।

তবে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার সময় পাহাড়ের সেরা দৃশ্য উপভোগ করা যায় চাঁদের গাড়ির উপরে বসে গেলে। না বসলে আসলেই অনেক কিছু মিস হবে। (বাঘাইছড়ির পর থেকে আর গাড়ির উপরে বসা যাবে না, কারণ সঙ্গে আর্মির গাড়িও থাকবে)।

থাকার ব্যবস্থা: কটেজ অবশ্যই আগে থেকে রিজার্ভ করে নিতে হবে। সাজেকের বেস্ট কটেজের ব্যাপারে সবাই মেঘপুঞ্জি, মেঘমালা, অবকাশ এগুলোকে আগে রাখে। যতখানি সম্ভব খোঁজখবর নিয়ে কটেজ বুকিং দেয়া উচিত। কটেজের ভাড়া ১৫০০-৪০০০ পর্যন্ত প্রতি রাত। এক রুমে চারজন থাকা যায়। খাওয়ার জন্য আছে হোটেল।

 

ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়