ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত আমার শহর

সন্দীপন ধর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ২১ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত আমার শহর

যখন বিশ্বের মানুষ করোনার আতঙ্কে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে, ঠিক সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাসহ কলকাতার বুকে মাতম তুলে চলে গেল আম্পান। ২০ মে, ২০২০ তারিখের ঘনসন্ধ্যা, কলকাতাবাসীর অনেকদিন মনে থাকবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকেই শুরু হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডব। চলল প্রায় রাতভর।

আম্পান নমক দৈত্যটি প্রতি ঘণ্টায় ১১২ কি.মি. থেকে ১৩০ কি.মি. বেগে কলকাতার আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে ভয়াবহ গর্জন তুলে শহরটাকে প্রদক্ষিণ করে চলে গেল। এক কথায় বলা চলে, এ যেনো এক দৌড় প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে আম্পান। জিততে তাকে হবেই। মাত্র এক রাতে কলকাতা শহর লন্ডভন্ড করে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেই সে যেনো শান্ত হলো। এ সময় কলকাতাবাসীর মনে করোনার ভয় ছিলো না। ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে নিজেকে মানুষ কীভাবে বাঁচাবে সেই আতঙ্কই ছিলো সবার চোখে-মুখে।

কলকাতাবাসী বহু বছর পর প্রত্যক্ষ করলো এতো শক্তিশালী এক ঘূর্ণিঝড় কীভাবে এক নিঃশ্বাসে রাস্তার পাশের বড় গাছপালা শিকড়সহ উপড়ে ফেলতে পারে, কীভাবে পাটকাঠির মতো ভেঙে পড়তে পারে বিদ্যুতের খুঁটি, কীভাবে খড়কুটোর মতো উড়ে যেতে পারে মোবাইল টাওয়ারসহ বাড়ির ছাদের এসবেস্টাস ও টালির ছাউনি।

স্থানীয় সরকার দুপুর থেকেই শহরের সব ফ্লাইওভারে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। তারপরও রক্ষা পায়নি রাস্তায় চলাচল করা অনেক গাড়ি। এমনকি ঝড় থামার পর দেখা গেল, বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি এবং ছোট ছোট টং দোকানের উপর গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আছে। অনেক বাড়ির পুরনো দেয়াল ভেঙে গেছে বাতাসের প্রবল শক্তিতে। তবে এখন পর্যন্ত আম্পানে কলকাতায় বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি কিংবা প্রাণহানীর কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে দমদম বিমানবন্দর সূত্রে খবর পাওয়া যচ্ছে, এলাকাটি বিলের রূপ নিয়েছে। হাঁটু পানিতে ডুবে গেছে সমগ্র এলাকা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে রাখা বিমানগুলো ঝড়ের সময় বাতাসের প্রবল বেগে কেঁপে কেঁপে উঠছিল। এ সময় বিমানবন্দরের দেয়ালের অনেক কাচ ভেঙে যায়। ভেঙে পড়েছে বিমান রাখার হ্যাঙ্গার। পানিতে ভেসে গেছে রানওয়ে।   চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে।

খবরে প্রকাশ আম্পানের তাণ্ডবে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি মাটির ঘড় ভেঙে পড়েছে। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির খবর হাওড়া এবং হুগলি জেলা থেকেও পাওয়া গেছে। সুন্দরবন উপকূলে বিভিন্ন নদির বাঁধ ভেঙে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনিপুর জেলায় লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে প্রাণহানির সংখ্যাও বেশি। ঝড়ের কারণে সমুদ্র উত্তাল হয়ে দিঘার সমুদ্র সৈকতের গার্ড ওয়াল টপকে নোনাজল এসে দিঘার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গায় আম্পানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেতু, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। এই লেখা পর্যন্ত কলকাতাসহ সমগ্র রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল বিদ্যুৎ এবং জলবিহিন অবস্থায় রয়েছে। একথা বলাই যায় যে, স্মরণকালের মধ্যে কলকাতা তথা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে এর চেয়ে বড় বিপর্যয়ের স্মৃতি মানুষের মনে পড়ছে না। এই করোনার দুর্যোগেও পশ্চিমবঙ্গের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা। এতো ক্ষতি বিগত কয়েকমাস করোনার আক্রমণেও রাজ্যে হয়নি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চল। এ বারের ক্ষতি ১৯৯৪ সালের ঘূর্ণিঝড়ের চেয়েও প্রকট বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এটাও ঠিক, সে তুলনায় সুন্দরবন এলাকার ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম।


কলকাতা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়